পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$So প্রবাসী ●N●8Nー আর চেষ্টা করে নি। তার ফলে হ’ল এই, অন্যান্য সম্প্রদায় মনে করতে লাগল, এ-উংসব-সংক্রান্ত নাচ বেরোয়াদেরই জন্যে। সাধারণে একে অত্যন্ত অবজ্ঞার চোখেই দেখেছিল এই কারণে। অন্যান্য প্রাচীন নাচও বর্তমানে দুরবস্থায় এসে ঠেকেছে। কিন্তু বৌদ্ধ উংসবের কল্যাণে কাণ্ডি-নাচ তার মান বাচিয়ে আছে । কাণ্ডি-নাচে অভিনয়ের ভাগ নেই বললেই হয়। মনে হয় ছন্দোবদ্ধ নাচটাকেই এর বড় ক’রে দেখেছিল ; তবে নাচের সব অঙ্গ মিলিয়ে দেখলে একটা প্রচণ্ড বেগের পরিচয় পাওয়৷ যায়। সব নাচগুলিই গানের স্বরে তালে খুব পাকাপাকি ভাবে বাধ, কোন গোজামিল বা অনাবশ্বক জিনিষ নেই। মন্দিরের বহির্ভাগে বুদ্ধদন্ত-পেটিকাবাহী হস্তী এক-একটি গানের নামে এ-নাচগুলির পরিচয় । এই ভাবের আঠারটি গান আছে ; এগুলির নাম এর দিয়েছে বল্লম্। যেমন ; উকুস (ঈগল পাখী), বৈরুডি (প্রসিদ্ধ মণি), হগুমা (হনুমান), ময়ুর (ময়ুর), স্বাউল (মুরগী), সিংহাধিপতি (সিংহ), অসদৃশ (কোন দেবতার মাম) কৗরল (সমুদ্রের পাখী), মণ্ডুক, ইনডি (কাশ-জাতীয় পুষ্প), স্বরপতি, গণপতি ও উদার গেৰ্ব্বিত রমণীর অহঙ্কার) । এই ষে আঠারটি নাম দিলাম, এর কতকগুলি তৈরি হয়েছিল জন্তুর চলন বা ভঙ্গি অনুকরণ করে—উপরে সেগুলির নাম দেখে তা বোঝা যাবে। অন্যগুলি তৈরি হয়েছিল তাদের গুণ- ও রূপ- বর্ণনা নিয়ে ; যেমন স্বরপতি, গণপতি, উদার ইত্যাদি। বল্পমূ-এর আবার চারটি ভাগ—“তানম্’, ‘কবিয়ে', ‘কাস্তেরম্ ও ‘আড়াউবা । তানম হ’ল ঠিক উত্তরভারতীয় সঙ্গীতের তেলেনার মত। তাতে কোন কবিতার কথা নেই, কেবল তা না না, তা নে না এই প্রকারের কতকগুলি শব্দ তালের সঙ্গে গাওয়া হয়। সব তানম্-এর পদক্ষেপ, দেহভঙ্গি ও হস্তচালন প্রায়ই এক প্রকারের । এর পরে আরম্ভ হয় ‘কবিয়ে । এই অংশে পূর্বের তানম্-এর স্বরের সঙ্গে কথা বসানে থাকে। এই কথাগুলিতেই গানের প্রকৃত অর্থ পাওয়া যায়। এই অংশের নাচের ভঙ্গিতে এক নাচের সঙ্গে অপর নাচের কিছু প্রভেদ বোঝা যায়। এদেশে নাচিয়ের নিজেই গান গেয়ে নাচে । ‘কবিয়ে শেষ হয় ছোট একটি তালের তেহাই বাজনার সঙ্গে। এই ছোট তেহাঁইয়ের অংশের নাম এর দিয়েছে ‘কাস্তেরমূ’ । তার পরেই আরম্ভ হয় ‘আড়াউবা", অর্থাৎ সেই গানের তালের তোড়া ও পরণ ইত্যাদি। এই ভাবে একটি ‘বল্পমূ সম্পূর্ণ হ’লে, আবার আর একটি বল্লম্' আরম্ভ করে। কাণ্ডি-নাচের গানে যে বিশেষ বৈচিত্র্য আছে তা নয়। গ্রাম্য সঙ্গীতের ধরণের অল্প-পরিসর স্বরের মধ্যেই লাইনের পর লাইন এক ভাবে গেয়ে যায়। তবে একটি বল্পমূ-এর সঙ্গে অপর বল্পমূ-এর স্বরে কিছু কিছু পার্থক্য থাকে। বৰ্ত্তমানে গানের প্রতি নজর এই নাচিয়েরা ততটা দেয় বলে বোধ হয় না। কোন রকমে তালে গেয়ে গেয়ে যেতে পারলেই এরা সন্তুষ্ট। তবে মনে হয়, আরম্ভে গানগুলি সম্ভবতঃ আরও স্বন্দর ছিল। এখানে আমি একটি সম্পূর্ণ বল্লম্-এর নমুনা তুলে দিলাম,তাতে আমার উপরের বক্তব্য আরও স্পষ্ট হতে পারে। এই বল্লমৃটির নাম ‘বৈক্লডি, উত্তর-ভারতের দ্বাহক (শখের গোল দাগ), গঙ্গ, তুরঙ্গ, উরুগ, মূল (খরগোস), দাদরা তালে রচিত ।