পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭ ૦ ঝগড়ায় শেষ ফল হয় কি ? কোন এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ নাকাল হইবার পর ইংরেজ আসিয়া চড়চাপড় লাথি লাঠি গুলির জোরে সকলকেই ঠাণ্ড করিয়া নিজের প্রভুত্ব আরো দৃঢ়তর করে। হইতে পারে, ঘে, হিন্দুমুসলমানদের মধ্যে কোন কোন নীচমন লোক লাভবান হয়। কিন্তু তাহার সংখ্যায় অল্প। হিন্দুসমাজ বা মুসলমান সমাজ সাম্প্রদায়িক বিবাদ দ্বারা কখনও লাভবান হয় না। কথামালায় সিংহ ও ভালুক শিকারের ভাগ লইয়া যুদ্ধ করিয়া কাবু হওয়ায় শৃগালের যেরূপ সুবিধা হইয়াছিল, ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক ঝগড়াতে তৃতীয় পক্ষের সেইরূপ সুবিধা ঘটে। আমাদের নিবুদ্ধিতা বশতঃ বিদেশীরাই প্রত্যেক বিবাদের শেষ মীমাংসক হয় ও আমাদের ভাগ্যবিধাতা হয়। দুঃখের বিষয় এই লজ্জা বিবাদপরায়ণ কোন পক্ষই অনুভব ও উপলব্ধি করে না । তৃতীয় পক্ষ মীমাংসকের কাজ যে বন্ধুভাবে করে, তাহাও নহে। এক মনিবের অনেকগুলা কুকুর খাওয়াখাওয়ি করিলে মনিব যেমন চাবুক দ্বার বিবাদ ভঞ্জন করে, তৃতীয় পক্ষ ভারতবর্যে তাহাঙ্ক করে। ভারতে রাজনৈতিক দলাদলি গান্ধীজির দল ও স্বরাজীদল ছাড়া আর সব রাজনৈতিক দলের এক হইয়া যাইবার প্রয়াসের মূলে, জ্ঞাতসারে ব্য অজ্ঞাতসারে, স্বরাজীদিগকে কাহিল করিবার ইচ্ছা কতটা আছে এবং গবন্মেণ্টের হাত হইতে রাষ্ট্রীয় অধিকার জিনিয়া লুইবার ইচ্ছাই বা কতটা আছে, তাহা বলা কঠিন। স্বামী শ্রদ্ধানন্দের লক্ষ্য করিবার ও চিন্তা করিবার শক্তি আছে ; যাহা তিনি সত্য মনে করেন তাহ বলিবার সাহস তাহার আছে ; দেশের জন্য তিনি ঘাটিয়াছেন, ভূগিয়াছেন, ত্যাগ করিয়াছেন। তিনি বলেন, স্বরাজীদিগকে জব্দ করিবার প্রবৃত্তি এই মিলনের চেষ্টার মধ্যে লক্ষিত হয়। তাহ হইলে দুঃখের বিষয়। ইংলণ্ডে বা তদ্বিধ প্রজাতন্ত্র স্বাধীনদেশে রাজনৈতিক দলাদলির যে সার্থকতা আছে, আমাদের দেশে তাহা নাই। বিলাতে শ্রমিক, উদারনৈতিক বা রক্ষণাশীল দল অন্য সব দলকে কাৰু করিতে পারিলে নিজের পালেমেণ্টে দলে পুরু প্রবাসী-বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড হইয়। গবন্মেষ্ট নাম লইয়া নিজেদের আদর্শ অনুসারে দেশের কাজ করিতে পারে, এবং তাহাদের বুদ্ধি ও সদিচ্ছ। থাকিলে তাহার দ্বারা দেশের উপকারও হয়। আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক দলই জয়ী হউক, রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্ম ও অপকৰ্ম্ম করিবার মালিক থাকিবে ইংরেজই । স্বতরাং রাজনৈতিক দলাদলিতে পাশ্চাত্য রকমের মাতামাতি এদেশে আমদানী করা আমরা সমীচীন মনে করি না । ব্যবস্থাপক সভায় ভোটে হারিলেও ইংরেজের হার নাই । ব্যবস্থাপুক সভা টাকা নামধুর করিলে লাট সাহেব তৎসত্ত্বেও থরচ মঞ্জুর করিতে পারেন। ব্যবস্থাপক সভার নিৰ্দ্ধারিত প্রস্তাবগুলি গবন্মেণ্টকে কোন কাজ করিতে বাধ্য করিতে পারে না ;-অনেক লোকের স্বাক্ষরযুক্ত হুজুরের নিকট দরখাস্ত যে-জাতীয় জিনিয, এই প্রস্তাবগুলিও সেইজাতীয়। অবশ্য কোন কোন প্রস্তাব অনুসারে কাজ সরকার বাহাদুর করেন ;–সেট। তাহীদের মর্জি । আইন প্রণয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতাও ব্যবস্থাপক সভার নাই। রাষ্ট্রের নীতি স্থির ও নির্দেশ করিবেন সরকার বাহাদুর। তাহার সহিত অসঙ্গতি, অসামঞ্জস্য বা বিরোধ যাহার নাই, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবাস্তর বিষয়ে সরকার দেশী সভ্যদের এমন কোন কোন কথা কানে তুলিতে পারেন ও তুলিয়া থাকেন। সুতরাং সরকারী অভিধানে “সহযোগিতা’র মানে বাস্তবিক যে আত্মসমর্পণ, তাহ স্বেচ্ছান্ধ বা বুদ্ধিহীন ভিন্ন অন্য সব লোকের বুঝিতে পারা উচিত। ইংরেজ জাতির বর্তমান ব্যবস্থা এই, যে, আমাদের রাজনৈতিক অগ্রগতির প্রত্যেক ধাপের সময় ও মাপ তাহীদের পালেমেণ্ট স্থির করিয়া দিবেন ; আমাদের যোগ্যতা তাহাদের বিবেচনা ও সুবিধা অনুসারে নির্ণীত হইবে । এই লজ্জাকর চিরপরাধীনতা মানিয়া লইয়া আমাদিগকে সহযোগিতা করিতে হুইবে । এবং তাহা করিতে হইবে স্বাধীনতার জন্ত ! এ অবস্থায় দেশহিতৈষী ভারতীয় সকল রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ যে ইংরেজকে কাৰ্য্যতঃ এই সৰ্ব্বেসৰ্ব্বার আসন হইতে টলান, তাহাতে সন্দেহ নাই। ব্যবস্থাপক সভাগুলি দ্বারা দেশের কোন উপকারই হয় না, বলিতেছি না। র্যাহারা ঐগুলির দ্বারা অল্পস্বল্প