পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪২ কোনে বলে’ একটি লোক এই ‘মাকী’ থেকে মাইল দেড়েক দূরে বাস করত। ৎ অঞ্চলের মধ্যে লোকটার অবস্থা স্বচ্ছল ছিল বলতে হবে, কারণ তার থেটে খেতে হ’ত না । বিস্তর ভেড়া ছিল, সেইগুলোকে একরকম বেদে-জাতের রাপাল দিয়ে পাহাড়ের এখানে সেখানে চবিয়ে—তাইতে লোকটার বেশ স্বচ্ছদে চলে যেত । যে ঘটনাটির কথা বলতে যাচ্ছি, তার প্রায় দু’বছর পরে লোকটাকে দেখি, —তখন তার বয়েস বড় জোর পঞ্চাশ ; বেশ বেঁটে-খাটো জোয়ান চেহারা, চুল গুলি ধন আর মিশ-কালে, চোখ ধেমন বড় তেমনি দৃষ্টি ও তীক্ষ্ণ, গায়ের রং জুতোর চামড়ার মতন কটা । যে-দেশে পাক৷ শিকার।র অভাব নেই, সে-দেশেও এই লোকটার বন্দুকশিক্ষা একটা আশ্চর্য্যের ব্যাপার ছিল । সে কখনো ছত্রর দিয়ে বুনেছিাগল শিকার কর ও না—একশে কুড়ি হাত দূর থেকে সে, জানোয়ারটার মাথায় বা কাধে যেখানে খুসী গুলি বসিয়ে দিয়ে, তাকে পেড়ে ফেলত। আবার তার বন্দুক দিনে রাতে সমান চলত। তার ওস্তাদার এই প্রমাণ, যারা কখনো কসিকায় ধাননি, তারা বিশ্বাস করবেন না। প্রায় আশী হাত তফাতে একখানা প্লেটের সমান এক টুকুরো গোল কাগজ আটকে রেখে তার পিছনে একট। বাতি জাল হ’ল । তারপর, মাতেও লক্ষ্য ঠিক করলে পর বাতিট। নিবিয়ে দেওয়া হ’ল । মিনিট খানেক পরে সেই ঘোর অন্ধকারে সে গুলি ছুড়বে—যদি চার বার ছোড়ে, অন্ততঃ তিন বার সে সেই কাগজটাকে ফুটে করবে । এহেন ক্ষমতা যার আছে, তার পশ্যর প্রতিপত্তি একটু বেশি হবারই কথা । লোকে বলত, মাতেও বন্ধুর পক্ষে যেমন ভালো, শক্রর পক্ষে তেমনি যম । সে লোকের উপকার করুত যেমন, তেমনি তার হাত ছিল দরাজ । পোটে ভেট চোর আশপাশের সকলের সঙ্গে সে নিৰ্ব্বিবাদে বাস করত। তার কেবল একটা দুনাম ছিল । যে গায়ে সে বিয়ে করেছিল সেখানে এক দুর্দান্ত লোক তার প্রণয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল । এই লোকটাকে সে নাকি জোর করে সরিয়ে দিয়ে নিজের পথ খোলসা করে । লোকের বিশ্বাস,—সেই প্রতিপক্ষটি একদিন একখান প্রবাসা–জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আয়না নিয়ে জান্‌লায় বসে যখন ক্ষেীর কবৃছিল, তখন হঠাৎ কোথা থেকে একটা যে গুলি এসে তাকে লাগে—সে নাকি মাতে ওর কাজ। ব্যাপারটা যখন চাপা পড়ে গেল, তখন মাতেও বিয়েট সেরে ফেললে । তার স্বী জিসেপ প্রথমে পর-পর তিনটি মেয়ে প্রসব করায় সে ভারী চটে গিয়েছিল ; তার পর যখন শেষে একটি ছেলে হ’ল, তখন মহা খুসী হয়ে তার নাম রাখলে, ‘ফচুনাতো –সে হ’ল তার বংশের বাতি,সে যে তার বাপদাদার নাম বজায় রাখবে। মেয়েগুলির বিয়ে সে ভালোই দিয়েছিল—বিপদে আপদে জামাইদের ছোর-বন্দুকের সাহায্য পাওয়াট। নিশ্চিত । ছেলেটির বয়েস তখন দশ, কিন্তু এর মধ্যেই সে বেশ চালাক চতুর হয়ে উঠেছে । তখন শরংকাল । সেদিন-মাতেও খুব সকলে সকাল স্বীকে সঙ্গে করে’, জঙ্গলের মাঝে মাঝে যে সব ফাক! জমি আছে, তারি একটাতে ভেড়ার তদারক করতে বেরিয়ে গেল । ফচনাতো সঙ্গে যাবার জন্যে আবদার করেছিল, কিন্তু সে মাঠটা নাকি একটু বেশি দূর, তাছাড়া, বাড়ীতেও একজনের থাকা দরকার, তাই বাপ রাজী হয়নি। এই রাজী-না-হওয়াটা যে কতখানি আফসোসের কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল, তা একটু পরেই বোঝা যাবে । মাতেও তখন ঘণ্টাকতক হবে বেরিয়ে গেছে। ফচনাতে বাইরে রোদরে চুপচাপ চিৎ হয়ে শুয়ে ভাব ছে—এই রবিবারে, তার যে-কাক কপোরাল তার বাড়ী বেড়াতে যাবে। এমন সময় হঠাৎ একটা বন্দুকের আওয়াজ শুনে তার ভাবনা ঘুরে গেল । বৰ্ণ করে দাড়িয়ে উঠে, মাঠের যেদিকটা থেকে আওয়াজ এসেছিল, সেই দিকে চেয়ে দাড়িয়ে রইল। সঙ্গে সঙ্গে আরও গোটাকতক আওয়াজ হ’ল—ঠিক পর-পর না হ’লেও সেগুলো যেন ক্রমশঃ আরও কাছে শোনা যেতে লাগল। শেষকালে, মাঠ থেকে তাদের বাড়ীর দিকে আসবার যে রাস্ত, তার উপর একটা মাহুষের মূৰ্ত্তি দেখা গেল। পাহাড়ীরা যে রকম টুপী পরে, তার মাথায় সেই রকম চুড়ে-ওলা টুপী, দাড়ী আছে, কাপড়-চোপড় বেজায় ছেড়া ; লোকটা