পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] কষ্টিপাথর—বাঙ্গালা ভাষার শিশুপাঠ্য পুস্তকের অভাব woe (t কারণ মহারাজ চন্দ্রাদিত্য, হর্ষবর্গনের সমসাময়িক অর্থাৎ খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রারস্তকালের লোক ছিলেন। দণ্ডী সপ্তম শতকের শেষভাগে বর্তমান ছিলেন। পূৰ্ব্বে উল্লিপিত হইয়াছে বিজ্জক দণ্ডীর পরবর্তী, সুতরাং বিজকার সময় উক্ত মহারাণীর সময়ের অনেক পরে । এই কারণে র্তাহারা অভিন্ন হইতে পারেন না। যতদূর বুঝিতে পারা যায়, বিজ্জক দক্ষিণদেশীয় ছিলেন । র্তাহার যে কবিতাগুলি এখনও বর্তমান আছে তাহাতে শৃঙ্গাররসের অভিব্যক্তি অতীব সুন্দর ও মধুর। বিরহিণী নায়িকার অবস্থা বর্ণনে তিনি সিদ্ধহস্তী ছিলেন । ঠাক্কার স্বভাব-বর্ণন অতি স্বাভাবিক ও কষ্টকল্পনা-দোষশূন্ত । ভাষার লালিত্যে ও ভাবের মধুৰ্য্যে তাহার কবিতা অতি উচ্চস্থান পাইবার যোগ্য । সুভদ্র ।—সুভদ্রার স্থান বিজ্জকার বহু নিম্নে । তথাপি তিনি যে স্বকবি ছিলেন সে-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু অপরের প্রশংসাগানের উল্লেখ ভিন্ন তাহার কবিতায় আর কিছুই পাওয়া যায় না । বল্লভদেবের “স্বভাধিতাবলীতে’ সুভদ্রার একটি মাত্র পদ্য উদ্ধত হইয়াছে। তাহার অপরাপর রচনার কোন উদ্দেশ নাই। পরস্তু তাহার যে অনেক রচনা ছিল ইহা নিশ্চিত, কারণ তাহ ন হইলে রাজশেখর র্তাহার “মুক্তিমুক্তাবলীতে’ বলিতেন না যে— “পার্থস্য মনসি স্থানং লেভে থলু স্বভদ্রয় । কবীণাঞ্চ বচোবৃত্তি চতুৰ্য্যেন সুভদ্ৰয় ।” স্বভদ্রার জীবনীও অতীতের দুর্ভেদ। অন্ধকারে আবৃত। তাহার দেশ বা কালের কোন উদ্দেশ পাওয়া যায় না । “ফন্তু হস্তিনীর’ নাম সংস্কৃত সাহিতো তেমন প্রসিদ্ধি লাভ করে নাই। “স্বভাষিঠাবলীতে" উহার দুইটি কবিত। উদ্ধত তাছে । প্রথমটি “স্বজতি তীবদশেষগুণাকরং” ইত্যাদি। দ্বিতীয়টি “শাঙ্গ ধর পদ্ধতিতে” দেথা যায় । যখ!— “ত্রিনয়ন জটাবল্লীপুষ্পং মনোভবকামুর্কং গ্রহকিসলয়ং সন্ধ্যানারী নিতম্বনথক্ষতং । তিমির ভিদুরং বোন্ধঃ শৃঙ্গং নিশীবদনৰ্ম্মিতং প্রতিপদি নবসোন্দোবিস্বং সুপেদিয়মস্ত বঃ ” প্রতিপদেয় চন্দ্রের কি সুন্দর বর্ণন । এই রমণীর অপর কোন রচনা আছে কি না, ইনি কোন দেশে এবং কোন সময়ে বৰ্ত্তমান ছিলেন, তাহার নির্ণয় হয় না । “মেরিকা’য় নাম “স্বভাষিতাবলী’ ও ‘শাঙ্গ ধর পদ্ধতিতে” পাওয়া যায়। এইসকল গ্রন্থে উহার চার পাঁচটি মাত্র কবিতা দৃষ্ট হয়। কবি ঘনদেবের উক্তি হইতে বুঝা যায় যে, মেরিক কাব্যজগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন । ইহারও ইতিহাস ঘনতমসাচ্ছন্ন । “ইনলেখা” ও “পারুলার" নাম “সুভাষিতাবলী” ও “শাঙ্গ ধরপদ্ধতিতে” দৃষ্ট হয়। উহাদের অতি অল্পসংখ্যক কবিতার উল্লেখ আছে। তবে ঘনজেবের মতে দ্বিতীয় প্রণীণা কবি বলিয়া উল্লেখযোগ্য । যদিও পুৰ্ব্বোক্ত বিড়মীদিগের সময় নিশ্চিতরূপে নিৰ্দ্ধারণ করা যায় না, তথাপি ইহা বলা যাইতে পারে যে, তাহার। মুসলমান অধিকারের পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী সময়ে আবিভূর্ত হইয়াছিলেন। যেদিন তরাইনের শোণিতদাবিত সমাঙ্গনে বা শিৰোমণি পৃথ্বীৰাজ মহানিদ্রায় অভিভূত হইলেন, সেইদিন ভারতের স্বাধীনতার সহিত হিন্দুর বড় আদরের সংস্কৃত কাব্যের দেউটী চিরদিনের জন্য নিভিয় গেল । ( স্ববর্ণবণিক সমাচার, চৈত্র ১৩৩২) . শ্ৰীমতী বাসনা দেবী مسي مجمو বাঙ্গালা ভাষার শিশুপাঠ্য পুস্তকের অভাব স্বসভ্য দেশ মাত্রেই মাতৃভাষার বড় আদর। ছোট বড় সকল শ্রেণীর বিদ্যালয়ে সকল প্রকার শিক্ষাই সভ্যদেশে মাতৃভাষার যোগে দেওয়া হইয় থাকে। সম্প্রতি প্রবেশিক এবং মধ্যপরীক্ষায় বাঙ্গাল সাহিত্যের পাঠ্যপুস্তক নিৰ্ব্বাচিত হইয়াছে এবং প্রবেশিক পরীক্ষ। পর্য্যন্ত ইতিহাস, গণিত, ভূগোল ইতাদি বিষয়গুলি বাঙ্গালী ভাষার সাহায্যে শিক্ষা দেওয়া হইবে বলিয়। কর্তৃপক্ষ স্থির করিয়াছেন । ইংরেজী ভাষার শিশুপাঠ্য পুস্তকগুলির তুলনায় বাঙ্গালা ভাষার স্বম্বর শিশুপাঠ্য পুস্তকের বড়ই অভাব লক্ষিত হয়। yমদনমোহন তর্কালঙ্কার মহাশয়ের তৃতীয় ভাগ শিশুশিক্ষা পুস্তকখানির আদর্শ লইয়া ঐ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকগুলি রচিত হইয় থাকে। ইংরেজী স্কুলের নবম হইতে পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্য সাহিত্য-পুস্তকগুলির ভাষা এত কঠোর যে, উহাদেয় যথাযথ উচ্চারণ করাই কঠিন হইয় পড়ে,--অর্থ বা মৰ্ম্মগ্রহণের ড কথাই নাই। কতকগুলি বিদ্যালয়ে নবম হইতে সপ্তম শ্রেণীতে যে বাঙ্গাল বহি পড়ান হয়, তাতুদের পাঠের অর্থ ব মানে করান হয় না । দাত-ভঙ্গি। কঠোর সন্ধি-সমাস-সমর্থিত সংস্কৃত ভাষার শব্দসম্ভার সমুচ্চয়ে স্বল্প এই ভাষার আড়ম্বর দেখিয়াই সম্ভবতঃ বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষগণ উক্তরূপ ব্যবস্থা করিয়া থাকিবেন। অথচ ছেলে ধষ্ঠ শ্রেণীতে উঠিলেই র্তাহাকে vতারাশঙ্করের কাদম্বরীর অমুবাদ পড়ান এবং তাহার পদ পদার্থ সন্ধি সমাসাদি লইয়। বিব্রত করা হয়। এইরূপ প্রথায় কোন ভাষায়ই অধিকার লাভ করা আদৌ সস্তব কি না, তাহ এই বিদ্বজ্জনসন্মিলনের শিক্ষাব্যবসায়ী সভ্যমহোদয়গণ বিবেচনা করিবেন। ংরেজী শিশুপুtঠ্য পুস্তকগুলির অধিকাংশই যেরূপ ছোট ছোট শব্দ বাছিয়া বাছিয় রচিত হইয়া থাকে, আমাদের শিশুপাঠ পুস্তকে সেরূপ হয় না। ক্রমশঃ ছোট হইতে বড় শব্দ এবং সরল হইতে জটিল রচনাপ্রণালী ইংরেজী পুস্তকে দেথিতে পাওয়া যায়। একইরূপ স্বরবর্ণেয় উচ্চারণ অভ্যাস করাইবার জন্ত নানারূপ কৌশল উiহার কমিয়াছেন । জটিলতর সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ শিখাইবার ব্যবস্থাও উহাদের বেশ সুন্দর। ভাষার প্রয়োগ-বৈশিষ্ট ([tion) প্রথম হইতেই শিথাইবার চেষ্টা আছে । আমাদের দেশে বাঙ্গালী ভাষার শিশুপাঠ্য পুস্তকগুলিতে ঐক্লপ মূলতত্ত্বের প্রয়োগ কি চলে না ? এদেশে এখনও সেই সনাতন নিয়মে বড় বড় তেতালা-চোতাল সংযুক্তবর্ণের অতিব্যবহার দৃষ্ট হইতেছে । সরল এবং সহজ ভাষায় যাঙ্গাল শিশুপাঠ্য পুস্তক রচনার প্রতিকূলে এক বাধা আছে । পশ্চিম, পুৰ্ব্ব, উত্তর এবং দক্ষিণ বাঙ্গালীয় প্রাদেশিক পৃথক পৃথক্‌ ছোট ছোট ঘরোয় কথা আছে । কলিকাতার কক্‌নী ভাষায় বই লিখিলেই ঢাকার শিশুরা বুঝিতে পরিবে না এবং পক্ষাস্তরে কোচবিহার রঙ্গপুরের চলিত কথায় পুস্তক রচনা করিলে কলিকাতা এবং ঢাকা উভয় স্থলেই অচল হইবে । আমি একটি নিবেদন করিতে চাই । বঙ্গদেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম বিভাগের অধিবাসী এবং এসম্বন্ধে উৎসাহ-শীল ১•॥১২ জন মহাশয় ব ক্তি একত্র হইয়। বদি একটি সাব কমিটি করিয়া বঙ্গের সর্বদেশে প্রচলিত, সহজবোধ্য, সরল অথচ সাধু শব্দকোষ একটি সংগ্রহ করেন, তবেই এই সমস্তার সমাধান হইতে পারে। এই শব্দকোষে দুই কি আড়াই হাজার নিত্য ব্যবহার্ষ্য (গৃহস্থালী চাষ-বাস জন্তু-জানোয়ার, বৃক্ষ-লতা প্রভৃতি সম্বন্ধে ) শব্দ থাকিলেই যথেষ্ট হইবে। ঐ শব্দকোষের সাহায্যে নিম্ন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক রচনা করা অনায়াসসাধ্য হইবে । ম্যাকমিলানের King