পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] · বিবিধ প্রসঙ্গ—হিন্দুমুসলমানদের ঝগড়ার নিবুদ্ধিতা ২২৯ হাজার ঘর ভাঙ্গিয়া চুরিয়া গিয়াছে। তাহাতে অনেক হাজার লোক নিরাশ্রয় হইয়াছে। মাদারীপুরের কংগ্রেস কমিটি ও অন্যান্য জনসেবকেরা বিপন্ন লোকদিগকে সাহায্য দিবার চেষ্টা করিতেছেন। কলিকাতাতেও কমিটি গঠিত হইয়াছে। এরূপ বিপদে কেবল স্থানীয় লোকদের অর্থে যথেষ্ট সাহায্য দেওয়া যায় না। অর্থ ভিন্ন, স্থানীয় কৰ্ম্মী ছাড়া বাহিরের কৰ্ম্মীরও প্রয়োজন হয় । কলিকাতার দাঙ্গা হাঙ্গামায় লোকদের চিত্তবিক্ষেপ হইয়াছে। কিন্তু মাদারীপুরের সংবাদ সৰ্ব্বত্র পৌছিলে নিশ্চয়ই অর্থ ও কৰ্ম্মী দুই-ই যথেষ্ট জুটিবে। বর্তমান বিপদে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন লোকেরা প্রায় সকলেই মুসলমান চাষী। বরাবর যেমন হিন্দুরা জাতিধৰ্ম্মনির্বিশেষে সাহায্য করিয়া থাকেন, এক্ষেত্রেও তাহা করিবেন । কিন্তু মুসলমান নেতারাও অগ্রসর হইলে ভাল হয়। একত্র সৎকাজ করিলে সদ্ভাব ও বন্ধুত্ব জন্মে । “কারো সৰ্ব্বনাশ, কারো পৌষমাস” হিন্দু-মুসলমানে ঝগড়া খুনাখুনি হইবামাত্র এদেশের ও বিলাতের ইংরেজ-চালিত কাগজগুলা তৎক্ষণাৎ তাহা নিজেদের কাজে লাগাইবার জন্স অতিমাত্র ব্যগ্রতা ও উদ্যোগিতা দেখায়। ভারতীয়েরা যে স্বায়ত্তশাসন লাভের কিরূপ অনুপযুক্ত, ইংরেজ শাসনকৰ্ত্তারা ও গোরা সৈনিকের এদেশে না থাকিলে যে ভারতীয়দের আরও কত দুর্দশা ও বিপদ ঘটিত, তাহা এই সব কাগজ অতি বিশদভাবে বর্ণনা করিতেছে । একটা বিলাতী কাগজ ইহাও বলিতেছে, যে শাসনসংস্কার-আইন দ্বারা ভারতে স্বায়ত্তশাসনের স্বত্রপাত করিবার চেষ্টা করাতেই এইরূপ ঝগড়া ও রক্তপাত হইতেছে। ইংরেজদের কাগজে যাহা লিখিত হয়, সভ্য জগতে তাহার প্রচারই অধিক হয় এবং তাহাই সত্য বলিয়া গৃহীত ठूे । এবং শাস্তি ও সম্ভাব পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করিতেছে, তাহার উল্লেখ এসব কাগজে দেখা যায় না। ইহার এই ধারণাই জন্মাইবার চেষ্টা করিতেছে, যে, পুলিশ ও গোরা দাঙ্গাহাঙ্গামার সময় ভারতীয়গণ , যে আত্মরক্ষণ" সৈন্তেরাই যাহা কিছু করিবার করিতেছে, এবং তাহার দ্বারা আমাদের আত্মকর্তৃত্বের অযোগ্যতা প্রমাণের প্রয়াস পাইতেছে। এক শ্রেণীর মানুষ যেরূপ ঘটনা ও অবস্থাকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজে লাগাইতে সৰ্ব্বদা উন্মুখ থাকে, সেরূপ ঘটনা ও অবস্থা প্রয়োজন মত ঘটাইবার ও উৎপাদন করিবার চেষ্টা করা যে তাহাদের পক্ষে অসম্ভব, এমন ত भCन श्ध न ! এইরূপ কথা বলিয়া আমরা হিন্দুমুসলমানকে বেকসুর খালাস দিয়া তৃতীয় পক্ষের ঘাড়ে সমস্ত দোষ চপাইতে চাহিতেছি না । আমরা জানি, ছিদ্র না পাইলে শনি ঢুকিতে পারে না । হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই মত, আচার ব্যবহার, এবং পরস্পরের প্রতি মনের ভাবে এরূপ খুং আছে যাহা অবলম্বন করিয়া উভয়ের মধ্যে ঝগড় বাধান সহজ হয় । আমাদের বক্তব্য কেবল এই যে, এই খুংগুল দূর করা এবং সে গুলা সত্ত্বেও সদ্ভাব ও শান্তি স্থাপন ও রক্ষা করিরার চেষ্টা করা সংলোকের কাজ । খুংগুলা আছে বলিয়া সেই স্থ (?) যোগে ঝগড়া বিবাদ আরো বাড়াইয়া তুলা কিম্বা ঝগড়া বিবাদ বাধিলে তাহাতে উৎফুল্ল হইয় তাহা নিজেদের কাজে লাগান, শয়তানী ভিন্ন আর কিছুই নয়। কিন্তু তাহা হইলেও আমরা দোষ দিব আপনাদিগকেই । সৰ্ব্বপ্রযত্নে সম্ভাব ও শান্তি স্থাপন আমাদেরই কৰ্ত্তব্য। অন্যেরা আমাদের দোষক্রটির সুযোগে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করিবে না, তাহাদের এ প্রকার সদাশয়ত ও সাধুতার উপর নির্ভর করিলে চলিবে না । হিন্দুমুসলমানের ঝগড়ার নির্বদ্ধিত সাম্প্রদায়িক ঝগড়া খুনখুনি যে অধৰ্ম্ম, তাহ বলা বাহুল্য মাত্র। কিন্তু যদি বুঝিতাম, যে, ইহাতে কোন পক্ষের সাংসারিক লাভ আছে, যদি বুঝিতাম এরূপ ঝগড়ায় শেষ পৰ্য্যন্ত হয় মুসলমান নয় হিন্দু দেশের মালিক হইবে, তাহ হইলে না হয় কেহ কেহ বলিতে পারিত, “রেখে দাও তোমার ধৰ্ম্ম! পার্থিব প্রভুত্ব ও ঐশ্বৰ্য্যটাই আসল জিনিষ ; সেটা ত পাওয়া গেল” । কিন্তু বাস্তবিক হিন্দু মুসলমানের