পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃত্যু-দূত সেলমা লাগরলফ, পঞ্চম পরিচ্ছেদ মৃত্যু-সম্ভাষণ মৃত্যু-শয্যায় শায়িত সিসটার ঈডিথ সভয়ে অনুভব করিল ধীরে ধীরে তাহার জীবন নিঃশেষিত হইয়। আসিতেছে । তাহার শারীরিক কোন যন্ত্রণ ছিল না বটে, কিন্তু মৃত্যুর কবল হইতে আত্মরক্ষা করিতে সে প্রবল চেষ্টা করিতেছিল ; রোগীর সেবায় রাত্রি জাগিতে গিয়া ঘুমের সহিত সে ঠিক এমনই যুদ্ধ করিত। ঘুম দূর করিবার জন্য মাঝে মাঝে তাহাকে উদেশ করিয়া সে বলিত--তোমার প্রলোভন খুব মধুর সন্দেহ নাই, কিন্তু আমি লোভ কাটাইয়া উঠিব। কচিং কখনো দু’ এক মিনিটের জন্য সে ঘুমে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িত, কিন্তু চিন্তাভারাক্রান্ত মনে অবিলম্বে জাগিয়া উঠিয়া আপনার কৰ্ত্তব্যে মন দিয়াছে : আজ মৃত্যু-শয্যায় শুইয়া সে কতরকমের কল্পনা করিতে লাগিল । খুব ঠাণ্ডা একট। ঘর, তাহাতে একটি চওড়া পুরু বিছানা পাতা, পালকের মত নরম বালিশ, তুষার-শীতল বিশুদ্ধ হাওয়া অবাধে ঘরে প্রবেশ করিতেছে— নিশ্বাস লইতে তাহার আর কোনো কষ্ট নাই ; অপরিসীম আনন্দে তাহার হৃদয় ভরিয়া উঠিয়াছে। এই ঘরে এই লোভনীয় শয্যায় শুইয়া প্রগাঢ় ঘুমে মগ্ন হইয়া দেহের ক্লান্তি দূর করিতে সে ব্যাকুল, কিন্তু তাহার ভয় হইতেছে পাছে তাহার এই মুখনিদ্রা না ভাঙ্গে । তাই আজিও সে ঘুমের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে লাগিল। নিশ্চিন্ত হইয়া শান্তি ভোগ করিবার সময় এখনো তাহার আসে নাই। ঘরের চারিদিকে চাহিয়া ঈডিথ ক্ষুব্ধ হইল ; তাহার মুথে ব্যর্থ অঙ্কযোগের ভাব ফুটিয়া উঠিল, তাহাকে, অধিকতর উগ্র দেখাইতে লাগিল। তাহার দৃষ্টি যেন বলিতে লাগিল,—তোমরা কি নিষ্ঠুর ! আমার ঐকাস্তিক প্রার্থনা পূর্ণ করিবার কোন চেষ্টাই তোমরা করিতেছ না। আমি যখন সুস্থ ছিলাম তখন বহুবার অসময়ে তোমাদের কাজে বাহির হইয়াছি ; আমি যাহাকে একবার শেষ দেখ। দেখিতে চাই তাহাকে তোমরা এখনো আনিতে পারিলে না । সে নির্মীলিত-নেত্রে কিসের যেন প্রতীক্ষায় জাগিয়া ছিল ; এমনি নিবিষ্টচিত্তে কান পাতিয়া ছিল যে, ঘরের ভিতরকার সামান্ত শব্দও সে স্পষ্ট শুনিতেছিল । সহসা তাহার মনে হইল পাশের ঘরে কোনো আগন্তুক প্রবেশ করিয়াছে ও তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য সেখানে অপেক্ষা করিতেছে । চকিতে চক্ষুরুন্মালন করিয়া কাতরভাবে তাহার মায়ের দিকে চাহিয়া সে বলিল, “ও যে রান্নাঘরের দরজার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে মা, ওকে এখানে নিয়ে এসোনা ।” মা উঠিয়া মাঝের দরজা খুলিয়া বাহিরের ঘরের দিকে চাহিলেন । কাহাকেও দেখিতে না পাইয়া তিনি ফিরিয়া আসিয়া মাথা নাড়িয়া বলিলেন, “ওঘরে ত কেউ আসেনি ম, শুধু সিস্টার মেরী আর গুস্তাভসন ওখানে বসে আছে ।” - রোগিনী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়। আবার চক্ষু মুদ্রিত করিল। কিন্তু, তাহার তখনও মনে হইতেছিল যেন ঠিক দরজার পাশে বসিয়া কে অপেক্ষা করিতেছে। যদি তাহার জাম-কাপড়গুলি বিছানার কাছাকাছি তাহার নাগালের মধ্যে থাকিত তাহা হইলে সে নিজে গিki তাহার সহিত কথা বলিত। মাকে কিছু বলিতে তাহার ভরসা হইতেছিল না ; তিনি কিছুতেই তাহাকে উঠিতে দিবেন না । অসহায় অবস্থায় শুইয়া-শুইয়া সে বাহিরের ঘরে - যাইবার উপায় চিন্তা করিতে লাগিল ; অন্ততঃ সে । একবার ঘরখানি দেখিয়া আসিবে। তাহার দৃঢ় বিশ্বাস