পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে, যেন আমার দোষেই ওঁদের সব প্লেট মাটি হয়ে যাবে। বার-বার এক কথা শুনলে কষ্ট হয় না ? রমলাদির যদি তাই বিশ্বাস যে আমার জন্য সব মাটি হয়ে যাবে—তাহলে. আগেই আমাকে বাদ দিলে পারতেন—এ শেষ মূহুর্তে গোলমাল করে আমাকে অপদস্ত করবার দরকার কি ?” নীহারিকা সাধ্যমত মিষ্ট কথায় নীলিমাকে যথাসম্ভব তুষ্ট করিয়া পায়ে আলতা পরিতে চলিয়া গেলেন। আর আধ ঘণ্টাও সময় নাই । বাহিরে লোক জমিতেছে, তাহার গুঞ্জনধ্বনি কানে আসিয়া বুকের ভিতরটা গুমাইয়া উঠতেছে। বাহির হইতে একটি মেয়ে ছুটিয়া আসিয়া শঙ্করের দাড়িটি নীহারিকার হাতে দিল, বলিল, “ড্রাইভার দিলে। তার জানেন নীহারদি, আপনার আগে য' বিক্ৰী করেছেন, তা করেছেন,—তাছাড়া এখনই আমি নগদ ৭২ টাকার টিকিট বিক্রী করলাম। বাপ রে লোক যা হয়েছে—আর ত ধরে না ---•••ও মাগো, ছোটবোঁদিকে কি রকম দেখাচ্ছে। কিছু চেনা যাচ্ছে না। বঁ-দিকের দাড়িটা আরও চেপ্টে দিন কিন্তু—গাল দেখা যাচ্ছে ” মেয়েটি ছুটিয়াই বাহির হইয়া গেল । মিসেস্ চ্যাটাজ্জী ওরফে দেবদত্তের শুভ্ৰ উত্তরীয়ে গোলাপী রং খানিকটা উন্টাইয়া পড়িয়াছে। যেমন ভাবেই উত্তরীয় গায়ে দেওয়া হউক সে গোলাপী রং কিছুতেই ঢাকা পড়িতেছে না, এই লইয়া দেবদত্ত আকুল। লতিকা সাহায্য করিতে ছুটিয়া আসিল । নীহারিকা সৰ্ব্বাঙ্গে গহনাদি পরিয়া আড়ষ্ট হইয়া গিয়াছেন, আলতা পরিতে পারিতেছেন না পাছে কোন কিছু সাজ স্বস্থানচ্যুত হইয় পড়ে। ডাকিলেন, “লতিকা একবারটি এসো না ভাই—পায়ে যেন হাতই পৌছচ্ছে না। যেমন-তেমন ক’রে পায়ে খানিকটা আলতা না ধেবড়ে দিলে—প-টা যে বডড সাদা দেখাতে লাগল।” দেবদত্ত উদভ্ৰান্তচিত্তে বলিলেন, “থামুন মিসেস মল্লিক। পায়ের দিকে অত কে দেখছে আপনার ? আমার চাদর যে সকলের অাগেই চোখে পড়বে। এই সর্থীর দলকে মিসেস মিত্র আর ঐ আপনাদের ষ্টেজ-ম্যানেজার কি বলে যে গ্রীন রুমে ঢোকালেন আমি তা ভেবে পাই নে। শঙ্করের দাড়ি গেল, আমার চাদরে রং উণ্টে দিলে, তাছাড়া কি অনর্থক চ্যাচামেচি করছে যে আমার ত প্রাণ যেন খাবি খাচ্ছে। প্রথম সীনেই আমি, প্রথম কথাই আমার—আর আমার চাদরের এই অবস্থা। কি কুক্ষণেই আপনারা থিয়েটারের হুজুগ তুলেছিলেন—অপদস্থের একশেষ হ’তে হবে শেষ অবধি, এ আমি স্পষ্টই বুঝতে পারছি। আমার আর কি—আমি গোলাপী চাদর নিয়েই বেরোব।” ইলা অর্থাৎ নীলিমার চোখে তখনও থাকিয়া থাকিয়া জল আসিতেছে—দূর হইতে দেখিয়া রমলা মিত্র মনে মনে প্রমাদ গণিলেন। পাগড়ীটা মাথায় ঠিক করিয়া বসাইতে বসাইতে নীহারিকাকে বলিলেন, “মিছিমিছি কি রকম সীন করলে নীলিমা দেখলেন ত ? কিছুই বলি মি—শুধু বলেছি এখন অবধি বই হাতে ক'রে বসে আছ, তাহলেই তোমাকে দিয়ে ইলার পাট হয়েছে । প্লেট দেখছি তুমিই মাটি করবে। এষ্টটুকু ত কথা—এতেই চোখে একেবারে বান ডাকছে। ওকি শেষে ষ্টেজে দাডিয়ে দাড়িয়ে কাদবে নাকি ? আমি ত বাবা আর কিছু বলতে যাব না—আপনি বরং বলুন একটু গিয়ে।" নীহারিকা আলতা পরিতেছিলেন, বলিলেন, “ওর ষ্টেজে বেরোতে দেরি আছে—ততক্ষণে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি এখন আর ওসব কিছু দেখবেন না—সময় হয়ে গেল বোধ হয়। আপনি যান, আরম্ভ করুন। সব ঠিক আছে ত ? সীন তোলবার লোক দু-দিকে দু-জন ঠিক আছে ত ? দেখুন, কিছু যেন ভুল না হয়ে যায়।” রমল মিত্র বলিলেন, “কত দিক আর দেখব ? মিসেস করের ত দেখা পাবার জো নেই। ওঁর ষ্টেজ ম্যানেজ করবার কথা—তা দেখলাম এখন বাইরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পান খাচ্ছেন ! এ রকম লোককে কখনও কাজের ভার দিতে আছে ? আমার ত সব যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। শুনছি সীট নাকি একটিও আর খালি নেই, সব ভরে গেছে। অত লোকের সামনে কি ক’রে যে কি করব—আমার আবার পুরুষের পাট-এত নাৰ্তাস মনে হচ্ছে।” তার পর ঘড়ি দেখিয়া বলিলেন, “উঃ সত্যি আর ত সময় নেই—৭টা বাজতে ২ মিনিট। আর না, আর না, আর একটুও সময় নেই। এই প্রম্পটার দু-জন, তোমরা দু-জনে