পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] শিক্ষাদান যে বয়স্থগণকে শিক্ষাদান অপেক্ষা অনেকাংশে কঠিন ইহা পাশ্চাত্যগণ বুঝেন। কিন্তু আমাদের দেশে শিশুপাঠ্য পুস্তক লেখার অপেক্ষা সহজ কাজ বুঝি আর কিছুই নাই। অপরাপর লেখকগণের লেখা পুস্তক হইতে “প্ৰতরুখান” “ঈশ্বর-বন্দন|” “সত্যবাদিতা” “জীবে দয়।” প্রভৃতি কয়েকটি বিষয়ে কিছু কিছু নকল করিয়া, রাজ। পঞ্চম জর্জ গবর্ণর জেনারল, তাজমহল, হাজী মহম্মদ মহসীন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রভৃতির ছবি দিলেই বঙ্গদেশের ইংরেজী বা বাঙ্গল স্কুলপাঠ্য হইয় গেল । কেবল সম্রাটের ছবিটি ত্রিবর্ণে হওয়া নিতান্ত প্রয়োজন, আর যদি গ্রন্থকারের নামের সঙ্গে "সহ-গ্ৰন্থকার” ভাবে একটি ইংরেজের নাম থাকে তবে ত’ সোনায় ( 1 পাশ্চাত্য দেশের স্কুলপাঠ্য পুস্তকগুলি দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, সেগুলি graduated অর্থাৎ প্রথম ভাগ অপেক্ষা দ্বিতীয় ভাগ কিছু কঠিন, দ্বিতীয় অপেক্ষ তৃতীয়, তৃতীয় অপেক্ষ চতুর্থ এইরূপ কঠিন এবং ক্রমে নূতন নূতন বিষয়ের সমাবেশ। আমাদিগের বিদ্যালয়-সমূহে এক শ্রেণীতে মেক্‌মিলানের পরের শ্রেণীতে লংম্যানের ও তৎপরের শ্রেণীতে আবার আর-এক তৃতীয় ব্যক্তির বহি পাঠ্য নির্ণয় করায় এই তিনটি গ্রন্থকারের লক্ষ্যই ব্যর্থ য় । শিশু-শিক্ষায় এইরূপ graduated পাঠ্য যে কত প্রয়োজন তাহা আমাদিগের গ্রন্থকারগণের বুঝিবার শক্তি নাই এবং স্কুলকর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে অবিবেচনার ফলে অনেক সময় দেখা যায়, যে উচ্চ শ্রেণীর পাঠ্য অপেক্ষা নিম্ন শ্রেণীর পাঠ্য অনেকাংশে কঠিন। পূর্বেই বলিয়াছি যে, ইংরেজি ও বাঙ্গলা সাহিত্যের (?) পাঠ্যগুলির অনেকগুলিই অপরাপর লেখকগণের রচনার সঙ্কলন মাত্র । কিন্তু শিক্ষকগণ গ্রন্থকারের সঙ্কলনে তুষ্ট নহেন, তাহারা নিজের আবার পাঠ বাছাই করেন। একখানি পুস্তকে হয়ত কুড়িটি গদ্য ও কুড়িটি পদ্য পাঠ আছে, তাহার মধ্যে প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম এইরূপ বাছাই করিয়া এক শ্রেণীতে আটটি গদ্য ও আটটি শিশুপাল-বধ Rసిసి পদ্য পাঠ পড়ান হইল, অবশিষ্ট চব্বিশটি পাঠ বাদ দেওয়া হইল বা সময়ের অভাবে বাদ পড়িল । এক-একখানি বহি পর পরদুই শ্রেণীতে সম্পূর্ণরূপে পড়াইলে ছাত্ৰগণের উপকার কি অপকার হয় তাহা পাঠকগণ বিবেচনা করিবেন। এইসকল দেখিয়া বেশ বুঝিতে পারা যায় যে, স্কুলকর্তৃপক্ষগণ পুস্তক-নিৰ্ব্বাচনকালে সেগুলি আদৌ পড়িয়া দেখেন না। কেবলমাত্র গ্রন্থকারের বা প্রকাশকের আমুরোধ উপরোধে পাঠ্য-নিৰ্ব্বাচন করিয়া থাকেন। বিলাতী শিশুপাঠ্য পুস্তকগুলি দেখিলে চক্ষু জুড়ায় ; কাগজ, ছাপা, ছবি, বাধা, সবই স্বন্দর । আমাদের দেশের পাঠ্য পুস্তকগুলির কাগজ নিকৃষ্ট, ভাঙ্গ টাইপে ছাপা সমস্ত অক্ষরগুলির ছাপ উঠে না, ছবি অস্পষ্ট, প্রায় সকল বইগুলিই এমন ভাবে সেলাই কর। যে খুলিয়া রাখা যায় না,এবং শিশুদের হস্তে দুইচারিদিনেই পাতাগুলি বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। যেগুলি খুলিয়া রাখা যায় (যথা পাটীগণিত) তাহাদেরও সেলাই এত মন্দ ও মলাটের সহিত যোগ এত সামান্য যে, একথাব গত হইতে পড়িয়া গেলেই পাতাগুলি একস্থানে ও মলাট অন্যত্র গমন করে। মূল্য কিন্তু বিলাতী বইএর তুলনায় বেশী ভিন্ন কম নহে। অবশ্ব উত্তরে বলা যাইতে পারে, এসকল বহি এক বৎসর চলিলেই হইল ; কিন্তু এক বৎসরই ভালভাবে চলিলে ক্ষতি কি আছে ? এইরূপ ত পাঠ্য-নিরূপণ, এখন পঠন-সম্বন্ধে আরও দুই-একটি কথা বলা প্রয়োজন । আজকাল স্কুলগুলি কলেজে পরিণত হইয়াছে। স্কুলেও লেক্চার দেওয়া হয় ও পড়া “ধরা” ছয় মাত্র ; নূতন পাঠ বুঝাইয়া দেওয়া, শব্দার্থ বলিয় দেওয়া উঠিয়া গিয়াছে, সে-সকল কাৰ্য্য পিতামাতা বা অভিভাবকের কৰ্ত্তব্য ধার্ঘ্য হইয়াছে। অধিকাংশ পিতামাতা ও অভিভাবকই নানা কারণে পুত্রকন্যাকে নিজে পড়াইতে পারেন না। স্বতরাং অসাধ্য হইলেও পুত্রকষ্ঠার গৃহ-শিক্ষক নিযুক্ত করিতে হয়। তাই আজকাল গৃহ-শিক্ষক বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ পড়াইতেছেন ইহাও দেখিয়াছি, অথচ সে-শিশু স্কুলের ছাত্র !