পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ আফিসে বেরুল, ছেলেট কর্ণেট বের করলে। বিকেল বেলা তো সমস্ত পাড়াটা গন্ধৰ্বপুরী হয়ে দাড়ায়। রাত্রে একটু ক্ষান্ত দে সব,–এই নতুন অত্যাচার জুটেছেন—লোকের তাল দিয়েই ফুরসৎ নেই তো পড়বে কখন ?” মহজ কাপড়ের পাড়ের রংটা ঘষিয়া ঘষিয়া তুলিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। কাক মন্তব্যটি মনে ভাল করিয়া বসিবার অবসর দিয়া বলিলেন—“বেশ ব্যাঘাত হচ্ছে । আমি তাই ঠিক করেছি তুমি স্বমুখ রাত্তিরে পড়া বন্ধ করে, মাঝ রাত্রে উঠে তোমার সাধন কর,—থাক ওরা গানবাজনা নিয়ে । তুমি এগারটার সময় ন-গুয়ে সাড়ে আটটার সময়ই শুয়ে পড়, কেমন ?” মতুজ মাথা কাৎ করিয়া সম্মতি দিল । কাক বলিলেন—“বাকী থাকে ঘুম ভাঙার কথা । একটা এলাম ঘড়ি কিনে আনছি। সে ধরণের এলাম নয় যে একেবারে আচমকা ঝনঝন করে উঠে হুড়মুড়িয়ে তুলে দিলে, তা’তে ব্রেনে ভয়ানক শক লাগে। আমি যার কথা বলছি এ বেশ একটা নতুন ধরণের জিনিষ বেরিয়েছে জাৰ্ম্মেনী থেকে, আস্তে আস্তে আরম্ভ হ'য়ে মিষ্টি খানিকট গতের মত বেঞ্জে প্রথমে ঘুমের ঘোরটা ভেঙে দেবে, তার পরে জোরে খানিকট জলদ, সেটা মিনিট-কয়েক পর্য্যস্ত চলবে—মানে, ঘড়ি নয়, পেয়াদা—ঘুম না ভাঙিয়ে ছাড়বে না, তবে ঐ রকম গায়ে হাত বুলিয়ে। ব’ললে দু-তিন দিনের মধ্যে জাৰ্শ্বেনী থেকে কনসাইনমেণ্ট এসে পড়বে। ততদিন চালাও কোন রকমে, তবে ওরকম ক'রে তাল দিও না বাপু বায়াতবলাই বা তুমি শিখলে কোথেকে ?—কই, আমি তো ঘূণাক্ষরেও কিছু জানতাম না ---" ফিরিয়া যাইতে যাইতে অকস্মাৎ মুঠায় দাড়ি চাপিয়া দাড়াইয়া পড়িলেন। নিজের মনেই বলিলেন—“নিশুতি রাত...আর মেয়েটার নামই কত রকম ভাবে আওড়ালে সেদিন —আরতি—আরতি দেবী—আরতি সাম্যাল— মিস সাল্লাল---” - ভিতরে গিয়া বলিলেন—“পল্টদ্য লেখার বাই নেই তো ? --দেখে বাপু, নির্জন রাতের ও-ও আবার একটা বিপদ আছে---” তাপস $^$ ফুটনা কোট হইতেছিল ; মমুজ গিয়া বসিল । মুখ অন্ধকার, জোরে জোরে নিশ্বাস পড়িতেছে। কাকীমার ঠোঁটের কোণটা একবার যেন একটু কুঞ্চিত হইল ; কিন্তু কোন প্রশ্ন করিলেন না ; খানিক ক্ষণ গেল । মহজ একবার আড়চোখে চাহিয়া আবার মুখ ফিরাইয়া লইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আমারও তরকারি ফুটছ নাকি ?” "র্হ্যা, অদেকগুলো তোর আর বাকী আন্দেক আমাদের সকবীর ।” **. এইটুকুই যথেষ্ট ছিল। মমুজ একেবারে দপ, করিয়া জলিয়| উঠিল ।–“ঠাট্ট ! কিন্তু দেখো, আমি যদি আর কিছু খাই তো...” কাকীমা হঠাৎ কড় চোখে চাহিয়া উঠিতে বলিল—“বেশ, দিব্যি না করতে দাও তো ব’য়ে গেল, কিন্তু কে খাওয়াতে পারে আমায় একবার দেখব ।..."রাত জেগে তপস্যা কর।”--- বেশ, নিদ্রা যদি ছাড়তে হয় তো আহার নিন্দ্রে আমি দুই-ই ছাড়ব—ঘর ভেঙে ফেললেও দোর খুলব না, দেখি। মস্ত দোষ করেছে সবাই গান গেয়ে...অত গানে ভয় তো চল ন সবাই ফ্যারাওদের পিরামিডের ওপর গিয়ে বসে থাকি.-- আর অমনি খপ ক’রে যে ব’লে বসলে তাল দিচ্ছিলাম— মিছে অপবাদ—কানের কাছে ৪-রকম কচকচ, করলে কখন অমন দ্রুত ঠংরির তালে.মানে, ইয়ে-আচ্ছা বেশ, তুমি যে বললে এলাম ঘড়ি কিনে আনবে-আমি যদি সেদিনকার কথা তুলে বলি যে সে-সব যুগে যেমন ইলেক্‌টিক লাইট ফ্যানের নীচে বসে তপস্যা করত না, তেমনি যোগনিদ্রা ভাঙবার জন্যে এলাম ঘড়িরও বালাই ছিল ন!—তখন ? তা হ’লেই তো হবে—মোনা হ’য়ে উঠেছে এক নম্বর বাচাল— তার্কিক ! বেশ, আমি কোন তর্ক ক’রব না, কিন্তু দেখো, এই শপথ---শপথ না ক'রে বলছি...” কাকীম চটিয়া উঠিয়াছিলেন, কিন্তু শপথ না করায় ঠাণ্ড হইয়া বলিলেন—“আবার রাতজাগা, এলাম ঘড়ি—এ সবের হাঙ্গাম কেন বাপু ?—একে তো দুধের দাত না ভাঙতে ভাঙতে চোখে চশম-পড়ে পড়ে চোখের ওপর অত্যাচার ক’রেই তো ?” মতুজ আবার একবার জলিয়া উঠিল, এবার সহানুভূতির বাতাসে। বলিল—“না:, আমার আর ওসবের দরকার