পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ “সম্ভবতঃ লোকটা একে মারধোর করেছে।” “ন, আরো সাংঘাতিক কিছু ঘটে থাকবে। আমি অনেক মেয়ে দেখেছি যারা স্বামীর প্রহারে অভ্যস্ত কিন্তু এমনটি ঘটতে দেখিনি। না, আরো ভয়ানক কিছু হবে । সিসটার ঈডিথের মুখের ভাব দেখেও তাই মনে হচ্ছে ” কাপ্তেন বলিলেন, “তাই ঠিক । এখন বুঝতে পারছি সিস্টার ঈডিথকে কিসে এত যন্ত্রণা দিচ্ছিল। ভগবানকে ধন্যবাদ যে ঈডিথ তোমাকে জোর ক’রে সেখানে পাঠালে, নইলে এই হতভাগিনীর কি দুর্দশাই না হ’ত ! ঈশ্বর ওর উপর দয়া করছেন!” “কিন্তু ক্যাপ্টেন ওকে নিয়ে এখন কি করব ? আমার কথা বোঝে না বটে, কিন্তু ওর হাত ধৰ্বলেই আমার পিছু নিচ্ছে । ওর সমস্ত বোধশক্তি নষ্ট হ’তে বসেছে –ওকে জ্ঞান ফিরে দেওয়া যায় কি ক’রে ? আমিও হতাশ হয়েছি। দেখুন আপনি কিছু করতে পারেন কি না ।” স্থূলকায়া মহিলাটি পরম স্নেহে দুর্ভাগিনীর হাত ধরিয়া অতি মৃদুস্বরে তাহার সহিত কথা বলিতে চেষ্টা করিলেন ; সে কিছু বুঝিল বলিয়া বোধ হইল না। র্তাহার এই নিষ্ফল প্রয়াসের মধ্যে ঈডিথের মা ব্যস্তসমস্তভাবে দরজার বাহিরে মুখ বাড়াইয়। বলিলেন, “ঈডিথ বড় অস্থির হয়ে পড়ছে। আপনারা বরং ভিতরে আসুন ।” উভয়েই অৰ্দ্ধোন্মাদ রমণীটির কথা বিস্মৃত হইয়া ভিতরে প্রবেশ করিলেন । ঈডিথ ছটফট করিয়া শয্যার এপাশ ওপাশ করিতেছিল ; বোঝা যাইতেছিল তাহার যন্ত্রণ শারীরিক নহে, মানসিক । সিস্টার মেরী ও ক্যাপ্টেন অ্যাণ্ডারসনকে দেখিতে পাইয়া সে একটু শাস্ত হইয়া চক্ষু মুদ্রিত করিল। ক্যাপ্টেন সিস্টার মেরীকে রোগিণীর কাছে থাকিতে বলিয়া নিঃশকে বাহির হইয়া যাইবার জন্য উঠিয় দাড়াইলেন । এমন সময় মুক্ত দ্বার-পথে ডেভিড হলমের স্ত্রী সেখানে প্ৰবেশ করিল। সে ধীরে-ধীরে রোগীর শয্য-পাশ্বে আসিয়া এক দৃষ্টে তাহাকে দেখিতে লাগিল । তাহার শরীর প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড কঁাপিতেছিল--ভিতরের হাড়গুলিতে পৰ্য্যন্ত যেন কাপুনী ধরিয়াছে। কিছুক্ষণ সে নিৰ্ব্বাক্ নিম্পন্দ ; কিছু বুঝিতেছে বলিয়া বোধ হইল না । কিন্তু ক্রমশঃ তাহার দৃষ্টি শাস্ত হইয়া আসিল । সে কুকিয়া পড়িয়া ধীরে ধীরে রোগীর মুখের কাছে মুখ লইয়া গেল। একটা কঠোর পৈশাচিক উগ্রতা তাহার মুখে ফুটিয়া উঠিল ; হাতের মুঠ খুলিতে ও বন্ধ করিতে লাগিল । সিস্টার মেরী ও ক্যাপ্টেন সভয়ে লাফাইয়া উঠিলেন—এই বুঝি সে ঈডিথে উপর ঝাপাইয়া পড়ে। ঈডিথ চক্ষুরুন্মীলন করিয়া সেই ভীষণ অৰ্দ্ধোন্মাদ নারীকে সম্মুখে দেখিয়া চকিতে উঠিয়া বসিল এবং দুদমনীয় আবেগে সেই দুর্ভাগিনীকে জড়াইয় ধরিয়া শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করিয়া তাহাকে বুকে টানিয়া লইল এবং তাহার কপালে ওষ্ঠে ও গালে চুম্বন করিতেকরিতে অস্ফুটস্বরে বলিতে লাগিল— “হায় দুর্ভাগিনী—হায় অভাগিনী !” উন্মাদিনী প্রথমটা সরিয়া যাইতে চেষ্টা করিল ! কিন্তু সহসা কি যেন এক অনচুভূত আবেগে তাহার সমস্তদেহ শিহরিয়া উঠিল । সে উচ্ছসিত হইয়া কাদিয়া উঠিল । এবং হাটু গাড়িয়া শয্যার পাশ্বে বসিয়া পড়িয়া ঈডিথের বুকে মাথা রাখিল । তাহার চোখ হইতে দরদরধারে অশ্র ঝরিতে লাগিল । উভয়েই এই স্বৰ্গীয় দৃশু দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন। সিস্টার মেরী তাহার অশ্রুসিক্ত রুমালখানি দিয়া চোখ মুছিতে মুছিতে রুদ্ধ কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক করিতে চেষ্টা করিয়া বলিলেন, “শুধু সিস্টার ঈডিথই এমন অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। সে চলে গেলে আমাদের গতি কি হবে ? ঈডিথের মায়ের এইসব উচ্ছ্বাস ভালো লাগিল না । র্তাহার। তাহার বিরক্তি লক্ষ্য করিয়া শাস্ত হইলেন । ক্যাপ্টেন বলিলেন, “ওর স্বামী ওকে নিয়ে যেতে এখানে এসে উপস্থিত হ’তে পারে । তা কিছুতেই ঘটতে দেওয়৷ হবে না। সিস্টার মেরী তুমি ঈডিথের কাছে থাকে। আমি দেখি হল মের স্ত্রীর কি ব্যবস্থা করতে পারি।” ক্রমশ: )