পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] মোক্তার-বাবুর বোলচাল শুনে কনেষ্টবলদের দ্বিধা কেটে গেল। তাদের একজন বল লে—“মগৰ্ব আপ কা জামিন বৃহনে হোগা।" কাৰ্য্যসিদ্ধির আনন্দে মোক্তারবাৰু হাস্তে-হাসতে বললেন—“সে আর বেশী কথা কি ? আমিই জামিন রইলুম। দিন হাত-কড়া-খুলে’ ” পাগড়ীর ভিতর থেকে চাবি বের ক’রে একজন কনষ্টেবল আসামীর হাতকড় খুলে দিলে। মোক্তারবাৰু তার হাতে ছ’থান দশ টাকার নোট দিয়ে, আসামীকে সঙ্গে ক’রে খানিক নিয়ে গিয়ে, তার কানে-কানে কয়েকটি কথা বললেন। বেচারার মান মুখে হাসি ফুটে উঠল। দ্রুতপদে সে বাজারের দিকে চ’লে গেল । 8 ঢং ঢং ক’রে কাছারীর ঘড়িতে চারটা বাজল । উকিল মোক্তারেরা একে একে সবাই বাড়ী চ’লে যেতে লাগল। শুধু আমাদের মোক্তার-বাবুই ডেপুটার কাছারীর বারান্দায় নিশ্চিস্ত মনে পায়চারি ক’রে বেড়াতে থাকৃলেন । ডেপুটীর কছারী তখনও ভাঙেনি । সবে একটা কানকাটা মোকদ্দমার সওয়াল জবাব আরম্ভ হয়েছে মাত্র । ঠিকৃ এই সময়ে কনষ্টেবল দুজন হাফাতে ইফাতে এসে বললে—“বহুত ফ্যাসাদ হয়। হ্যায়, বাবু সাব। আসামী আবতকৃ আয় নেই।” বিস্ময়ের ভাণ ক’রে মোক্তার-বাবু বললেন—“আসেনি ! বেটী ত ভারি পাজি ! দ্যাথ ত একবার কাছারীর চার পাশ ঘুরে কোথায়ও বসে আছে কি না।” কনেষ্টবলের জানাল যে, কাছারীর চারধার ত তারা ভাল ক’রে খুঁজে দেখেছেই, তা বাদে বাজার, মাঠ, নদীর ঘাট প্রভৃতি সমস্ত স্থান তন্ন-তন্ন ক'রে তালাল ক'রে একেবারে হারান হয়েছে, কিন্তু কোথায়ও তার সন্ধান মেলেনি। একটু চিন্তিতভাবে মোক্তার-বাৰু বললেন—“আচ্ছা, পাইখানাটা দেখেছ—সেখানে ত নাই ?” পাইখানাটা দেখাই বাকী ছিল। তৎক্ষণাৎ কনষ্টবলের এক দৌড়ে পাইখানায় চলে গেল। দুই জনে চাবৃটে পাইখানা খুজে কোথায়ও কাকেও না পেয়ে নিরাশ হ’য়ে ফিরে এসে বললে— “কো-ই হায় নেহি ।” এইবার মোক্তার-বাবুর স্বরূপ প্রকাশ পেল। তিনি অমানবদনে বললেন—“তবে আর আমি কি কবুৰ ? নিজের জেল খাটগে এখন, যেমন কৰ্ম্ম তেমন ফল ।” কনষ্টেবল দুজন যেন একেবারে আকাশ থেকে পড়ল । সমস্বরে তারা বললে—“আবতো উস্ক জামিন’রহ থা!” কর্কশস্বরে মোক্তার-বাৰু বললেন—“তবে আর কি, জামিন হয়েছি ত একেবারে তোমাদের কাছে মাথা বিকিয়ে বসেছি। দ্যাখ, তোমরাও বাপু লোক সুবিধের নও । ধড়িবাজ \ుషి চারগণ্ডার পয়সা ঘুষের কথা শুনলে একেবারে চোদহাত লাফিয়ে ওঠ । পাচটার মধ্যে যে-আসামীর সাজা হবে, তাকে কিনা দশ টাকার লোভে দিলে ছেড়ে । সাবাস বুকের পাট তোমাদের! বলিহারি সাহস ! এখন আর আমি কি কবুব ? বাধ্য হয়ে সমস্ত কথাই ডেপুট-বাবুকে জানাতে হচ্ছে । তিনি যা ভাল বোঝেন করুন। মোদী তোমাদের বাবা রক্ষে নেই । চাকুরী ত যাবেই তার পরে দীর্ঘকাল সরকারী খোরাক পাওয়া আর ঐঘরে বসবাস একান্ত অনিবাৰ্য্য জেনে রেখো।" ব’লেই মোক্তার-বাৰু ডেপুটার কোর্টের দরজার দিকে অগ্রসর হলেন। দেখে কনষ্টবলের প্রমাদ গন্‌লে। তাদের একজন তাড়াতাড়ি গিয়ে তার হাত ধ’রে বললে—“হামলোককে একঠো বাত, শুনিয়ে বাবু সাব । কাম ত বহুত খারাবি হে গিয়া আভি একঠো সলাবাত লাইয়ে।” বিরক্তিপূর্ণস্বরে মোক্তারবাবু বললেন—“দূর মেডুয়াবাদী ! সলা বাত লাবার বুঝি আর সময়-অসময় নেই ? বেলা বাজে পাঁচটা—ক্ষিদেয় “ পেট চো চো কবৃছে—এখন খালি হাতে কে তোদের সলা বাতলায় রে?” মুখ কাচু মাচু ক’রে কনষ্টবলেরা বললে— “কুছ রুপেয়া লিজিয়ে।” - প্রস্তাবটা মুখরোচক হওয়ায় মোক্তার-বাৰু তখন তাদের সঙ্গে দরদপ্তর আরম্ভ করলেন। যদিও খোট্টার হাত থেকে টাকা বের করা খুবই সহজসাধ্য নয়, তবুও ঘটনা অত্যন্ত গুরুতর ব’লে মিনিট দশেক দর-কশাকশির পর নগদ ৪০ চল্লিশ টাকা তার পকেটে আসূল। এইবার হাসিমুখে তিনি বললেন—“আমি যা করতে বলব অসঙ্কোচে তাই করতে হবে কিন্তু-ভয় পেলে চলবে না—ইতস্ততঃ করলে কোন ফল হবে না।” কনষ্টেবলেরা জানাল যে, র্তার আদেশে আত্মরক্ষার জন্যে তারা বাঘের মুখে যেতেও পিছ-পাও হবে না। তাদের দৃঢ়তা দেখে মোক্তারবাবুর মুখখানাও প্রসন্ন হ’য়ে উঠল। টাকা কয়েকটা আবার ভাল ক’রে গুনে—পকেটে নিরাপদ স্থানে রেখে ধীরে-ধীরে তিনি কাছারীর বারান্দা থেকে নেমে চারদিকৃ পানে একবার সতর্কদূষ্টিতে চাইলেন। তার চোখে দুষ্ট হাসি ফুটে উঠল। হাতছানি দিয়ে তাদের দু’জনকে তিনি কাছে ডেকে নিয়ে বললেন—“ঐ যে পানের দোকানের কাছে তিনটে লোক দাড়িয়ে গল্প করছে, বেশ দেখতে পাচ্ছ ?” তৃারা বললে—“হুঁ হুজুর।” মোক্তার-বাৰু বললেন—“আচ্ছ, আর একবার ভাল ক'রে চেয়ে দ্যাখ ত, ওর মধ্যে যার সব-চেয়ে বয়স অল্প, তার চেহারার সঙ্গে তোমাদের পলাতক আসামীর চেহারার কতকটা মিল আছে কি না ?” কনষ্টেবল দুজন ভাল ক’রে দেখে চিন্তিত ভাবে বললে—“থোড়া।” মোক্তার-বাবু বললেন–আচ্ছ, থোড়া হ’লেই চলবে। এখন দুজন গিয়ে যত শিগগির