পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Qb যেতে লাগল। কেদার বিনয়ী, মিষ্টভাষী, সুতরাং নবীন প্রবীণ সবাই তার সঙ্গে আলাপ ক’রে খুসী হ’ল । সহরে নবীন আর ভূধর নামে দুটি যুবক ছিল। তারা উচ্চ বংশের সস্থান ব’ণে পরিচয় দেবার গৰ্ব্ব রাখত। একজন ছিল ব্রাহ্মণ আর একজন ছিল কায়স্থ । দুটিতেই আদালতের চাকুরী কবুত ; সুতরাং এক সঙ্গে ওঠা বসাটা তাদের বেশ ধনিষ্ঠভাবেই চলত। তারপর দুজনের লক্ষ্য ও ছিল এক। সে লক্ষ্য হচ্ছে, সহরে নতুন কোনো কৰ্ম্মচারী এলেই তার ধাত বোঝবার জন্যে নাড়ী টিপে ধর। রোগ বুঝে ব্যবস্থা ধোগাতে তার ছিল অদ্বিতায় । ঐ জায়গাটির আবহাওয়াট। এম্‌নি হ’য়ে দাড়িয়েছিল যে, ব্যভিচার, মদ-খাওয়া প্রভৃতি চরিত্রদেমগুলি সেখানে শতকরা নিরানব্বই জন লোক একটুও দোষের মনে করতেন না। নবীন, ভূধর তারই মধ্যে মানুষ হ’য়ে উঠে নিজেদের মধ্যে ঐ-সবের বীজ বেশ ভাল ক’রেই সঞ্চয় করেছিল। আর তাতেই তাদের প্রবৃত্তি এমন হীন হ’য়ে দাড়িয়েছিল যে, কোণে যুবতী-কিশোরী ভদ্রকুলনারীও তাদের কুৎসিত আলোচনার বাইরে থাকৃতে পারত না। পাড়ার ছেলে বলে প্রায় পুরাতন বাসিন্দ। সবার ঘরেই তাদের অবাধ গতিবিধি ছিল ; এবং এই সুযোগটির প্রত্যেক অংশটিকে তারা তাদের কায্য অভিপ্রায়-সিদ্ধির অনুকূলভাবে গ্রহণ করতে এতটুকু অবহেলা কষ্কৃত না । কেদার বড় লোকের ছেলে, যুবপুরুষ, দেখতে সুন্দর, সেখীন ; সুতরাং দুই বন্ধুই একটা মস্ত মক্কেল পাওয়৷ গেছে ভেবে খুব খুশী হ’য়ে উঠল । সেদিন সন্ধ্যার পর দুই বন্ধু থানার ধারের প্রকাণ্ড একটি পুকুরের পাশে গল্প করছে। গল্পের বিষয় আমাদের কেদারেরই চরিত্র সমালোচনা। ভূধর বললে,—বিশেষ স্থবিধে হবে ব’লে তে। মনে হয় না ভাই, নেহাং নিবৃমিষ্যি গোছেরই ঠেকৃছে যে ” g নবীন বললে,—“রাখনা তোর নিরূমিষ্যি, একে দাদা পুলিশের লোক তাতে এই ভরা যৌবন—ভেতরে ভেতরে সব আছে হে ! ঘাবড়া ও কেন ? আস্তে আস্তে গুণ প্রকাশ হবে ।" প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড “ন হে, লোকটা ভালই। সেদিন মতি-বাৰু, দ্বিজেনবাৰু দু’চারটে বেস্টাস কথা বলতেই কেদারবাবুর মুগ কালো হ’য়ে উঠল। দিদির কাছে শুনেছি, পরিবারটি নাকি কালীবাবু মদ খান আর বাইরে রাত কাটান শুনে অবাকৃ হ’য়ে বলেছেন, ‘বাড়ীর মেয়েরা এর জন্যে শাসন করে না ? দিদি তখন দুকথা খুব শুনিয়ে দিয়েছিল । বলেছিল হিন্দু ঘরের মেয়ে হয়ে স্বামীকে আবার কে কোথায় শাসন ক’রে থাকে ? ওসব নষ্ট-দুষ্ট মেয়েরাষ্ট ক’রে থাকে। মুখের মতন জবাব পেয়ে তখন গিল্পী একেবারে ঠাণ্ডা (” নবীন বললে—“গান বাজনার বেশ সৰ্থ আছে । প্রমোদার কাছে একদিন নিয়ে যেতে পারলে মন্দ হয় না। না ভাই শুক্লে মেহনং আর পোষায় না দেখছি।” ভূধর বললে—“অত তাড়াতাড়ি করলে সব মাটি হবে ত৷ ব’লে রাখছি। এই ত সবে পনের দিন হ’ল এসেছে। সেবার বিষ্ণু বাবুর কথা কি ভুলে গেলি ? সোনার চাদ ভদ্রলোক বিড়িটি পৰ্য্যন্ত ছুতেন না তারপর কালাপাণি সীতরে পার হতে লাগলেন, মতি-বাবু টক্তিবাবু সবাইকেই ছাপিয়ে গেলেন।” থান থেকে একটা বড় আলোর জলুস রাস্তায় পড়তেই নবীন ভূধরের গা টিপে বলে উঠল—“এই দিকেই আসছে হে, উঠে পড় ।” তারপর দুজনে সোজা গিয়ে রাস্তায় পথ হেঁটে চলতেই কেদারের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা । দুজোড়া হাত এক সঙ্গেই উঠে কপালে ঠেকে ইনস্পেক্টর বাবুকে সম্মান জানাতেই কেদারও তা ফিরিয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললে—“কোথা যাচ্ছেন ?” নবীন বললে—“এই এদিকে একটু বেড়াতে বেড়াতে বাড়ী যাচ্ছি, মাঘমাসের শীতট এবার বেশী কনকনে হ’য়ে পড়েনি, বুঝছেন কি না—” কেদার বললে—“চলুন না আমার বাসায় একটু গানটান শোনাবেন ।” ভূধর বললে, “মতি-বাবুর বাড়ী যে আজ যাবেন বলেছিলেন পাশা খেলতে ?” কেদার তাচ্ছিল্যের স্বরে বললে না “না, সেখানে যত