পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] পূজার শাড়ী ፃ9ፃ ভদ্রলোকের হাতে টাকাকড়ি কিছুই নেই, স্ত্রীর চিকিৎস। শুদ্ধ করাতে পারছেন না। তাই এখান আবার ফিরিয়ে এনেছেন, যদি অল্প দামেও কেউ কেনে । এটা আমরা আবার ইস্ত্রি করিয়ে নিয়েছি, কেউ দেখলে বুঝবে না যে, এট। পরা হয়েছে।” অনিল পঞ্চাশটা টাকা ফেলিয়া দিয়া শাড়ীখানি ভাল করিয়া পাট করাইয়া কাগজে মুড়িয়া লইয়। বাহির হইয়া চলিল। দোকানের লোকটি তfহার পিছন পিছন আসিয়া বলিল, “অনুগ্রহ ক’রে আপনার ঠিকানাট। রেখে যান ।” অনিল অবাক হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ?” “সেই ভদ্রলোকটি অনেক ক’রে ব’লে গিয়েছেন । বেচারা মহা বিপদেই পড়েছেন । ঠিকানাটা দিয়েই যান মশায়, আপনার তাতে কোনো ক্ষতি হবে না।” অনিল ঠিকানা দিয়া এতক্ষণ পরে সত্যই সত্যই দোকান ছাড়িয়া বাহির হইল এবং বাড়ীর দিকে চলিল । তখন প্রায় রাত্রি হইয়া আলিয়াছে, রাস্তায় রাস্তায় গ্যাসের আলো জলিয়া উঠিতেছে। বাড়ী অাসিতে-অসিতে কল্পনার চোখে সে কেবল স্বষম্যর মুখই দেখিতে লাগিল । শাড়ী পাইয়া না জানি তাহাৰু মুখের চেহারা কিরূপ হইবে। বাড়ীর কাছে আসিয়া দেখিল, অত্যন্ত উদ্বিগ্ন মুখ করিয়া স্বযমা দরজ। ধরিয়া দাড়াইয়া আছে। তাড়াতাড়ি তাহার কাছে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হয়েছে গেী ? অমন ক’রে দাড়িয়ে আছ কেন ?” স্বধৰ্মা শুষ্ক মুখে বলিল, “লীলার জর হয়েছে।” মেয়ের অম্বখ হওয়ায়, সে ভয়ে নিজেদের ঝগড়া-ঝাটি সবই ভুলিয়া গিয়াছে। অনিল ভিতরে আসিয়া দরজা বন্ধ করিতে করিতে বলিল, “সকালে ত তাকে ভালই দেখে গেলাম ?” “দুপুর-বেলা থেকে তার জর এসেছে। আর বছর ঠিক এই সময়েই পুটুটাও আমাদের ছেড়ে গেল,” এইটুকু বলিয়াই স্বযম কাদিয়া ফেলিল । বেচার অনিলের বুকটা যেন দমিয় গেল। কাপড় ছাড়িতে, জুতা খুলিতেও তাহার যেন ক্ষমতা রহিল না। কোনোরকমে জামা-জুতা ছাড়িয়া সে গিয়া লীলার পাশে বধিল। সে তখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে, জরের তাপে তাহার ফুলের মতন মুখখানি শুকাইয়া উঠিয়াছে। অনিল তাহার পাশে বসিবামাত্র সে ধীরে ধীরে চোখ খুলিয়৷ তাকাইল । তৎক্ষণাৎ বিছানায় উঠিয়া বসিয়া বলিল, “বাবা, আমার সিস্কের ফ্ৰক এনেছ ?” “এনেছি মা,” বলিয়া অনিল তাড়াতাড়ি কাপড়ের পুটুলি খুলিতে আরম্ভ করিল। লীলা তাড়াতাড়ি তাহার হাত হইতে সেটা ছিনাইয়ু লইয়। খুলিয়া ফেলিল । ফ্রকট। তাহার চোখে পড়িবামাত্র সে চীৎকার করিয়া উঠিল, “ওম, কি স্বন্দর । মা, মা, শীগগির এসে দেখ, বাবা আমার জন্তে কি মুন্দর জামা নিয়ে এসেছেন।” লীলার ডাকে ছুটিয়া আসিয়া সুষম ডাকের কারণ জানিয়া হাসিয়। ফেলিল । ভয়ের আঁধারট। এই হাসাহাসির মধ্য দিয়া খানিকট যেন কাটিয় গেল। অনিল এতক্ষণ পরে ইফি ছাড়িয়া বাচিল, স্বয মার শাড়ীর বাণ্ডিলটা আনিয়া স্বযমার হাতে দিয়া বলিল, “এইট। লীলার মায়ের জন্যে এনেছি।” ফুষমার তখন চোখে জল, মুখে হাসি। ছেলে-পিলের ম৷ হইলেও তাহার নিজের বাল্যকাল তখনও ভাল করিয়া কাটে নাই। কাজেই শাড়ী পাইয় তাহার যে আনন্দ হইল, তাহ লীলার আনন্দের চেয়ে নিত্যস্ত কম নয়। “চমৎকার শাড়ীটা ত!” বলিয়াই কিন্তু তাহার মনে পড়িয়া গেল যে, সে এখন সংসারের গৃহিণী, এসকল অপব্যয়ের প্রশ্রয় দেওয়া তাহার উচিত নয়। গম্ভীর হইবার চেষ্টা করিতে করিতে বলিল, “কত দিতে হ’ল এটার জন্যে ?” অনিল বলিল, “ও, সে বলতে অনেক সময় লাগবে, অামায় আগে চা দাও।” চা খাওয়া ইত্যাদি চুকিয় গেলে সে আস্তে আস্তে স্বযমাকে সব কথা খুলিয়। বলিল। স্বযমা নাক সিটুকাইয়। বলিল, “ওমা, তবে কিনলে কেন ? অন্যের পর জিনিষ কি কিন্‌তে আছে ? এর চেয়ে সস্ত দামের নতুন জিনিষও ভাল। সেই মেয়েমানুষটি নিশ্চয়ই এই শাড়ীটার জন্যে দুঃখ করছে। এটা পরে আমি কখনও শাস্তি পাব না।” সকালে লীলার জর বাড়াতে তাহার শাড়ীর কথা এ