পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] স ভবস্ত আপদং ডমরং অবধূত-নিখিল-নৃপং (যথা তথা ) করপল্লব-লীলয়া অলাবীৎ | ইহার অনুবাদ—রাম-পক্ষে-- (ক) অতুল-পরাক্রম রামচন্দ্র জনক রাজার সন্তোষ বিধান-সহকারে নিখিল নৃপতিবৃন্দের পরাভব উৎপাদন করিয়া নিজ করপল্লবলীলাক্রমে অতিশীঘ্র মহাদেবের শরাসন-দণ্ড ছিন্ন করিয়া বা ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন । রামপাল-পক্ষে— (খ) আরও,—প্রভূত-ধনশালী রামপাল প্রজাজনের প্রীতিবৰ্দ্ধন-সহকারে ( বা রক্ষণ-সহকারে ) নিখিল নৃপতিবৃন্দের পরাভব উৎপাদন করিয়া নিজ করপল্লবচেষ্টায় ( অস্ত্রাদির প্রয়োগে ) সংসারের আপদ-স্বরূপ উপপ্লব ( বা বিদ্রোহ = মর ) দমন করিয়াছিলেন । রামপাল পক্ষে যে-অনুবাদ প্রদান করা হইল—ইহার একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন হইতেছে। দুর্ণয়-পরায়ণ দ্বিতীয় মহীপালের ক্রিয়াকলাপে প্রজাবর্গের বিরাগ ও অসন্তোষই স্বরেক্সে একাদশ-শতাব্দীর কৈবৰ্ত্ত-বিদ্রোহের মূল কারণ। মহীপাল নিহত হুইবার পর—কৈবৰ্ত্ত-নায়ক দিব্য বা দিকেবাকের ভ্রাতুপুত্র ভীম বরেন্দ্র অধিকার করিয়া বসিয়াছিলেন । তখন মহীপালের কনিষ্ঠ ভ্রাতা পাল-নরপাল রামপাল চেষ্টা করিতে লাগিলেন কিরূপে কৈবৰ্ত্ত-প্রজাগণের এই বিদ্রোহ বা বিপ্লব দমন করিয়, তাহীদের নায়ক ভীমের হস্ত হইতে “জনক-ভূ” ( = জন্ম-ভূমি ) বরেন্দ্রের উদ্ধার সাধন করিবেন । রামপাল যখন দেখিলেন যে, তাহার সৈনিকগণ “বিদ ঈহান” ( ১২৬ }—“বোধসহকারে চেষ্টমান” অর্থাৎ বিমূৰ্য্যকারী, তখন র্তাহার মনে বড়ই বল বাড়িতে লাগিল। এইরূপ বিবরণের পরেই সন্ধ্যাকর নন্দী আলোচ্য শ্লোকে মোটামুটি-হিসাবে লিখিলেন–রামপাল অস্ত্রাদিপ্রয়োগে এই বিদ্রোহ দমন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন । তার পর পরবর্তী পরিচ্ছেদগুলিতে কবি বর্ণনা করিলেন–রামপাল যুদ্ধ করিতে ইচ্ছুক ও প্রবৃত্ত হইয়া কি উপায়ে পিতৃরাজ্যের সামন্তরাজচক্র একত্রিত করিয়াছিলেন এবং কেমন করিয়া পরমশত্র বরেন্দ্র কৈবর্ত-নায়ক ভামের রাজধানী aసి ভীমের বধান্তে পুনরায় বরেন্দ্ৰ-ভূমি স্বাধিকারে আনিতে পারিয়াছিলেন । এই আলোচ্য শ্লোকের পরবর্তী শ্লোকসমূহেও আমরা কবিকে যুদ্ধের আয়োজনমাত্র সম্বন্ধে বর্ণনা করিতে দেখিতে পাই—যুদ্ধ ত আরো অনেক পরে ঘটিবে বলিয়া বর্ণিত। এমন-কি, পিতা তৃতীয় বিগ্রহপালদেবের পরলোক-প্রাপ্তির পর, মহীপাল কি প্রকারে “অনীতিকারম্ভ রত’ ( ১।৩১ ) (== নীতিবিরুদ্ধ-ক্রিয়ারত ) হওয়ায়, বরেন্দ্রের দুর্দশা আরম্ভ হয়—তাহারও বর্ণনায় কবি আলোচ্য শ্লোকের কিছু পরে প্রবৃত্ত হইয়াছেন । কিন্তু বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের মতে দেখা যাইতেছে যে, এই প্রথম পরিচ্ছেদের সপ্তবিংশতি-সংথ্যক শ্লোকেই তিনি “যুদ্ধান্তে” রামপাল-কর্তৃক “ভীমের রাজধানী ডমর-নগরের ধ্বংসের” উল্লেখ পাইতেছেন। পূর্বেই অভিহিত হইয়াছে —কবি যুদ্ধবর্ণনা আরও অনেকট। পরে করিয়াছেন এবং আলোচ্য শ্লোক পৰ্য্যন্ত প্রকৃত যুদ্ধের কোন কথাই উল্লিখিত নাই । আর ও দ্রষ্টব্য যে, সন্ধ্যাকরের ন্যায় এত বড় কবি কখনই অযোধ্যাধিপতি রামচন্দ্রের গৌড়াধিপ রামপালের চরিতকথার ঘটনাবলীর বর্ণনায় ক্রমভঙ্গ-দোষে দোষী হইতে পারেন না । উদ্ধতশ্লোকে দাশরথি রামের পক্ষে প্রযুজ্য অর্থেও আমরা দেখিতেছি—সবে মাত্র রাম হরধনুৰ্ভঙ্গ করিয়৷ “জনক-ভূ” সীতাদেবীর পানিগ্রহণে কৃতকৃত্য হইতে চলিতেছেন । এই “জনক-ভূ”র হরণের পর রাবণ-বধ ত তখনও কত দূরের কথা ! স্বতরাং এস্থলে “যুদ্ধান্তের” কোন কথাই হইতে পারে না । ভীমের বধের পর, “রামচরিতের” তৃতীয় পরিচ্ছেদে আমরা রামপালকে রামাবতী-নামে একটি নগরের পত্তন করিতে বর্ণিত দেখিতে পাই । তাহাতেও আমরা ভীম-কর্তৃক নিৰ্ম্মিত কোন পুর বা উপপুরের ধ্বংসাবশেষের উপর রামপালকে রামাবতী নগর প্রতিষ্ঠা করিতে দেখিতেছি না । এখন দেখা যাউক, ভীমের রাজধানী বলিয়া “ডমর”নামক কোন নগরের অস্তিত্ব আদেী ছিল কি না ? কৈবৰ্ত্ত-বিদ্রোহ-সময়ে ভীম যে কোন নগর স্থাপন করিয়াছিলেন রামচরিতের কোন স্থানেই আমরা তাহার প্রমাণ সংগ্ৰহ করিতে সমর্থ হই মাই । ভীম যে বরেন্দ্র অধিকার