পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মদর্শন শ্রী রম্য রলা [ রম্য রল। মহাশয়ের যে মূল ফরাসী রচনাটি হইতে এই প্রবন্ধ অনুবাদিত, তাহ এপর্য্যন্ত ফরাসীতেও প্রকাশিত হয় নাই। রল। মহাশয় ভারতবর্ষে ইহা কেবল বাংলায় অনুবাদ করিবার অনুমতি দিয়াছেন। ইংরেজী বা পাশ্চাত্য অন্য কোন ভাষায় ইহীর অনুবাদ নিষিদ্ধ-প্রবাসীর সম্পাদক ] : ভূমিকা ১৮৮৮ সাল, ৪টা মে, শুক্রবার সন্ধ্যা : বাইশ বছরে পড়িয়াছি। আমার বয়সের যে কোন যুবক তার যৌবনকে যতপানি সাফল্যে মণ্ডিত করে আমি তার প্রায় কিছুই করি নাই। জগতের ত কোন খবরই রাখি না ; তবু এ জগংটা কি, এখানে বাচিবার সার্থকতা কি,সে সম্বন্ধে আমার কিছু লিখিতে ইচ্ছা হইতেছে; আমার বিশ্বাস কি ? প্রতিষ্ঠাভূমি কোথায় ? বুঝিবার পথে অনেক বাধা আছে জানি ; কিন্তু এটাও জানি যে নিজেকে নিজে এই প্রশ্ন করার মধ্যে আমার কোন অসারল্য নাই। ইহা আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে যত সামান্যই হোক আমার জীবন, তার মধ্যেই আমার বিশ্বাসের ভিত্তি ; অভিজ্ঞতা পর-জীবনে যতই বাড়ক তাহাতে সে বিশ্বাস নিৰ্ম্মল হইবে না, শুধু তার রংটা বদলাইবে মাত্র। মানুষকে সামান্যই বুঝি ; তার সম্বন্ধে কত অপরিজ্ঞাত তথ্য প্রতিমুহূৰ্ত্ত বহন করিয়া আনিবে স্বতবাং আজিকার এই আত্ম-জিজ্ঞাসা কতখানি অসম্পূর্ণ প্রমাণ হইবে তাহা জানি ; কিন্তু এটাও ভুলিতে পারি না যে এ স্থযোগ আমার আর বহুকাল আসিবে না। এই যে আমার নিঃসঙ্গ উদ্বেগ-কাতর বেদনাবিধুর প্রাণ, এই যে জ্ঞানের প্রেমের অসীম ক্ষুধা, এই যে আমার বিদেহী সত্তা, আমার আত্মার অতল হইতে কত জিনিষের আসাযাওয়া—এই সব মিলিয়া আমার যে ব্যক্তিত্ব— ইহাকে আর ফিরিয়া পাইব না। মানুষের বিষয়ে ভাল করিয়া লেখা ভবিষ্যতের জন্য তুলিয়া রাখিতে চাই, যদিও জানিনা সেই ভবিষ্যৎ কোনো দিন আমার আসিবে কি না ! সুযোগ হয়, তখন দেখাইতে চেষ্ট করিব, এই লক্ষ লোকের আসা-যাওয়ার হাটে কেমন একটি মানুষও আর একজনের সঙ্গে মেলে না, প্রত্যেকেই কেমন তার নিজত্বে অকুপম, এবং কত হাজার স্বক্ষাতিস্থম্ম পার্থক্য মানুষ ও মানুষের মধ্যে লুকাইয়া আছে! শিল্পের ভাষায় এই অপূৰ্ব্ব রহস্যকে ফুটাইয়া তুলিবার সময় এখনও আসে নাই । জীবনের অভাব, অভিজ্ঞতার অভাব আছে ; বিরাট বাস্তবের ( Reality ) বিচিত্র রূপ এখনও দেখি নাই, তাহার ভিতরকার অসংখ্য ছায়াছবি, অগণ্য বর্ণগ্রাম (nuance) লক্ষ্য করি নাই ; তাহাদিগকে স্পষ্ট করিয়া নিখুত করিয়া পট-ভূমিকায় বসাইবার মত পাকা হাত আমার তৈয়ারি হয় নাই। আমার হাতে তেমন স্থম্ম তুলিই বা কোথায় ? এমন অবস্থায় যদি আঁকিতে চেষ্টা করি তাহা হইলে আমার কাজে মস্তিষ্কের অভাবটা ত ধরা পড়িবেই উপরন্তু শিল্পের প্রাণ যে সরলতা ও সত্যনিষ্ঠ তাহাতেও কম পড়িবে। জীবনের অসীম বৈচিত্র্যটি শুধু বুঝিতেই এ জীবন কুলায় না, তাহার প্রতিকৃতি আঁকিয় দেখাইবার স্পৰ্দ্ধ আসিবে কি করিয়া ? যাহা কিছু এই প্রাণের স্রোতে ভাসিয়া উঠিতেছে সবই ত ক্ষণিকের জন্য দেখা দেয় ; তাদের বৈশিষ্ট্য যতই প্রকট তাদের ক্ষণভঙ্গুরত্বও তেমনই স্পষ্ট। তাহারা জীবন নহে, জীবনের স্ফুলিঙ্গমাত্র। দেখিতেছি ঐ শিখ জলিয়া উঠে, কঁাপিতে-কঁাপিতে কখনও মিলাইয়। কখনও নিভিয়৷ যায়, হঠাৎ আবার প্রদীপ্ত হইয়া দেখা দেয়, যেন এই নেভা-জলার ঘূর্ণপাক কখনও থামিবে না! জীবনই সেই শাশ্বত ছতাশন ; ইহা হইতে লক্ষ-লক্ষ স্ফুলিঙ্গ ছুটিতেছে,—আমারই আত্মার কত সহোদর সহোদর চকিতে যেন প্রদীপ্ত হইয়৷ কোন শূন্যে মিলাইতেছে, করুণ ঔৎসুক্যে অধীর হইয়া দেখিতেছি। জীবনকে যদি