পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سby ty স্বৰ্য্যকিরণ আনে ; গ্রীক দেবতাদের মহান সুন্দর আত্মসংবরণ—হাস্যরস ও ভাবাবেগের অপূৰ্ব্ব সমাবেশ– যাহ। এই জীবনের মধ্যে থাকিয়াই জীবনের উপরে উঠিতে শিখায়। কেমন করিয়। বাচিতে হয় । Ce회 আমার বিশ্বাসের ভিত্তি এখনও অসম্পূর্ণ ; পরকে আপন করিবার সাধনা কই ? আমারই মতন পরও যে সমান অধিকারে এ পৃথিবীতে রহিয়াছে, আমারই মতন পরও যে ভূমার অংশ। জ্ঞান আসিয়া পরকে ভালেবাসিতে উপদেশ দেয়। টলষ্টয় বলিয়াছেন “অধ্যাত্ম সাধনের সব চেয়ে স্পষ্ট এবং বড় প্রমাণ এইখানে : মানুষের সবচেয়ে বড় মুক্তি বড় আনন্দ বড় সৌভাগ্য যদি কোথাও থাকে ত সে ভ্যাগে ও প্রেমে।” শুধু আপনার মধ্যে ভূমাকে ভালোবাসিলে হইল না। ইহা পূর্ণরূপে, সত্যরূপে বঁাচ নয় ; সবল জীবনের ভোগভৃপ্তি হইতে নিজেকে স্বেচ্ছায় বঞ্চিত করিয়া এই স্বর্গ-নাট্যের (Divine Comedy) একটি অঙ্কে অপরের ভূমিকার মধ্যে নিজেকে পূর্ণভাবে মিলাইয়া দিতে হইবে ! জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ কোনটা ? অপরকে ভালোবাসা ও অপরের ভালোবাসা পাওয়া নয় কি ? নিরুদ্বেগ হাসির মধ্যে একরকম স্বার্থপরতা লুকাইয়া আছে । স্বার্থপরতাটাকে লোকে যথেষ্ট ছোট করিয়াছে। আমি স্বার্থপরতাকে অতটা নামাইতে চাই না ; হয়ত ইহা প্রেমেরই একটা উৎস । ( পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য ) কিন্তু স্বার্থের মধ্যে প্রাণকে সীমাবদ্ধ করাটা প্রাণকে অঙ্গহীন করারই নামান্তর। “সকলই ত মায় ! কি হইবে ভালোবাসিয়া ? যাদের ভালোবাসি তাহারা ত মায়া-মায়াই ত সব, প্রেম কোথায় ?”—এমনিভাবে সবটাকে “হাস্যমুখে পরিহাস” করাই কি চরম ? বিচার করা আর হাস? এক স্বয়ন্থর মত বিশ্বনাট্যটা দুর হইতে উপভোগ ? আপনাকে লইয়াই আপনার অন্তহীন উৎসব ? অথচ এই ‘আপনি নিঃসঙ্গ নিরানন্দ—কেহই ভোগে-উপভোগ করিবার নাই। প্রবাসী-বৈশাখ, ১৩৩৩ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ভোগ-সম্রাটদের এই স্বার্থপূর্ণ নিরানন্দ আত্ম-বিযুক্তি (detachment) wins of পীড়া দিয়াছে । তাহার উপর ১৮৮৮ সালের আগষ্ট মাসে শিল্পকেন্দ্র ফ্লানডাস-(Flanders) এর মধ্য দিয়া ভ্রমণ করিবার সময় এ সম্বন্ধে সমস্ত ঘনীভূত হইয়া উঠিল ; বিচিত্র চেতনার ভোগ-চক্রে একটা বিষম অস্বস্তি অনুভব করিতে লাগিলাম—যেন কি একটা অসুখ করিয়াছে! একটা অপ্রীতিকর উষ্ণতায় ভরা আবদ্ধ গুহাগৃহে যেমন সন্ন্যাসীরা থাকে তেমনি একটা উৎকট অথচ মায়িক বৈরাগ্যের অন্তরালে সেখীন শিল্পীর সব তারিফ করিতেছেন । আমার মন কপট বৈরাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হইয়া উঠিল ; সেই স্থযোগে প্রবল অনুরাগ-বৈরাগ্যের দরজা ভাঙিয়া ঢুকিল ; প্রেম আমায় জয় করিয়া লইল । আমি চকিতে দেখিলাম আমার বিশ্বাসের সত্য ভিত্তি কোথায় ; সে ত প্রাণকে অস্বীকার করা বা প্রতিবাদ করায় নয়, কৰ্ম্ম চেষ্টার নিরোধে নয়, মানুষ হইতে তফাৎ হওয়ায় নয়— · পরন্তু প্রেমে সকলকে এক করায় । এই প্রেমই কি বিশ্বাসের ভিত্তি নয় ? ইহাই কি আমাকে মায়া কারাগার হইতে মুক্তি দিয়া ভূমার মধ্যে অবগাহন করিতে শিখায় নাই ? সেই ভূমাকে আমি আবার নিজের এবং অপরের অনুভূতির মধ্যে পাইলাম। ইহাতেই ত বুঝিলাম অপরকে ভালোবাসা ভূমাকেই ভালোবাসা । তাহাকে অপরের মধ্যে ত ভালোবাসি এবং তিনি এই অপরের মধ্যে যতখানি আছেন ততখানিই তাকে পাই ; মানুষের মধ্যে জ্ঞান যত উদার, অনুভূতি যত তীক্ষ, প্রেম যত গভীর ও উন্নত ততই মানুষ ভূমাকে পাইয়াছে, ততই মানুষ বেশী প্রাণবান। এই মানুষদের ভালোবাসা আমার ও অপরের পক্ষে স্বাস্থ্য কর, কল্যাণকর । অবশ্য এই মানব-অস্তিত্বকে আমি ততটাই বিশ্বাস করি যতটা করি একটি মহানাটকের বিচিত্র নটভূমিকায় ; হ্যামলেটকে ইসোলুড়কে যেমন ভালোবাসি তেমনি দুএকজন মানুষকেও বাসি ; অসংখ্য-রকমে ভালোবাসা সম্ভব নয়। তবে এই মানব-শরীরের দৈবী স্বষ্টি ও মানব আত্মার দৈবী স্থষ্টির (শিল্পাদি ) মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। আমার ভালোবাসা যখন শিল্পাদির উপর পড়ে তখন সে প্রেম শুধু আদর্শ-গত ও অশরীরী, কিন্তু মানুষের