পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনদোলা শ্ৰী শাস্তা দেবী (8) কিছুকাল কাটিয়া গেল । বাড়ীর অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হইয়া আসার সঙ্গে সঙ্গেই হরিসাধনের মন চঞ্চল হইয়া উঠিল । ময়নার বিবাহের কল্পনায় জমীদার-বাড়ীর অংশটা তিনি মন হইতে বাদ দিতে পারিলেন না । ব্যস্তভাবে আবার উঠিয়া পড়িয়া লাগিলেন ; কি জানি যদি ইতিমধ্যে প্রজাপতি অন্যত্র কিছু ঘটাইয়া বসেন। তলে-তলে আবার সকল রকম চেষ্টা চলিতে লাগিল, কিন্তু হরিকেশবকে লুকাইয়া। দৈবাং সব জানাজানি হইয়া গেল । সেবার পূর্ণবসন্তের মাঝখানে ভরা বৰ্মা নামিয়া সাতদিন ধরিয়া আকাশের ক্ৰন্দনের বিরাম ছিল না । সেদিনও সকাল বেল টিপি টিপি বৃষ্টি ও অন্ধকার আকাশ নেপিয়া বুঝিবার উপায় ছিল না যে, আকাশে এত শীঘ্র ই সি দেখা যাইতে পারে। ছোট ছেলেমেয়ের অন্ধকার ধরে বন্ধ থাকিয়া থাকিয়া হাপাইয়া উঠিয়াছিল, গৃহিণীদের ঘর-সংসার পচিয়া যাইবার যোগাড় । এমন সময় দুপুর বেলা মেঘ সরিয়া গিয়া চারিদিক রৌদ্রে ভরিয়া গেল । তরঙ্গিণী ভাত খাইয়া উঠিয়া ঘরের মেঝেতে মাদুর পাতিয়া পাচ মিনিটের জন্য একটু গড়াইয়া লইতে ছিলেন। উঠানে রৌদ্র পড়িয়াছে দেখিয়া তাহার আর বিশ্রাম হইল না। তিনি ব্যস্ত হইয় ভাড়ার ঘরের দিকে ছুটিলেন ; রোদ দেখিয়া গত সপ্তাহে পাচসের তেঁতুলের আচার সাজাইয়াছিলেন, দুই দিন রোদ না পাইতেই তাহ ঘরে তুলিতে হইল, সবটা বুঝি পচিয়া যায়। আজ একবার যেমন করিয়া হউক রোদের মুখ দেখাইতেই হইবে । সারিয়া লইতে ব্যস্ত। মায়েদের শাসনে শিশুরাও ঘরে বন্ধ, পুরুষেরা যে যাহার কাজে বাহিরে ঘুরিতেছে। এত ٹ\ سے 8 � বাড়ীর বৌঝিরা তখন প্রায় সকলেই এক পালা নিদ্র। বড় বাড়ীটা নিস্তব্ধ জনহীন পড়িয়া খ খ করিতেছে। তরঙ্গিণী ভাড়ার ঘরের শিকল খুলিয়া কালো পাথরের বড় বড় খোরাগুলি পূজার ঘরের সামনে বাধানো সানের উপর নামাইতেছিলেন, হঠাৎ চোখে পড়িল ভিতরের উঠান পার হইয়া খিড়কির দরজা দিয়া কে যেন নিঃশব্দে বাহিরে যাইবার উপক্ৰম করিতেছে। মাথায় উবুঝুটি বঁধা, মোটা-মোটা গালাভরা গহনায় গা ঢাকা, চওড়া লাল পেড়ে শাড়ী পর, কাধে একখানা গামছা, মুখে একমুখ পানদোক্তা, বেশ মোটাসোটু সপ্রতিভ এ মেয়েমানুষটিকে তরঙ্গিণী ইতিপূৰ্ব্বে কখনও দেখিয়াছিলেন বলিয়া ত মনে পড়ে না। র্তাহাদের গৃহে এ প্রাণীটির আবির্ভাব কি কারণে কোথা হইতে হইল ভাবিয়া না পাইয়া তিনি তাহাকে ডাকিয়া বলিলেন, “হঁ্য বাছা, কোথা থেকে আসা হচ্ছে ?” মাহ্যটি একটু যেন চম্‌কাইয়া উঠিল, উঠানে কাহারও সহিত দেখা হইবার সম্ভাবনা তাহার বোধ হয় মনে আসে নাই ; কিন্তু তারপরই মিশিমাথ কালো দাতগুলি বাহির করিয়া হাসিয়া বলিল, “এই মা, আসছি ছোটমার মামাবাড়ী থেকে ; তেনার কাছেই একটু কাজ ছেল ৷” তরঙ্গিণীর কেমন একটু সন্দেহ হইল ; তিনি বলিলেন, “সেই বাড়ীতেই থাকা হয় বুঝি ! আগে ত কোনো দিন দেখিনি ।” মেয়েটি গামছার খুট হইতে আর একটা পান লইয়। আলগোছে মুখে ফেলিয়া দিয়া বলিল, “না মা, সেখানে থাকি না ; এই যাওয়া আশা করি । তা তোমার কাছে আর মিথ্যে বলব কেন মা ? তুমি হলে বাড়ীর গিন্নি । ছোট মার মেয়েটির একটি সম্মন্ধের কথা মামাবাড়ীর ওঁরা বলেছিলেন, তাই পপর দিতে আসা। আমরা ওই করেই ত খাই মা। মা বলেছিলেন খুব গোপনে আসা-যাওয়া করবে, এখনই যেন লোক জানাজানি না হয় ; তাই