পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] নিজাম এসকল বিষয়ে কি করিতেছেন অথবা এসকল খবর কতদূর সত্য সে-বিষয়ে আমরা কিছু বলিতে পারি না ; তবে যদি এসকল খবর সত্য হয় তাহা হইলে কয়েকটি কথা বলা যায় । নিজামের রাজ্যে যে-সকল অবিচার, অনাচার, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদির কথা উঠিয়াছে সেরূপ অবস্থা বা তদনুরূপ অবস্থা কি বৃটিশ ভারতে খুজিলে পাওয়া যায় না ? বৃটিশ ভারতে কি সৰ্ব্বক্ষেত্রে চাকুরী দান, চাকুরী হইতে বরখাস্ত করণ, করদাতার করের পরিমাণ, পদস্থ লোককে নিৰ্ব্বাসন প্রভৃতি আদর্শরূপে নিদিষ্ট ও নিৰ্ব্বাহিত হয় ? যদি দেখা যায় যে, বৃটিশ ভারতেও শাসনকাৰ্য্য উত্তমরূপে সম্পন্ন হয় না অর্থাৎ উপযুক্ত লোকে চাকুরী পায় না, অনুপযুক্ত লোকে চামড়ার বর্ণের জোরে অথবা অন্য উপায়ে চাকুরী পায়, পদস্থ ব্যক্তিগণ বিনা বিচারে ও অকারণে সম্পূর্ণ বা আংশিকৰূপে স্বাধীনতা হারায় এবং বৃটিশ গভর্ণমেণ্ট, ভারতবর্ষের অর্থ ভারতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যবিবর্জিত পস্থা অমুসরণে ব্যয় করেন ; তাহা হইলে আমরা কি করিব ? লীগ অফ নেশন্‌স অথবা অন্য কাহাকেও ভারতের শাসন-কার্য্যের উপর একটি কমিশন বসাইতে অনুরোধ করিব অথবা বৃটিশ কৰ্ম্মচারীদিগকে অপর জাতীয় “রেসিডেণ্টের” পরামর্শ গ্রহণ করিবার ব্যবস্থা করিতে বলিব ? কিম্বা বৃটিশ ভারতে রাজকৰ্ম্মচারীদিগের মধ্যে ষে-জাতীয় লোক অধিক তাহাদিগের মধ্যে অনেককে বরখাস্ত করিয়া অপর জাতীয় কৰ্ম্মচারী নিয়োগকেই আমরা আদর্শ প্রতি কার মনে করিব ? আমরা নিজামের রাজ্যশাসন-প্রণালীর যেরূপ বর্ণনা সম্প্রতি শুনিয়াছি তাহাতে আমাদের উক্ত শাসনকৰ্ত্তার প্রতি শ্রদ্ধা কিছুমাত্র বৃদ্ধি পায় নাই। নিজামের অবিলম্বে নিজরাজ্যে ন্যায় ও শৃঙ্খলা আনয়ন করা উচিত এবং তাহার দরিদ্র ভারতবাসীর অর্থে “ইসলাম” সংক্রান্ত কোন বিষয়ের উন্নতির প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বন্ধ করা অবিলম্বে ও একান্ত প্রয়োজন । কিন্তু যিনি নিজামের বিচারক তাহারও উচিত আত্মদোষ দূরীকরণ । মসজিদের নিকটে বাজনা বাংল। দেশস্থ মুসলিম লীগের অনারারী সম্পাদক ঐযুক্ত কুতুবুদিন আহমেদ মসজিদের সম্মুখে বাজনা বাজান সম্বন্ধোযে-মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন তাহা সকলের পাঠ করা উচিত। যে অর্থহীন বিষয় লইয়া বাংলার হিন্দু-মুসলমানে এত বিবাদ তাহার বিপক্ষে যে আহমেদ মহাশয় সাহস করিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন ইহাতে তাহার গৌরব বুদ্ধি হইয়াছে। তাহার স্কায় সৎসাহস বিবিধ প্রসঙ্গ—মসজিদের নিকটে বাজনা Ն8ծ আরও অন্যান্ত বাঙালী মুসলমানগণ দেখাইলে এই পশ্চিম হইতে আমদানী করা কলহ বাংলা দেশে অধিক কাল থাকিবে না। শ্ৰীযুক্ত আহমেদের মতে মসজিদের সম্মুখে বাজনা বাজান হইবে কি না এ প্রশ্নটি সম্প্রতিই উঠিয়াছে। পূৰ্ব্বে মুসলমানগণ এই ব্যাপার লইয়া কিছুমাত্র মাথা ঘামাইত না। হিন্দুদিগের নিকট সকল পূজা ও উপাসনার স্থান পবিত্র এবং তাহারা চিরকাল মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধ ও অপরাপর ধর্মের উপাসনা-স্থলের সম্মুখে বাজনা থামাইয়া আসিয়াছে—কাহারও অঙ্গরোধে নহে; আপন হইতেই। এখনও অনেক হিন্দু মসজিদের সম্মুখে প্রণাম করে ও পীরের দরগায় বাতাস দেয়। বৰ্ত্তমান অবস্থার মূলে হিন্দুদিগের কতিপয় বিরুদ্ধবাদী নেতার চেষ্টা রহিয়াছে । ( এই স্থলে আমাদের সহিত আহমেদ মহাশয়ের মত সম্পূর্ণ মেলে না। কারণ হিন্দুদিগের বিরুদ্ধবাদের কারণ অনুসন্ধান করিলে দেখা যায় যে, তাহার মূলে মুসলমানদিগের অপরধৰ্ম্মের বিরুদ্ধাচরণ পুরামাত্রায় রহিয়াছে। হিন্দু নেতাগণ সম্পূর্ণ নির্দোষ এরূপ কথা কেহ বলে না, তবে মুসলমান নেতাদিগের দোষই অধিক । ) মুসলমানদিগের সম্বন্ধে আহমেদ মহাশয় বলিতেছেন যে, অপরধৰ্ম্মাবলম্বী লোকে মসজিদের সম্মুখে বাজনা বাজাইতে পরিবে কি না এরূপ কথা মুসলমান ধৰ্ম্মের দিক দিয়া উঠিতেই পারে না। হজরত মহম্মদ নিজে মসজিদের ভিতরে ঈদের সময় বাজনা বাজাইতে দিয়াছিলেন এবং হজরত আয়েশাকে তাহাতে উপস্থিত থাকিতে বলিয়াছিলেন। ইস্তাফুলের খিলাফাতুল মুসলমানগণ শুক্রবারে সালাম আলেক উৎসবের সময় সেণ্ট সোফিয়া মসজিদে তুকী ব্যাণ্ড বাজাইয়া গমন করিত। মাহমেল মিছিল মক্কা যাইবার সময় সৰ্ব্বদা মিশরী ব্যাণ্ড, লইয়া যাইত। মুসলমান রাজত্বের সময়ে দিল্লী জাম-ই-মসজিদের সম্মুখে “রামলীলা” হইত এবং রাজবাড়ীর লোকেরা “রামের’ গলায় মালা পরাইয়া দিতেন । কলিকাতায় যে-বাড়ীর উঠানে মসজিদ আছে সেখান হইতে ব্যাগু, বাজাইয়া বিবাহের শোভাযাত্রা বাহির করা হইরাছে । কোন কোন “আখড়ার” দল এখনও মসজিদ হইতে বাজনা বাজাইয়া বাহির হয় এবং বর্তমানে সকল আখড়ার লোকেই মৌলালী দরগায় মসজিদের পার্থে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাজনা বাজাইয়া থাকে। এইসকল দেখিয়া আহমেদ মহাশয় বলিতেছেন যে, মসজিদের সম্মুখে বাজনা না-বাজানর সহিত শারীয়াতের কোনো সম্বন্ধ নাই। ইহা স্বার্থীদ্বেষী লোকের মনগড় ব্যাপার। গো-বধ নিবারণ প্রচেষ্টার উত্তরেই তুষ্ট লোকে এই কথার স্বষ্টি করিয়াছে। আহমেদ মহাশয় আরও বলিতেছেন যে, দেশের