পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুষের মন শ্রীজীবনময় রায় Σ 8 ভোলানাথ চলে গেল। শচীন্দ্র আর পাৰ্ব্বতী দু-জনে রেলিং ঠেস্ দিয়ে দাড়িয়ে ফ্লস্কট খুলে একটু সরবং খাবার জোগাড় করতে লাগল। চারিদিকে চেয়ে পাৰ্ব্বতী বললে “মাগো, পায়রার অত্যাচারে বারান্দাগুলো হয়েছে দেখুন না। একটু বসবার জে নেই। এমন চমৎকার বারান্দ, কি নোংরাই করেছে, নইলে বোটে না থেকে এখানে থাকলে নেহাৎ মন্দ হ’ত না ।” “তোমার মংলবখানা কি ? আজ কি এইখানেই রাত কাটতে চাও নাকি ? বল তাহ'লে না হয় ঘর-দের সাফ করাই, কঁথা কম্বল আনাই ।” কথাগুলো বলে ফেলে তার বাঙালীর কানে একটু বাজল এবং মনে মনে সে একটু সঙ্কুচিত হ’য়ে উঠল। পাৰ্ব্বতী কিন্তু কথাটা গায়েই মাথল না। বললে, “মন্দ কি, দুই প্রহর আমি ঘুমব আপনি পাহার দেবেন আর বাকী দুই প্রহর আপনি পাহার দেবেন, আমি ঘুমব। বেশ হবে, কেমন ?” কৃত্ৰিম ভয়ে, কম্পিত কণ্ঠে, নয়ন বিস্ফারিত ক'রে শচীন বললে, “তার পর. কে জাগে’ ব'লে যখন অন্ধকার থেকে ঘ্যাগ গলায় হাক পাড়বে, ইস্পাতের তলোয়ারের মত জিবট খড়খড়ির ভিতর থেকে ঝলসে উঠবে, তখন ? ওরে বাব, সে আমার বড় ভয় করবে, সে আমি পারব না । তার চেয়ে এক কাজ করা যাবে, আমরা দু-জনেই দু-জনকে পাহার দেব, কি বল, এ্যা।”

  • ঘুমিয়ে, না জেগে ?” “য প্রাণ চায় তোমার ।” “আমার প্রাণ চায় যে আমি ঘুমব, আপনি জাগবেন।” “না, সে ভারি অন্যায় হবে। বরং এক কাজ করা যাবে —তুমি ঘুমলে আমি জাগিয়ে দেব, আর আমি জেগে থাকলে তুমি ঘুম পাড়াবে ; কেউ কাউকে খাতির করব F, ”

“ই ! বুঝলুম। মানে, তলোয়ারের মত জিবট আমার --” “ক্ষুরের কাছে হার মানবে—ঠিক।” “হঁ্য, আমার জিব ক্ষুরের মত, আর মশায়ের একেবারে মিছরির ছুরি । নিন, এখন চলুন, যাওয়া যাক। কেবল বাক্‌চাতুরী করলে ত কাজ হবে না? আর কোন কাজ নেই ?” শচীন বললে, “কাজ ! আজিও কাজ ? আরম্ভটা এমন হয়েছে যে আজ কাজের দিন বলে মনেই নিচ্ছে না। মনে হচ্ছে আজ রূপকথার রূপকের রাজ্যে কল্পনার পক্ষিরাজে সওয়ার হয়ে কাটিযে দিই। তেপাস্তরে মাঠের পারে ঘুমন্তপুরীতে ফুলের মালা হাতে রাজকুমারী যেখানে একলা বসে আমারই প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে সেখানে তার নিঃসঙ্গ জাগরণের দ্বারে গিয়ে অতিথি হই । বলি, হে কন্য, তোমার প্রেমে তুমি আমার অস্তরের স্বপ্ত দীপকে দীপ্ত কর । তোমার গোপন হৃদয়ের কমনীয় মণিদীপের মায়াস্পর্শে জেগে উঠুক আমার গভীর অন্ধকারের মধ্যে প্রাণের অনিৰ্ব্বাণ জ্যোতি । মেঘমুক্ত প্রভাতের সুবর্ণরশ্মি পড়ুক তোমার সদ্যস্বপ্তোখিত আবিষ্ট চোখে । সেই আলোতে ঘুচে যাক আমার এই বিরহবিধুর চিত্তের তিমিরবরণ। তোমার কণ্ঠের মুক্তার মালা...’ শুনতে শুনতে পাৰ্ব্বতীর সযত্নে গোপন-করা প্রাণের গভীর বেদন তার মুথের উপর প্রকাশ পেয়ে তার চোখ দুটোকে ব্যথিত ক'রে তুললে। নিতান্ত লীলাচ্ছলে বলা শচীন্দ্রের কথাগুলো অস্তরের নিবিড় অতুভূতিকে যেন একটা নিষ্ঠুর অপমানের আঘাত করতে লাগল । তার পবিত্র গোপনতার রুদ্ধ দ্বার একটা রূঢ় উন্মোচনের দমূকা বাতাসে ভেঙে গিয়ে তার চিত্তের শুঙ্খলা যেন এলোমেলো হয়ে গেল। অকস্মাৎ অধৈৰ্য্য হয়ে সে বলে উঠল, “থামুন শচীনবাবু, থামুন । রূপকথার রূপকের রাজ্যে আপনার নিরাপদ অভিসারের কথা আমাকে না শোনালেও আপনার পৌরুং