পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$ore পার ঐ লোকটাকে হাত-কড়ি লাগাও। ক্লারো কথা শুনে ভড়কে যেও না। আজকের মতন বেত টা ওরই হ’য়ে যাক্ । শোনো, গেরেপ্তার ক’রে আন চাই-ই। নচেৎ নিজেদের অদৃষ্টে যা আছে তাত বুঝতেই পাৰ্বছ। একবার গেরেপ্তার করতে পারলে আর কোনো ভয় নেই। তোমাদের রক্ষার ভার আমি নিলুম—যাও ।” কনষ্টবলের নিজেদের সমূহ বিপদাশঙ্কায় একেবারে কাণ্ডাকাগুজ্ঞান বিবর্জিত হ’য়ে পড়েছিল। তাই অার দ্বিরুক্তি না ক’রে সটান গিয়ে মোক্তার-বাবুর দেখানো লোকটির ঘাড়ে বাঘের মতন লাফিয়ে পড়ল এবং সে বেচারা আত্মরক্ষার্থ প্রস্তুত হবার আগেই তারা তাকে ঘাড় ধ'রে মাতে মাৰ্বতে তফাতে নিয়ে এসে পিছমোড়া ক’রে হাতকড়া লাগাল । তার সঙ্গের লোক দুটি এবং কাছারীতে যারা তখনও হাজির ছিল, সকলে এক সঙ্গে মিলে কনষ্টেবলদের ঘিরে হৈ চৈ করতে লাগল। কনষ্টেবলেরাও চারিপাশের লোকগুলোকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগালি করতে আরম্ভ করলে। অনেকে অনেকবার “ব্যাপার কি ?” এই কথা জিজ্ঞাসা করায় কনষ্টেবলের জানাল যে যাকে এই মাত্র গেরেপ্তার করা হয়েছে সে হচ্ছে বেতের আসামী। পাজি এতক্ষণ প্রস্রাব করার নাম ক’রে পালিয়েছিল। তাকে খুজতে তারা “বহুত তকৃলিফ” পেয়েছে। এখন তাকে আর তারা কিছুতেই ছাড়বে না। ডাগু মাৰ্বতে মারতে একেবারে নাস্তানাৰুদ ক’রে ফেলবে। আগাগোড়া যারা জানে না এবং আদিত আসামীকেও চেনে না তারা বেশ হয়েছে বলে’ এক এক ক’রে স’রে পড়তে, লাগল, তার সঙ্গের লোকদুটি কিন্তু কিছুই বুঝতে না পেরে বিস্ময়ে অবাক হ’য়ে দাড়িয়ে রইল। ব্যাপার দেখে বহুক্ষণ তাদের বাক্যক্ষুক্তি হ’ল না। অবশেষে বিস্ময়ের ভাবটা কতক কেটে গেলে তারা বললে—“দ্যাথ পাহারাওয়ালা সাহেব, তোমাদের পায়ে পড়ি—একে ছেড়ে দাও, এ কথখনো তোমাদের বেতের আসামী নয় । তোমরা ভুল ক’রে একে ধরেছ। আমাদেরই সঙ্গে এলোকট। গরু কিনতে এসেছিল । এখানকার বাজারের অনেকে একে চেনে— না হয় তাদের ডেকে জিজ্ঞাসা কর। দোহাই তোমাদের নির্দোষীর সাজা হ’তে দিও না।” কনষ্টেবলের চুপ ক’রে থাকৃল। যাকে গেরেপ্তার করা হয়েছিল সে বেতের নাম শুনে ভয়ে চীৎকার ক’রে উঠল। চীৎকার শুনে একজন কনষ্টেৰল মাথা থেকে পাগড়ী খুলে ধ। ক'রে তার মুখ বেঁধে ফেললেশ-অঙ্কজন একটা চড় মেরে বললে— ‘ “চিয়াও মাৎ উৰুক।” - ঠিক মসএই র মোক্তার-বাবু এসে বললেন—“কিসের প্রবাসী-শ্রাবণ, ১৩৪৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড গোল হচ্ছে এখানে ? শিগগির আসামীকে নিয়ে না, বেতের সময় হয়েছে।” তাকে দেখে নতুন আসামীর; সঙ্গের লোকছুটা বললে—“দেখুন মোক্তার-বাৰু কাগুট, খামাখ। এই লোকটাকে এরা ধ’রে নিয়ে এসেছে—এত * বলছি বিছুতেই শুনছে না।” মোক্তার বাবু বললেন“সরকার বাহাদুর কাউকে খামাখা ধরেন না। খামাথ । ধ’রে থাকে তোমরা আরজী দাখিল কর।” তারা বললে— “মারে মশাই, আপনি জানেন না তাই বলছেন আমাদের সার্থীটি একেবারে নির্দোষ।” মোক্তার-বাৰু বললেন“বেশত, নির্দোষ হয় দরখাস্ত করে সে-কথা । ডেপুটী-বাবুকে জানাও।” তার বললে—“আপনি বলছেন এখনি বেত হবে—সে-কথা সত্যি হ’লে | আর দরখাস্ত দিয়ে কি করব।” মোক্তার বায়ু বললেন—“তোমরা দরখাস্ত করার আগে যদি বেত হয়েই যায় তাহ’লে না হয় আপীল করে ।” তারা জিজ্ঞাসা কবুলে—“বেতের আবার আপীল কি, মোক্তার-বাৰু ?” মোক্তার-বাবু চ’টে বললেন—“সে আমি জানি না । যাe যাও, তাড়াতাড়ি আসামীকে নিয়ে যাও।” আসামীকে নিতান্তই নিয়ে যেতে দেখে লোক দুটো ব্যগ্রস্বরে বললে—“একটু থাম—আচ্ছা মোক্তার-বাবু, ডেপুট বাৰু ত এখনও কোটেই রয়েছেন, আপনি তাকে মুখে দুটো কথা ব’লে, আজকের মতন বেতটা স্থগিত করিয়ে দিন না ?” মোক্তার-বাবু বললেন—“এর নাম বব ফৌজদারী হাকিম—আসল বাঘের বাচ্ছা । এর কাছে আমি মুথে কোন কথা বলতে পারব না। তবে যদি উপযুক্ত ফী দাও তা হ’লে এখনই আরজী লিখে পেশ করিয়ে দিতে পারি। এ হচ্ছে খাটী গভর্ণমেণ্টের আমল বিনা পয়সায় এখন কিছু হয় না। বেত ত দূরের কথাতোমাদের সার্থীটির যদি বিনা কারণে মাথাও কেটে ফেলে, তবুও উপযুক্ত কোর্টফী না দিলে গভর্ণমেণ্ট সে কথা শুনবেন না। যাও, শিগগীর কাগজ-পত্তর কিনে নিয়ে এস—আর গোটা দশেক টাকা অামার কাছে রেখে যাও। অসময়ে কাজ কিনা, দু’চার টাকা হয়ত কৌশলী খরচ লাগলেও লেগে যেতে পারে।” o লোক দুটো দশটি টাকা মোক্তার-বাবুর হাতে দিয়ে দৌড়ে ষ্ট্যাম্প-বিক্রেতার সন্ধানে চ’লে গেল । উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটতে ছুটতে ষ্ট্যাম্প-বিক্রেতার দোকানে পৌছে শুনলে যে, সে বাড়ী চলে গেছে। বাড়ীও আবার সেখান থেকে অধি মাইল দূরে। আর এক মুহূৰ্ত্তও অপেক্ষা না ক’রে তার আবার তার বাড়ী-মুখে ছুট দিলে। ষ্ট্যাম্প-বিক্রেতার বাড়ী থেকে ডবল দাম দিয়ে কাগজ কিনে নিয়ে গলদঘর্ণ হ’য়ে যখন তারাও হাকাতে হাফাতে ফিরে এল, তখন প্রায় সন্ধ্যা হ’য়ে গেছে । তারা এসে