পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা) কষ্টিপাথর—ভারতবর্ষ ও ব্রহ্মদেশের বন্দর-সমূহের বিবরণ ఆశిdt লাভ করিনি। বাংলা দেশের ছোট ঘরে আমার গৰ্ব্ব করবার স্থান ছিল, কিন্তু ভারতের বড় ঘরে আমার আনন্দ করবার স্থান । আমার প্রভু আমাকে তার দেউড়ীতে কেবলমাত্র বঁশি বাজাবার ভার দেননি—শুধু কবিতার মালা গাঁধিয়ে তিনি আমাকে ছুটী দিলেন না। আমার যৌবন যখন পার হয়ে গেল, আমার চুল যখন পাকৃল তখন ডার অঙ্গনে আমার তলব পড়ল। সেখানে তিনি শিশুদের মা হয়ে বসে’ আছেন। তিনি আমাকে হেসে বললেন, “ওরে পুত্র, এতদিন তুই ৩ কোনে কাজেই লাগলি-নে, কেবল কথাই গেঁথে বেড়ালি। বয়স গেল, এখন যে কয়টা দিন বাকী আছে, এই শিশুদের সেবা কর।” কাজ কুরু করে’ দিলুম। সেই আমার শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ের কাজ। কয়েক জন বাঙালীর ছেলেকে নিয়ে মাষ্টার স্বরু করে দিলুম। মনে অহঙ্কার হ’ল, এ আমার কাজ, এ আমার স্বষ্টি । মনে হ’ল আমি বাংলা দেশের হিতেসাধন করুচি, এ আমারই শক্তি । কিন্তু এযে প্রভুরই আদেশ—যে-প্ৰভু কেবল বাংলা দেশের নন, সেই কথা যার কাজ তিনিই স্ময়ণ করিয়ে দিলেন । সমুদ্র-পার হতে এলেন বন্ধু এণ্ড জ, এলেন বন্ধু পিয়াসন। আপন লোকের বন্ধুত্বের উপর দাবী আছে, সে-বন্ধুত্ব আপন লোকেই সেবার লাগে। কিন্তু র্যাদের সঙ্গে নাড়ীর সম্বন্ধ নেই, যাদের ভাষা স্বতন্ত্র, ব্যবহার স্বতন্ত্র, তারা যখন অনাহূত আমার পাশে এসে দাড়ালেন, তখনই আমার অহঙ্কার ঘুচে গেল, আমার আনন্দ জন্মাল । যখন ভগবান পরকে আপন করে দেন, তখন সেই আত্মীয়তার মধ্যে তাকেই আত্মীয় বলে জানতে পারি। আমার মনে গৰ্ব্ব জন্মেছিল যে, আমি স্বদেশের জন্য অনেক কচিআমার অর্থ, আমার সামর্থ আমি স্বদেশকে উৎসর্গ করূচি। আমার সেই গৰ্ব্ব চূর্ণ হয়ে গেল যখন বিদেশী এলেন এই কাজে । তখনই বুঝলুম এও আমার কাজ নয়, এ তারই কাজ যিনি সকল মামুষের ভগবান । এই যে বিদেশী বন্ধুদের অযাচিত পাঠিয়ে দিলেন, এর আত্মীয়-স্বজনদের হতে বহু দূরে পৃথিবীর প্রান্তে ভারতের প্রান্তে এক খ্যাতিহীন প্রাস্তরের মাঝখানে নিজেদের সমস্ত জীবন ঢেলে দিলেন ; একদিনের জন্তও ভাব লেন ল, যাদের জন্ম তাদের আত্মোৎসর্গ তার বিদেশী, তার পুর্বদেশী, তারা শিশু, তাদের ঋণশোধ করবার মত অর্থ তাদের নেই, শক্তি তাদের নেই, মান তাদের নেই। তার নিজে পরম পণ্ডিত, কত সন্মানের পদ তাদের জন্ত পথ চেয়ে আছে, কত উৰ্দ্ধ বেতন উীদের আহবান কবৃচে, সমস্ত তার প্রত্যাখ্যান করেচেন—অকিঞ্চনভাবে, স্বদেশীয় সম্মান ও স্নেহ হতে বঞ্চিত হয়ে, রাজপুরুষদের সন্দেহ দ্বারা অনুধাবিত হয়ে, গ্রীষ্ম এবং রোগের তাপে তাপিত হয়ে তার কাজে প্রবৃত্ত হলেন । এ কাজের বেতন তারা নিলেন না, দুঃখই নিলেন। তারা আপনাকে বড় করলেন না, প্রভুর আদেশকে বড় করলেন, প্রেমকে বড় করলেন, কাজকে বড় করে তুললেন। এই ত আমার পরে ভগবানের দয়া—তিনি আমার গৰ্ব্বকে ছোট করে দিতেই আমার সাধনা বড় করে দিলেন। এখন এই সাধনা কি ছোট বাংলা দেশের সীমার মধ্যে আর ধরে ? বাংলার বাহির থেকে ছেলেরা আসতে লাগল। আমি তাদের ডাক দিইনি। ডাকলেও আমার ডাক এতদূরে পোছত না। যিনি সমুদ্র পার থেকে নিজের কণ্ঠে উার সেবকদের ডেকেছেন, তিনিই স্বহস্তে তার সেবাক্ষেত্রের সীমানা মিটিয়ে দিতে লাগলেন। আজ আমাদের আশ্রমে প্রায় ত্ৰিশ জন গুজরাটের ছেলে এসে বসেচে । সেই ছেলেদের অভিভাবকের আমার আশ্রমের পরম হিতৈষী। তারা আমাদের সর্বপ্রকারে যত করেচেন, এমন আমুকুল্য ভারতের জার কোথাও পাইনি। অনেক দিন আমি বাঙালীর ছেলেকে এই আশ্রমে ষানুষ করেচি–কিন্তু বাংলা দেশে আমার সহায় নেই। সেও অামার বিধাতার দয়া । যেখানে দাবী বেণী সেখান থেকে যা পাওয়া যায় সে ত খাজনা পাওর। যে খাজনা পায় সে যদি বা রাজাও হয় তৰু সে হস্তভাগ্য, কেন না সে তার নীচের লোকের কাছ থেকেই ভিক্ষা পায় ; যে দান পায় সে উপর থেকে পায়, সে প্রেমের দান, জবরদস্তির আদায়ওয়াশিল নয়। বাংলা দেশের বাহির থেকে আমার আশ্রম যে-আমুকুল্য পেয়েচে, সেইত আশীৰ্ব্বাদ—সে পবিত্র। সেই আমুকূল্যে এই আশ্রম সমস্ত বিশ্বের সামগ্রী হয়েচে । , আজ তাই আত্মাভিমান বিসর্জন করে বাংলাদেশাভিমান বর্জন করে বাইরে আশ্রম-জননীর জন্য ভিক্ষা করতে বাহির হয়েচি। শ্রদ্ধয়া দেয়ম্। সেই শ্রদ্ধার দানের দ্বারা আশ্রমকে সকলে গ্রহণ কবেন, সকলের সামগ্রী করবেন, তাকে বিশ্বলোকে উত্তীর্ণ করবেন। এই বিশ্বলোকেই অমৃত-লোক । যা-কিছু আমাদের অভিমানের গওঁীর, অামাদের স্বার্থের গণ্ডীর মধ্যে থাকে তাই মৃত্যুর অধিকারবত্তী। যা সকল মানুষের, তাই সকল কালের । সকলের ভিক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের আশ্রমের উপরে বিধাতার অমৃত বৰ্ষিত হোক—সেই অমৃত-অভিষেকে আমরা— তার সেবকের পবিত্র হই-আমাদের অহঙ্কার ধৌত হোক, আমাদের শক্তি প্রবল ও নিৰ্ম্মল হোক—এই কামনা মনে নিয়ে সকলের কাছে এসেচি—সকলের মধ্য দিয়ে বিধাতা আমাদের উপর প্রসন্ন হোন, আমাদের বাক্য, মন ও চেষ্টাকে তঁর কল্যাণ-সৃষ্টির মধ্যে দক্ষিণ হন্তে গ্রহণ করুন । ( ভারতী, জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৩ ) শ্ৰী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষ ও ব্রহ্মদেশের বন্দর-সমূহের বিবরণ ভারত্নবর্যের দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে ৪১টি বন্দর অবস্থিত। কতকগুলি বন্দরে বিদেশের সহিত আদান-প্রদান হয় না । ১ । করাচী—সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত। ভারতীয় বন্দর-সমূহের মধ্যে করাচী ইউরোপের নিকটবৰ্ত্তী। গত দেড় শত বৎসর ধরিয়া সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম ভারত, বেলুচিস্থান ও আফগানিস্থানের বৈদেশিক বাণিজ্যের স্বাররূপে বিরাজ করিতেছে । লোক-সংখ্যা ২লক্ষ ১৭ হাজার। ইহাকে ভারতবর্ষের লিভারপুল বলে। করাচী প্রথম শ্রেণীর বন্দর এবং বন্দরসমূহের মধ্যে ৫ম স্থান অধিকার করিয়াছে । ১৮৪৩ খ্ৰীঃ ইংরাজের এই বন্দর অধিকার করেন ; সে-সময়ে এই বন্দরে বৎসরে ১২ লক্ষ টাকার কাজ হইত। ১৮৬৩ খৃঃ ৬৬৬ লক্ষ টাকার কারবার হয় । এই বন্দরে রেলের কারখান এবং ৩টি ময়দার কল আছে। করাচী শিল্প দ্রব্যের কেন্দ্র-স্থল ন হইলেও বহিব পিজ্যের প্রধান বন্দর। পোর্ট টাষ্টের ( Port Trust ) দ্বারা বন্দরের কার্য্য সম্পন্ন হয় । ১৮৮৭ খৃঃ পোর্ট ট্যুষ্টি স্থাপিত হয়। ট,াষ্টের সদস্ত-সংখ্যা ১১, করাচী বণিক-সভা এবং’ করাচা মিউনিসিপালিটি দ্বারা কয়েক জন সদস্ত নিৰ্ব্বাচিত হন, অবশিষ্ট গভর্ণমেণ্টের মনোনীত । ১৮৮৭–৮৮সালে এই বন্দরের আয় ৪৬৩৬৯৫ টাকা এবং ব্যয় ৫১১১৫৫ টাকা ছিল । ১৯১৭—১৮ খৃঃ আয় ৬৬৭৬৯৬৫, এবং ব্যয় ৫-৭৭২৪৫ টাকা : ১৯২২২৩ সালে আর ৬১৯ হাজার টাকা এবং ব্যয় ৬২৭২ হাজার টাকা হইয়াছিল। ১৯১৬ সালে ৮৷• লক্ষ টাকা ব্যয়ে বন্দরের কার্য্যালয় নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। ১৯২৪ সালে স্বয়েজ খাল দিয়া যে-সকল পণ্য-ফ্রব্য ইউরোপে রপ্তানী হইয়াছিল, তাহার মধ্যে গমের শতকরা ৪৫ ভাগ, এই করাচী বন্দর হইতে রপ্তানী হইয়াছিল। ১৯২৪ সালে ভারতবর্ষ হইতে যত গম রপ্তানী হইয়াছিল, তাহার শতকরা ৯৯ ভাগ করাচী হইতেই রপ্তানী হইয়াছিল। ভারতবর্ষ হইতে ১৯২২ সাল অপেক্ষা