পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রজের বংশ আছে। আর আছে, রামী ধোপানীর পুকুর ও পাট ( পাথর ), ও শাখা পুকুর । নাই, নায়ুর। এ বিষয়ে পরে লিখিতেছি । প্রথমে দেখিতেছি, ছাতনার বাসলীর বিগ্রহে ও ধ্যানে ঐক্য আছে, তন্ত্রোক্ত ও ধৰ্ম্ম-পূজা-বিধানোক্ত ধ্যানের সহিত আছে। দ্বিতীয় মন্দিরের পাযাণে বা-স-লী এই নাম ও বানান স্পষ্ট লেখা আছে। এই লেখার মধ্যে যে-শক আছে, তাহাতে বাসলী দেবী সেখানে অন্ততঃ দুই শত বৎসর আছেন । প্রথম মন্দিরের বেষ্টন-. প্রাচীরের ইটের লেখা পড়িতে পারি নাই । পড়াইবার স্তরে কয়েকখানি ইট বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদে পাঠাইয়াছিলাম। পরে শনি, পড দূরে থাক, সেগুলি হস্তান্তরিত হইয়াছে । তাহাতেও শকের উল্লেখ আছে । মনে হঠয়েছে, ১৪৭৬ । অতএব প্রায় চরিশত বৎসর পাইতেছি । কিন্তু মন্দিরের পরেও সে প্রাচীর নির্মিত হইতে পারে। বরং এইর,প মনে হয়, প্রথমে পাথরের বেষ্টন ছিল, পরে ইটের হইয়াছিল। মন্দিরটি পাথরে নির্মিত। ছাতনার নিকটে শুনিয়া নামক পাহাড় আছে। পাথর নিকটে, এখনও অফুরন্ত ; বালিয়া পাথর মরম, কাটিতে তেমন পরিশ্রম নাই । যিনি মন্দির করাইতে পারিয়াছিলেন, তিনি বেষ্টনের পাথর জোগাড় করিতে পারিলেন না ? অন্য দিকে দেখিতেছি,স্থপতির দোষে, কিংবা অশ্বখের আক্রমণ হইতে রক্ষায় উপেক্ষায় পাথরের মন্দির দুই শত বৎসরও টিকে নাই । প্রাচীরের ইটও সমান নয়। কতক ইটে ছাপ আছে, কতক ইটে নাই । ছাপের ছাচও এক নয় ; কতক ছাচে অক্ষর উপরে ভাসিয়াছে,কতক ছাচে ডুবিয়া গিয়াছে। ত্ৰিবিধ ইটও ছোট ছোট টালির মতন। প্রচুর পাথরের দেশে এইরূপ ইট গড়াইয়া ছাচে ফেলিয়া শুখাইয়া পোড়াইয়া লইবার কি প্রয়োজন ছিল, কে জানে। কিন্তু বুঝিতেছি, প্রথম বাসলী স্থান আদিম অবস্থায় নাই। এখন বাসলী, ছাতনার রাজার কুলদেবী । ছাতনার রাজী, বিষ্ণুপুরের মল্ল-রাজার সামন্ত ছিলেন । এই হেতু ছাতনার রাজ্যের নাম সামন্তভূম । বতমান রাজবংশ ছত্রী। এই রাজবংশের পূবে ব্রাহ্মণ রাজা ছিলেন। এক দেবীর, কেহ কেহ বলেন বাসলী দেবীর, পূজা না করাতে প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড তাহার শাপে ব্রাহ্মণ-বংশের উচ্ছেদ হয়, বত মান ছত্রীবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা হইয় বসেন, এবং বাসলীর পূজা করেন। এই কাহিনী অসম্ভব নয়। আমরা জানি, পূব কালে ধৰ্ম্মঠাকুর ও তাহার গণ, ব্রাহ্মণের পূজা পাইতেন না । ( এখানে একটু কল্পনা করি। ) বাসলী দেবী কাজেই গ্রামের বাহিরে মাঠের মধ্যে হয় বৃক্ষতলে কিংবা খড়ের কুটীরে নিম্নশ্রেণীর লোকের পূজায় তুষ্ট থাকিতেন।* আদি সামন্থরাজ বিদেশী ছিলেন। তাইরি পক্ষে বাসলী জাগ্ৰং দেবতা ; প্রজা বশ করিতেই হউক তার বিশ্বাসেই হউক, তিনি বাসলীকে কুলদেবী করিয়া লইলেন। কিন্ত, পূজারী ব্রাহ্মণ কই ? এমন সময় কোথাকার কে এক বঢ় আসিয়া জুটিলেন । তিনি চণ্ডীদাস। ছাতনায় কেহ বলে না, চণ্ডীদাসের জন্মস্থান ছাতনা । সবাই বলে, তিনি অন্য স্থান হইতে আসিয়াছিলেন । সে-স্তান নাম্নর কি ছাতনার শ্রজীবনচন্দ্র নামটি ভুলিয়া আর কোন গ্রাম কে জানে। দে-ঘরিয়া কষ্টে এক নাম করিয়াছিলেন । গিয়াছি, কিন্তু, নান্নুর নয়, সে-গ্রামের নামের আদ্যে ম' ছিল । \ ছাতনার বাসলীর পূজারীর উপাধি দেঘরিয়া । এই নামও প্রাচীনত্বের সাক্ষী । ‘দেব-গৃহ’ হইতে দে-ঘর’ ; দে-ঘর সম্বন্ধীয় দেঘরিয়া । বতর্মান শ্রজীবনচন্দ্র দেঘরিয়ার কথায় চণ্ডীদাসের অগ্রজ দেবীদাস হইতে তিনি বাইশ তেইশ পুরুষ পরে। ইহাতে ৫০০–৫৫০ বৎসর পাইতেছি । সময়ের এই মিল বিস্ময়কর। এখানে বলা আবশ্বক দেঘরিয়া মহাশয় চণ্ডীদাসের কাল সম্বন্ধে আধুনিক গবেষণার ফল কিছুই জানেন না। বরং আমরা যে চণ্ডীদাস সম্বন্ধে অমুসন্ধান করিতেছি, সে নিমিত্ত বাঁকুড়া হইতে গিয়াছি, ইহাতে তিনি আশ্চর্য হইয়াছিলেন। এইরূপই হয়। রামকৃষ্ণদেবের জন্মস্থান কামার-পুকুর, কিংবা বিদ্যাসাগর মহাশয়েল বীরসিংহ গ্রামে তাইদের চরিত শু নিতে গেলে

  • বাঁকুড়ার মাঠে মাঠে এমন কত গ্রামদেবী বৃক্ষতলে আশ্রয় পাইয়াছেন, তাহার সংখ্যা হয় না। সকলের নামের শেষে সিনী আছে। যেমন, কেন্দুয়াসিনী, অর্থাৎ কেন্দু (বৃক্ষ)-বাসিনী, এইরপ, দেয়াসিনী শা—দেব ( গৃহ )-বাসিনী । আমার বাঙ্গাল শব্দকোষে যে বিদেশিনী অর্থ দেওয়া হইয়াছে, তাহ ভুল ।