পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@8३. লোকদের সংখ্যা বেশী হইতে পারে বটে। কিন্তু লাটসাহেব তাহাতে ভয় পাইয়া নাখোদা মসজিদকে বিশেষ গৌরব দিয়াছেন বলিয়া মনে হয় না। আমাদের অনুমান এই, বে, সকল মসজিদের সম্মুখে দিন-রাত্রির সব সময়ে মিছিলের গীতবাদ্য বন্ধ করাইবার যে-আবদার মুসলমানদের ছিল, তাহা পূর্ণ করা অসম্ভব দেখিয়া লাটসাহেব পিত্তিরক্ষা হিসাবে কেবল মাত্র একটি মসজিদ সম্বন্ধে মুসলমানদের প্রার্থন পূর্ণ করিয়াছেন। লাটসাহেবের আদেশে পুলিশ কমিশনারকে মুসলমানদের নামাজের সময় জানিয়া তাহা লইয়া নির্দেশ করিয়া দিবার ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে । ইহাতে কলিকাতার খিলাফং কমিটি আসন্তুষ্ট হইয়াছেন । যে-কোন কারণে পুলিশ কমিশনার দরকার মত মিছিল সম্বন্ধে যথোচিত আদেশ দিতে পারিবেন, এইরূপ ক্ষমতাও তাহাকে দেওয়া হইয়াছে। কার্য্যতঃ তাহাকে হৰ্ত্ত কৰ্ত্ত বিধাতা করা হইয়াছে। র্তাহার এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা যে আপাততঃ হিন্দুদের অসুবিধার কারণ হইবে, তাহ অনায়াসেই বুঝিতে পারা যায়। হিন্দুর উচ্চ জাতি ও নীচ জাতি প্রভৃতি ভেদ ভুলিয়া যদি কখন ংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী হইতে পারে, তখন কি ঘটিবে, তাহা এখন অনুমান করিবার দরকার নাই । কিন্তু এখনও গবর্ণমেণ্ট এবং মুসলমানেরা জানিয়া রাখুন যে, লাটসাহেবের কথা শেষ কথা নহে ; এ হুকুম রদ হইবেই হইবে। সাধারণ রাস্তায় সৰ্ব্বসাধারণের অধিকার এ প্রকারে লুপ্ত হইবার নহে। কোন কোন হাইকোর্ট ও প্রিভিকৌন্সিল এবিষয়ে সকল সম্প্রদায়কে অবাধে সৰ্বকারী রাস্ত ব্যবহারের স্বাধীনতা দ্বানের যেনীতি সমর্থন করিয়াছেন, তাহাই টিকিবে। র্যাহারা সজন স্থানে রাস্তার উপর ধৰ্ম্মমন্দির নিৰ্ম্মাণ করেন, তাহারা সেখানে নির্জন স্থানের নিস্তব্ধতা আশা করিতে পারেন না । তাহারা যদি সজন স্থানের অন্য নিত্য কোলাহল সত্ত্বেও উপাসনা করিতে পারেন, তাহা হইলে অমুসলমানদের নৈমিত্তিক মিছিলের শব্দও তাহাদের সহ করা উচিত। তাহা না পারিলে, হয় তাহাদের মিছিল চলিয়া যাইবার পর নামাজাদি করা উচিত, নতুবা ধৰ্ম্মমন্দির সজন স্থান হইতে সরাইয়া লইয়া নির্জন স্থানে নিৰ্ম্মাণ করা উচিত। এক সম্প্রদায়ের ধৰ্ম্মান্ধতাপ্রস্থত জিদে অন্য সকলের স্বাধীনতা ও অধিকার লুপ্ত হইতে পারে না । কলিকাতায় যে-সব মিছিলের জন্য পুলিসের অনুমতি দরকার হয় না, তাহার গীতবাদ্য মসজিদের সামনে থামাইতে হইবে কিনা, সরকারী কমু্যনিকেতে সে-বিষয়ে প্রবাসা—আষাঢ়, ১৩৩e [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড কিছু লেখা নাই। অনেক সময় খোল করতাল সহকারে কীৰ্ত্তন করিতে করিতে শবদাহ করিতে লইয়া যাওয়া হয় । তাহার জন্য অকুমতি দরকার হয় না। শোকাৰ্ত্ত মানুষরা সাধারণতঃ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে না । এইজন্য, এবং হয় ত কোথাও কোথাও ভীরুতা বশতঃ, হিন্দুরা মুসলমানদের অশিষ্ট ও অন্ত্যু জিদে এরূপ কীৰ্ত্তনও বন্ধ করিয়াছে। তাহা করিবার হীনতা সহ করা উচিত নয়, এবং কীৰ্ত্তন বন্ধ না করিলে যাহাতে মার থাইতে না হয়, তাহার জন্য ও অতঃপর প্রস্তুত থাকিতে হইবে । ইতিমধ্যেই মুসলমানের হিন্দুদের বাসগৃহের মধ্যেও গীতবাদ্যে ব্যাঘাত জন্মাইয়াছে। এই অন্যায় জিদে গবন্মের্ণট এবং সংঘবদ্ধ হিন্দুসমাজ বাধা না দিলে থিয়েটার, যাত্রা, কন্সার্ট, গৃহস্থের বাড়ীর পূজাপাঠ ও গানবাজনা মুসলমানদের মজির উপর নির্ভর করিবে, এবং তদ্রুপ জুলুম ও দাসত্ব দুঃসহ হুইবে । কলিকাতার পুলিসের অনুমতির ফারমে যে-সব সৰ্ব লিখিত অাছে, তাহ বাস্তবিক এযাবৎ হিন্দুদের দ্বারা এবং মুসলমানদেরও দ্বারা পালিত হইয়া আসিতেছে কি না, তাহা লাট সাহেবের বিবেচনা করা উচিত ছিল।

  • ঔত্রীরাজরাজেশ্বরী দেবী” বিসর্জনের মিছিল

বড়বাজারে স্বতীপটীতে গত ৬৯ বৎসর ধরিয়া শ্রীরাজরাজেশ্বরী দেবীর বারোয়ারী পূজা এবং পূজা অন্তে সমারোহের সহিত বিসর্জন হইয়া আসিতেছে। এবারও পূজার পর বাদ্যভাণ্ডসহ মিছিল করিয়া বিসর্জন দিবার জন্য পুলিশের অনুমতি লওয়া হয়। এই অনুমতিতে মিছিলের লোকসংখ্যা পচাত্তরের অনধিক বলিয়া নির্দিষ্ট হয় । কিন্তু খববের কাগজে সকল হিন্দু শিখ প্রভৃতিকে এই বিসর্জন-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আহবান করা হয়। পূজার কৰ্ত্তারা এই আহবানের জন্য দায়ী না হইলেও, এই ওজুহাতে পুলিশ কমিশনার মিছিল বাহির হইবার আধ ঘণ্টা পূর্বে প্রথম অনুমতি প্রত্যাহার করিয়া ভিন্নপথ দিয়া যাইবার অনুমতি দেন। প্রথম অনুমতির পথের ধারে কয়েকটি মসজিদ ছিল, দ্বিতীয়টিতে ছিল না। ৬৯ বৎসর ধরিয়া প্রথম-নির্দিষ্ট পথে মিছিল চলিয়া আসিতেছে। প্রথম অহুমতি নাকচ করিবার পূৰ্ব্বে কয়েকজন মুসলমান নেতা পুলিশ কমিশনারের সহিত দেখা করেন, এবং শতশত মুসলমান নির্দিষ্ট পথের ফুটপাথ ও রাস্তায় অবিরত নামাজে বা নামাজের অভিনয়ে এপ্রকারে ব্যাপৃত থাকে, যে, পথিক ও যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয় । এরূপ করিবার উদ্দেশু সহজবোধ্য ;—উদ্দেশ্য স্পষ্টতঃ ইহাই