পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o سواCo প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড তাহার ফন্দিবাজ দেশশত্রু ব্যতীত আর কিছু নহেন । এই সকল মিথ্যা ধারণা নিরক্ষর লোকের মধ্যে প্রচার করিয়া তাহারা অনন্ত নরক বলিয়৷ কিছু থাকিলে তথায় গমনের পথ নিজেদের জন্য উন্মুক্ত করিয়া লইয়াছেন। শুধু অধৰ্ম্ম করা অপেক্ষ ধৰ্ম্মের নামে অধৰ্ম্ম করা অধিক পাপ । ইহার ধৰ্ম্মের দোহাই দিয়া নরহত্যা করিতে সকলকে উত্তেজিত করিয়া বিশেষ অপকৰ্ম্ম করিয়াছেন । যদি বা ধরা যায় যে ধৰ্ম্মযুদ্ধ করিয়া নিহত হইলে অথবা অপরকে নিহত করিলে পুণ্য লাভ হয়, তাহা হইলেও গত দাঙ্গার "ধোদ্ধা”গণের ক্ষেত্রে সে কথা খাটে না । ন্যায়যুদ্ধ বা সম্মুখসমর এবং দাঙ্গার "যুদ্ধ” পরস্পরবিরোধী। দাঙ্গার সময় সশস্ত্র লোক নিরস্ত্র লোককে হত্যা করিয়াছে। ইহা ন্যায়যুদ্ধ নহে। পশ্চাৎ হইতে আচমকা কাহাকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করাও ন্যায়যুদ্ধ বা সম্মুখসমর নহে । এবং এইরূপে অপরকে হত্যা করিতে গিয়া নিজে হত হইলে তাহা ন্যায়যুদ্ধে দেহত্যাগ নহে, তাহা গুপ্ত ঘাতকের উপযুক্ত পুরস্কার মাত্র। দাঙ্গার “যোদ্ধা”গণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্যায় উপায়ে “যুদ্ধ” করিয়াছে। স্বতরাং দাঙ্গার দ্বারা কোন যোদ্ধা স্বর্গে যাইবার উপায় করিতে পারিয়াছে কিনা, ইহা সন্দেহস্থল । বরং স্বর্গের বিপরীত কোন স্থানেই এই যোদ্ধাগণের যাওয়া সম্ভব । অবগু যে-সকল বীরপুরুষ আত্ম-রক্ষা বা অপরকে রক্ষা করিবার জন্য আততায়ীর সহিত যুদ্ধে হতাহত হইয়াছেন, তাহারা ন্যায়যোদ্ধা বলিয়া পরিগণিত হইবেন, এবং দাঙ্গার পুণ্যের সকলটুকুই তাহাদের প্রাপ্য। অ । বীরের কর্তব্য শত্রু যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন তাহার প্রতি কৃপা প্রদর্শনই -বীরের ধৰ্ম্ম । যদিও বিগত হিন্দুমুসলমানের কলহে পরস্পরকে শত্রু বিবেচনা করিয়া হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই মূঢ় প্রমাণিত হইয়াছেন এবং দেশের বহুল ক্ষতি সাধন করিয়াছেন, তথাপি ধরা যাউক, যে, তাহারা পরস্পরের শত্রুই ছিলেন। এই কলহে পুলিশের সাহায্যে হিন্দুগণই “জয়ী’’ হইয়াছেন বলিয়। অনেকের ধারণা । এরূপ জয় হইয়। থাকিলেও তাহার কোন সার্থকতা আছে কিনা,সে কথা বিবেচ্য -নহে। তাহারা জয়ী হইয়া থাকিলেও বীরোচিত ভাবে সে জয়শ্ৰী রক্ষা করিয়াছেন কিনা, তাহ দেখা যাউক । দাঙ্গার পরে শিখেদের শোভা-যাত্রার সহিত মিলিত হইয়া অনেক হিন্দু গমন করেন। প্রচার এই, যে, এই শোভা-যাত্রার লোকেরা মসজিদের সম্মুখে বিশেষ করিয়া বাদ্য বাজাইয়৷ -কলরব করিয়াছেন ও "হিন্দু-কি জয়” বলিয়া চীৎকার স্বাধীন লোক আছে । করিয়াছেন । এ কথা সত্য কিনা, আমরা জানি না । মুসলমান “নেতা” দিগের দ্বারা প্রচারিত মিথ্যা গুজব ইহা হইতে পারে। কিন্তু একথা সত্য হইলে বিশেষ আক্ষেপের বিষয়। কারণ, প্রথমত মুসলমানগণ হিন্দুদিগের শত্রু নহেন, যে, তাহদের বিরুদ্ধে “জয়” বলিয়া চীৎকার করিতে হইবে। দ্বিতীয়ত, তথাকথিত “জয়” সম্পূর্ণরূপে হিন্দুর নিজ চেষ্টা ও পৌরুষ দ্বারা লব্ধ নহে। উহার মধ্যে “বৃটিশের জয়” অধিক মাত্রাতেই রহিয়াছে। তৃতীয়ত, “জয়” হইয়া থাকিলেও যথার্থ বীরের ধৰ্ম্ম বিজিতের সম্মুখে গিয়া চীৎকার করা নহে। ইহাতে কাপুরুষতা দেখান হয় । এইরূপ কাৰ্য্য সত্যই যদি হিন্দুরা করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহার দেশের অপকার করিয়াছেন । শিক্ষিত হিন্দুদের উচিত মুসলমানদিগের নিকট এজন্য দুঃখ প্রকাশ করা। নিরক্ষর হিন্দু ও নিরক্ষর মুসলমানের রেষারেষি ও দুবুদ্ধিতার জন্য যাহাতে হিন্দুমুসলমান উভয় ধৰ্ম্মাবলম্বী ভারতবাসীর মধ্যে বিরোধ প্রবল হইয়া উঠিয়া আমাদের সদ্যোজাত জাতীয়তার সৰ্ব্বনাশ সাধিত না হয়, তাহা দেখিতে হইবে। অ । স্বাধীন মুসলমানের সংখ্যা পৃথিবীতে ২৩,০০,০০,০০০ মুসলমানের বাস। ইহাদিগের মধ্যে উনিশ কোটি পরাধীন অর্থাৎ ইয়োরোপীয়ের অধীন। স্বতরাং সমগ্র মুসলমান-জগতে মাত্র চার কোটি যে-ক্ষেত্রে মুসলমানগণের এক ষষ্ঠাংশ মাত্র স্বাধীন, সে-ক্ষেত্রে মুসলমান নেতাদিগের কৰ্ত্তব্য অপরকে মুসলমানের দৈন্য ও দুর্দশার জন্য দায়ী করিয়া মনের ভার লাঘব করিবার চেষ্টা না করিয়া, বিশেষ অন্বেষণ করিয়া এই দৈন্য ও পরাধীনতার কারণ নির্ণয় কর । নিজেদের মধ্যে গলদ না থাকিলে এরূপ অবস্থা কেহ প্রাপ্ত হয় না । হিন্দুগণ যে পরাধীন, তাহাও তাহাদের নিজেদেরই দোষে। মুসলমানের তুলনায় হিন্দু ষে-যে দিকে যতটুকু উন্নত, তাহাও তাহাদের নিজগুণে । হিন্দুর কৰ্ত্তব্য আত্মসংস্কারের সাহায্যে স্বাধীনতা লাভ করিবার চেষ্টা করা । মুসলমানের উচিত হিন্দুর আর্থিক ও বিদ্যাবুদ্ধি-সংক্রান্ত উন্নতি দেখিয়া হিংসা না করিয়। নিজের উন্নত হইবার চেষ্টা করা । অশিক্ষিত ও অজ্ঞ মুসলমানদের কথা ধৰ্ত্তব্য নহে ; কিন্তু কোন কোন মুসলমান নেতাও এরূপ ভয় দেখাইয়া থাকেন, যে, প্রয়োজন হইলে বিদেশী মুসলমানদের সাহায্য লইয়া তাহারা ভারতে মুসলমান রাজত্ব স্থাপন করিবেন। স্বাধীন মুসলমানদের সংখ্যা মোটে চারি কোটি, ভারতে হিন্দুর সংখ্যা একুশ কোটি সাতষট্টি লক্ষের উপর। ভারতের ছয়