পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bry8 কেন যে এরূপ হইতে হইয়াছে তাহার প্রধান কারণ তখন আমাদের দৃষ্টি-কোণের পরিবর্তন হয় নাই। তখন প্রাচীন শিল্পশাক্স সহ হিন্দু-বৌদ্ধ-চিত্রশিল্প গুহাগত হইয়া পড়িয়াছিল, রাজপুত ও মোগল চিত্র ধনী-গৃহের প্রাচীরগাত্রে জৈন মন্দিরে, রাজারাজড়া, নবাব বাদশাহের চি - বাটিক ও প্রমোদ-ভবনে বদ্ধ , এবং বাঙ্গালী তখনও স্বীয় জাতীয় সংস্কার ও ঐতিহকে উপেক্ষা করিয়া নবাগত পশ্চিমের সংস্কারে আপনাকে অভ্যস্ত করিবার অস্বাভাবিক শিল্পী ত্রী অসিতকুমার হালদার পথ ধরিয়াই চলিয়াছিল। স্বাধীন ভারতের প্রাচীন শিক্ষাবসানের অন্ধকারে ও পশ্চিমের নবীন আলোকে দেশের কলারসজ্ঞান তখন সাধারণতঃ দুই চরমের মধ্যে সীমাবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছিল। তাহার ফলে এক দিকে এক সম্প্রদায় গ্রীকৃ ভাস্কর ও ইতালীয় চিত্রকরদের কলারসজ্ঞ হইয়া পড়িয়াছিলেন এবং অন্য সম্প্রদায় পুরীর জগন্নাথের ও কালীঘাটের পটেই সন্তুষ্ট ছিলেন। চল্লিশ বেয়াল্লিশ বৎসর পূৰ্ব্বে কলিকাতা “ওরিএন্ট্যাল সেমিনেরীতে” দুই তিন বংসর মাত্র রূপ-কলার উপাসনা করিয়াছিলাম। শিল্পগুরু ছিলেন গবমেণ্ট স্কুল অব আর্টের ভূতপূৰ্ব্ব হেড মাষ্টার বাবু হরিনারায়ণ বস্থ এবং যাদব-বাৰু । তাহাদের পাশ্চাত্য ধারায় এই অল্প শিক্ষানবীশি করিয়া কলাuদবীর প্রবাসী— আশ্বিন, ১৩ee [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রসাদলাভ করিতে না পারিলেও এই নবীন শৈলীর মৰ্ম্মগ্রহণ করিবার মত চোখ দোরস্ত যে হয় নাই, তাহ অকপটে স্বীকার করিতেছি । তাই যুরোপীয় কলাবিদূগণের প্রাকৃতিক রূপান্থকারী চিত্রণরীতির প্রতি আমার ন্যায় যাহাঁদের প্রশংসমান দৃষ্টি অব্যাহতভাবে নিবদ্ধ ছিল, নূতন ধারা হঠাৎ তাহার পথ অবরোধ করিয়া বসিলে, তৎপ্রতি আমাদের দৃষ্টিকোণ ফিরাইয় তাহার রূপের ভিতর দিয়া রসের সন্ধান পাইতে সময় লাগিয়াছিল । তখন বিদেশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ-বিনিস্কায়ক পেশীপ্রদর্শক প্রসিদ্ধ চিত্রগুলির পার্শ্বে দেশের এই অৰ্দ্ধনিৰ্মীলিত নয়নদ্বয় ঔরগরেখাবদ্ধ প্রত্যঙ্গগুলি, বিষম ঠেকিবারই কথা । এমন-কি রবিবৰ্ম্মার “দৃয়মন্তী ও হংস”, “শকুন্তলা” প্রভৃতি প্রসিদ্ধ চিত্রে নারীমূর্তির কটিদেশ হইতে উদ্ধাঙ্গের সহিত নিম্নাঙ্গের আকুপাতিক বিভাগ অসমঞ্জস বলিয়াই মনে হইত। কিন্তু প্রবাসীর অজস্তা গুহা চিত্রাবলীর ন্যায় ভারতীয় প্রাচীন শিল্পনিদর্শন ও ভাববিশ্লেষণাত্মক মৌলিক প্রবন্ধ, নব পদ্ধতির প্রবর্তকদিগের স্বকীয় উদ্দেশ্য-বিবৃত্তি ও রহস্থ্যেপ্তেদ এবং তাহার আলোচনা ও সমালোচনা সাধারণের গতানুগতিক রূপরসগ্রাহিতাকে ব্যাহত করিয়া নূতন দৃষ্টিকোণের সন্ধান বলিয়া দিল । তাহার ফলে অৰ্দ্ধনিমীলিত ভাবমগ্ন নয়ন ঈষিকারেখার বক্রিমা, অতিতকুমধ্য, বিপুল নিতম্ব, দেব নর কিন্নরাদির স্বভাবতিরিক্ত বা অপার্থিব আকৃতির কল্পনা এবং লীলাবিলসিত অঙ্গবিন্যাসরীতি ষে আমাদের প্রাচীন সংস্কারপূত ভারতীয় ঐতিহ্যের অনহুকুল নহে, তাহাই হৃদয়ঙ্গম হইতে লাগিল । এ সংস্কার হিন্দু বৌদ্ধ বঙ্গের নিজস্ব। তান্ত্রিক রূপকমূৰ্ত্তি পূজক এবং বৈষ্ণব রূপসাধক রাসরসিক ভাবপ্রবণ বাঙ্গালী দশমহাবিদ্যা হইতে যাবতীয় দেবতাপ্রতিমার ভিতর দিয়া চিরস্থন্দরের ভিন্ন ভিন্ন শক্তির রূপদৰ্শন ও মননে অভ্যস্ত । স্বতরাং নৰ পদ্ধতি প্রবর্তকদিগের চিত্রগুলি প্রথম ইতেই সাধারণের দৃষ্টি-আকর্ষক ও চিত্তগ্রাহী না হইলেও অতি অল্প দিনেই তাহা হইতে সমর্থ হইল । তাহ না হইলে দেখিতে দেখিতে এমন দেশব্যাপী প্রতিবাদ, এত অধিক তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও নব্য বঙ্গীয় চিত্রকলা বর্তমানে বঙ্গের সাময়িক সাহিত্যে, অভিজ্ঞ ও স্বধীসমাজে এবং