পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وی امواج স্বরূপ রোমে অবস্থান করিবার জন্য স্থার্থ নিমন্ত্রণ করেন ; কবি নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। নেপলস্ হইতে স্পেশাল ট্রেণে করিয়া কবিকে রোম লইয়া যাওয়া হয় ; সেখানে রোমের বিশিষ্ট কৰ্ম্মচারী ও অন্যান্য দেশের সম্লান্ত প্রতিনিধিগণ র্তাহাকে সাদর অভ্যর্থনা করেন । বিশ্ব ভারতীর কৰ্ম্মসচিবদ্বয় কবির সহযাত্রী ছিলেন । র্তাহীদের প্রেরিত সংবাদে বুঝা যায় যে, ইতালিয়ান রাজসৰ্বকার কবিকে যেরূপ সম্মান প্রদর্শন করেন ও যেভাবে তাহার আদর-অভ্যর্থনা করেন তাহ রাজারাজড়াদের ভাগ্যেই ঘটে। বস্তুতঃ ইতিপূৰ্ব্বে কোনো ভারতবাসীকে কোনো দেশে সম্মান দেখান হয় নাই । কবি মগন ভারতবর্ষ পরিত্যাগ করেন তালীর রাজসরকারের অতিথিরূপে সেখানে যাইবার র্তাহার ইচ্ছা ছিল না। বিশ্বভারতী কৰ্ম্ম-সচিবগণের প্রেরিত সংবাদ হইতে এইটুকু জানা যায় যে, কবির মনোভাব পরিবর্তন যে-কোন কারণেই ঘটুক না, বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠানকে ইতালীতে পরিচিত করিবার পক্ষে মুসোলিনী কর্তৃক এই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা ভালই হইয়াছিল। রোমে পদার্পণ করিবার পরদিন মুসোলিনীর সহিত রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয়। মুসোলিনী তাহাকে অভিবাদন করিয়া বলিয়াছিলেন—“ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত আপনার সমস্ত’ বইগুলি পড়িয়াছেন বলিয়া র্যাহার। গৰ্ব্ব করেন আমি তাহীদের একজন-আমিও আপনার একজন ভক্ত।" ডাঃ টুচ্চিকে শাস্তিনিকেতনে প্রেরণের জন্য ও বিশ্বভারতী-গ্ৰস্থাগারে বহুমূল্য গ্রন্থমাল উপহার দেওয়ার জন্য কবি বিশ্বভারতার তরফ হইতে মুসোলিনীকে ধন্যবাদ প্রদান করেণ । ভারতীয় ৭ ইতালীয় শিক্ষার্থীদের ও পণ্ডিতদের পৰস্পর জ্ঞানের আদান-প্রদানের একটা ব্যবস্থা করিবার কথাও কবি সেদিন উল্লেখ করেন । ইতালীর সংবাদ-পত্ৰসমূহও রবীন্দ্রনাথের প্রশংসায় মুখর হইয় উঠে। প্রায় সকল কাগজেই বড় বড় হরফে বিশেষ বিশেষ স্থলে তাহার সম্বন্ধে সংবাদ বাহির হইতে থাকে। কবি নেপলসের ইল মেজ চ্ছোজোৰ্ণে নামক এরূপ 5 প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড কাগজের সংবাদদাতাকে বলেন যে, পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিসমূহের মধ্যে বহু বিষয়ে ইতালীই অনেকটা তাহার আদর্শাহুসায়ী। ইতালীর গৌরবময় অতীত ও বর্তমান র্তাহাকে মুগ্ধ করিয়াছে। রোমের ত্ৰিবুনা নামক কাগজের সংবাদদাতাকেও তিনি এই ইতালী-প্রীতির কথা জ্ঞাপন করিয়া ভারতবর্য ও ইতালীর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উল্লেখ করিয়া বলেন, “আমার বিশ্বাস এই দুই জাতি পরস্পরের সহিত প্ৰীতি-সূত্রে মিলিত হইলে ইহাই ভগবানের অভিপ্রায় । আমাদের জাতীয় উন্নতিতে তোমরা সাহায্য কর—ভারতবর্ষের আত্মার গভীরতার মধ্যে তোমরাও অনেক কিছু শিথিবীর বিষয় পাইবে।” তিনি বলেন যে, তিনি ইতালীর এক মহান ভবিষ্যতের ছবি দেখিতে পাইতেছেন। ‘ত্ৰিবুন’ ইতালী সম্বন্ধে কবির উদেখা ৬ মতের প্রভূত প্রশংসা করিয়া বলেন, “মুখে মুখে ও লেখনীর সাহায্যে কবির বাণী এশিয়ার সুদূর প্রান্তর অবধি ছড়াইয়া পড়িবে। সে শুভ-কামনা এই বাণীতে আছে আমরা তাহার সমর্থন করি। আমাদের বিশ্বাস,কবির স্বপ্ন সফল হইবে।” কবি ইতালীর জনসাধারণের নিকট ভারতবর্ষের প্রকৃতির অপূৰ্ব্ব বর্ণনা প্রদান করেন । এই চমৎকার বর্ণনাভঙ্গীতে মৃদুর ভারতবর্ষ বিদেশী ইতালিয়ানদের কাছে জীবস্ত হইয় উঠে ; তাহাদিগকে ভারতবর্যের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন করিয়া তোলে। তিনি বলেন, “দিগন্তপ্রসারিত প্রান্তরের বুকে কালবৈশাখীর রুদ্রলীলা আপনার দেখেন নাই। গ্রীষ্মের প্রারম্ভে সহসা একদিন কালবৈশাখীর নৃত্য স্বরু হয়—দূরে দিক্‌চক্রবাল সীমান্ত পৰ্য্যন্ত অনন্ত নীলাকাশ কালে মেঘে আচ্ছন্ন হইয়৷ যায়, ঘূর্ণ হাওয়ায় ধূলিরাশি মাতামাতি করে. প্রবল বর্ষণ স্বরু হয়...আমাদের তরুণেরা সেই ঝড়ের মাতনে পথে বাহির হয়—বাতাসের সহিত তাহার দৌড়ের পাল্লা দেয়। আমাদের প্রান্তর সীমাহীন—দিগন্তব্যাপী ; উদ্ধে নীলাকাশ ও নিম্নে বিস্তীর্ণ প্রান্তর—তাহাতে সবুজের আভাস রূচিৎ দেখা যায়। বসন্ত সেখানে লঘু পদক্ষেপে ধীরে ধীরে আসে—পলাশের লালে প্রকৃতিদেবী রক্তিম হইয় উঠেন।" রবীন্দ্রনাথের বাণী ও ব্যক্তিত্ব ইতালীয়ানদের মনে গভীরভাবে অঙ্কিত হইয়া