পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন করছেন। ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা প্রস্তুত জিনিষগুলি অবগু নামমাত্র মূল্যে বিক্ৰী করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই জাম উঠল। তাই জামের রস বীজাণুরহিত করে বোতলে সীল করে রাখা হ'ল। জামের আরকের রং ভারী স্বন্দর দেখতে ও জিনিষটা উপকারীও বটে। আমার মা আবার বাড়ীতে পরীক্ষা করে দেখলেন যে জামের রসে যথেষ্ট পেকটিন আছে। তাই তিনি বাড়ীতে জামের জেলি তৈরি করলেন সেদিনই। চমৎকার জমেছিল, কিন্তু খেতে পেয়ারার জেলির মত অত ভাল নয়। পরদিন পণ্ডিতজী দেখে খুব খুশী হলেন ও বললেন, "এ-সব আপনাদেরই কাজ। আমরা শুধু থিওরি শেখাচ্ছি।” ২১শে তারিখে মাথুর-মশায় সির্ক তৈরি করবার প্রণালী বুঝিয়ে দিলেন। সির্ক করবার পূৰ্ব্বে ফলের রসকে মদে পরিণত করা একান্ত প্রয়োজন। সরকার থেকে অনুমতি না পেলে মদ্যব্যবসায়ীর খামির বিক্রী করে না। সেজন্য আমাদের হাতে-কলমে সির্ক তৈরি করা দেখা হ’ল না। অবশু সির্ক হ’তে ত্রিশ-চল্লিশ দিনের উপর সময় লাগে। সির্ক নিত্যব্যবহার্ষ্য জিনিষ—বিশেষতঃ ফিরিঙ্গীদের মধ্যে। বিলেতের কারখানাতে ফলের খোসা, বিচি, তরকারী এমন কি বাসন-ধোওয়া জল পৰ্য্যন্ত কিছুই না ফেলে সির্ক ক’রে নেওয়া হয়। তবে আজকাল খাটি সির্ক পাওয়া এক রকম অসম্ভব । যত দূর জানা গেছে ব্ল্যাকৃওয়েল কোম্পানীর সির্ক যব থেকে তৈরি ও থাটি জিনিয। ভারতবর্ষীয় কোন বিশ্বস্ত সির্ক-ব্যবসায়ীর কথা জানা নেই। বাজারে সির্ক বলে যা বিক্ৰী হয় ত৷ জল-মিশানো অ্যাসেটিক এসিড। সস্তা সির্কায় আসেটিক এসিড এত বেশী পরিমাণে থাকে যে তা ব্যবহার করলে গলা অল্প খুসফুস করে ও পরে স্বাস্থ্যহানি হয়। খাটি সির্ক অল্পমূল্যে পাওয়া যাবে না ও তাতে শতকরা চার-পাচ ভাগের বেশী অ্যাসেটিক এসিড থাকা অসম্ভব। পাড়াগায়ে অনেকে সির্ক করবার জন্য ফলের রস রোদে রেখে দেয়, কিন্তু নিশ্চিত ভাবে আগে থেকে জানা যায় না যে ঐ ফলের রস সির্কাতে পরিণত হবে কি না। দৈবাং যদি থামিরের বীজাণু ফলের রসের মধ্যে এলাহাবাদে ফলসংরক্ষণ-শিক্ষণ గ్రాడా సాళాg যায়, তবেই সির্ক হতে পারে। তা না হলে ও-রসে ছাতা পড়বে ও পচে যাবে। অধিকাংশ ঐ রকম ফলের রসে সাদা সাদা মোট মোট পোকা জন্মায়। সেগুলি সন্তৰ্পণে ছেকে ফেলে বাজারে সির্ক বলে বিক্রী করে। বাড়ীতে ভাল সির্ক খুব সহজে তৈরি করা যেতে পারে যদি উপযুক্ত শক্তির ইস্ট বা খামির পাওয়া যায়। পাউরুটি বা জিলিপি তৈরি করার জন্য যে খামির ব্যবহার হয়, তার বীজাণু অত্যন্ত দুর্বল। সেই থামিরে প্রস্তুত সির্কাতেও সেজন্য বীজ বেশী থাকবে না। মদের জন্য যে খামির প্রয়োগ করা হয়, তা একবার জোগাড় করতে পারলে অনেক দিন পৰ্য্যন্ত অনায়াসে সির্ক বাড়ীতে করা যায়। আমরা রোজই ফল ও তরকারির খোসা ও বিচি ফেলে দিই। সেগুলির রস বার করে নিলে খুব ভাল সির্ক হতে পারে। ইউরোপে, বিশেষ করে জাৰ্শেনী ও ফ্রান্সে, এসব নষ্ট হতে পায় না। আমরা এত গরিব হয়েও এত জিনিষ কেমন করে অপচয় করি, সেটাই আশ্চর্য্যের বিষয়। আমাদের ক্লাসে সবারই আসল সির্কার চাইতে কৃত্রিম সির্ক প্রস্তুত শিখতে বেশী ঝোক ছিল। মাথুরমশায় হেসে বললেন যে বেশী লাভের প্রত্যাশায় অ্যাসেটিক এসিড দিয়ে সির্ক যেন ন তৈরি করি। ফল-উৎপাদকদের সমিতির একমাত্র উদ্দেশু ফলের ব্যবসায় দ্বারা দেশের আর্থিক উন্নতি । যারা এখান থেকে পাস করে বেরবে ব্যবসায়ে সততা যেন তাদের মূলমন্ত্র হয় । পরদিন তিনি আমাদের ফল ও তরকারি শুকিয়ে রাখার রীতি শেখালেন। যুক্ত-প্রদেশে কপি ও শালগম গুকিয়ে রেখে খাবার প্রথা আছে। যদি কড়াইগুটিও বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে শুকিয়ে রাখা হয়, তাহলে বিদেশী টিনে-ভরা শুষ্ক মটরের চেয়ে সস্তায় জিনিষ বাজারে পাঠাতে পারা যায়। ব্যবহার করবার ঘণ্টা-দুই আগে এই মটর ভিজিয়ে রাখলে দেখতে ও খেতে খুব তাজা হয়। বৈজ্ঞানিক উপায়ে তরকারি শুকিয়ে রাখলে বর্ষাকালেও তাতে ছাতা পড়বে না অথচ বার মাস ইচ্ছামত সব তরকারি হাতের কাছে পাওয়া যাবে।