পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Sలో ভাকাত হ’লেও বেশ স্বচ্ছন্দে ঢুকে পড়তে পাবৃত। এ রকম ক’রে দরজা খুলে রেখো না ।” মেয়েটি একটু মান হাসি হাসিয়া বলিল, “চোর ডাকাত আসবে কিসের লোভে এখানে ? তাদের ধষ্টই সার হবে । থাকবার মধ্যেও কয়েককটা ছেড়া কাপড় আর দু চারটে ভাঙ্গা বাসন । আর একটা হাড়িতে সের দুই মোট চাল আছে।” যুবক কি যেন বলিতে গিয়া থামিয়া গেল। তাহার পর বলিল তবু শুধু শুধু চোর বা বদমাইসের দর্শন লাভ করবার সুবিধা না রাখাই ভাল। তারা ত আর তোমার হঁাড়ির খবর আগে জেনে আসবে না ? কিন্তু সতীশ কোথায় তা ত বললে না ?” মেয়েটি বলিল, “তিনি আর বাড়ী থাকেন কখন ? কাজের চেষ্টায় বেরিয়েছেন। শু্যামবাজারে না কোথায় একটা ছেলে-পড়ানোর কাজের সন্ধান পেয়েছেন, সেইটাই জোটে কিনা তাই দেখতে গেছেন।” নরেন বলিল, “কেন সে অফিসের কাজটা তার হয়নি নাকি ? আমি ত মনে ক’রে বসে আছি যে সে রোজ অফিস যাচ্ছে।” সরযু বলিল, “আপনি আমাদের এমনি খবরই রাখেন বটে। তার কাজ হ’ল কবে যে, যে যাবেন ? এ ক'দিন যা আমাদের কাটুছে ! খাওয়া, পরা, থাকার সব দুঃখ আমার গায়ে স’য়ে গিয়েছে, কিন্তু যে সে এসে যখন বাড়ী চড়াও হয়ে টাকার তাগাদ করে, আর দিতে না পাৰ্বলে মুখের উপর যা খুসি ব’লে যায়, তখন আমার সত্যি ইচ্ছে ক’রে বাড়ীঘর ছেড়ে যে দিকে দুচোখ যায় পালিয়ে যাই।” নরেনের পাংশু মুখও লাল হইয়া উঠিল, সে একটুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল,“দুনিয়ায় তোমাদের চেয়েও দুভাগার অভাব নেই সরযু। তোমার তবু রাগ হয়, আমার সে অধিকারও আর নেই। ঘরে সবাই না থেয়ে মবৃছে, রুগ্ন ভাইটা গলা শুকিয়ে পড়ে আছে। যদি দুবেল জুতো মেরেও আজ কেউ আমায় টাকা ধার দেয় ত আমি নিই। যাক, তুমি নিজের কাজ কর, অমি চললাম p প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সরযু বলিল, "দাদা এখুনি আসবেন। পাচ মিনিট বসলেই তা’র সঙ্গে দেখা হ’ত ” নরেন বলিল, “আমাকে দেখে সে খুসি হবে না। আমি কেন এসেছিলাম, তা কি এখনও বোঝনি ?” সরযু একটু ইতস্তত করিয়া নীচুগলায় বলিল, “না।” নরেন তাহার সত্য গোপন করিবার প্রয়াস দেখিয়। হাসিয়া বলিল, “আচ্ছা, না বুঝে থাকত ভালই। সতীশ এলে বোলে, আমি এসেছিলাম, সে ঠিক বুঝবে কেন। তার জন্যে যে অপেক্ষা করিনি তাতে সে দুঃখিত হবে না।” সরযু একেবারে অন্ত কথা পাড়িয়া বসিল 1. নরেন সতীশের কাছে যে টাকার চেষ্টায় আসিয়াছিল কত দুঃখে, তাহা বুঝিতে তাহার বাকি ছিল না। চাহিতে তাহার যত বেদনা, সতীশের না দিতে পারার বেদনা তাহার অপেক্ষ কিছু কম হইবে না। কিন্তু উপায় নাই। দুটি পরিবারই দারিদ্র্য-রাক্ষসীর কবলে এমন ভাবে, গিয়৷ পড়িয়াছে, যে বন্ধুত্ব স্নেহ, লজ্জা, ভদ্রতা, কিছুই তাহাদের রক্ষা করিয়া চলিবার উপায় নাই । সরযু বলিল, “ধীরুর জন্তে কিছু চিড়ে দিয়ে দেব ? চিড়েভাজা অমুখের মধ্যেও খেতে পারে।” নরেন বলিল, “তোমাদের কম পড়বে না ?” সরযু বলিল, “না না, কম কেন পড়বে, অনেক আছে । আপনি দাড়ান, আমি নিয়ে আসছি।” মিনিট দুই তিনের মাধ্যই সে ফিরিয়া আসিল, পরিষ্কার ন্যাকড়ায় বাধা একটি ছোট পুটলি নরেনের হাতে তুলিয়া দিয়া বলিল, “હરું c p নরেন পুটুলি পকেটের মধ্যে রাখিয়া, দাড়াইয় ইতস্তত করিতে লাগিল। আর কোনোও ছুতায় যদি কিছুক্ষণ থাকা যায়। তাহার দারিদ্র্যক্লিষ্ট অন্ধকার জীবনাকাশে এই মেয়েটিই তারার মতন ফুটিয়াছিল, ইহার সান্নিধ্যটাই ছিল তাহার একমাত্র আনন্দের সম্বল । জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছা সরযু, তোমার পড়াশুনে বুঝি ভাঙ্গ হাড়ি-কড়ার তলায় একেবারে তলিয়ে গেল ?” সরযু বলিল, “না তলিয়ে আর করে কি ? বিনা পয়সায় কেউ পড়াবে না,আর ভাঙ্গা হাড়িতে ভাত না রণধলে কেউ থেতে পাবে না। কাজেই বাড়ীর সবাইকার খাওয়াট