পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిey প্রবাসা—আশ্বিন, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ছেলেট ঢোক গিলিয়া বলিল, “মাখন” ; বলিয়াই দৌড়াইয়া মায়ের কাছে পলাইয়া গেল। তাহার মা তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া তাড়াতাড়ি কোলের ভিতর টানিয়া লইল । থানিক কথাবার্তার পর, ছেলে, ছেলের বাপ-ম, সকলেই বিদায় হইল । বাড়ীতে মহা আনন্দ-কোলাহল পড়িয়া গেল । অনেকে আনন্দ করিতে লাগিল, রায়বংশ রক্ষণ পাইল বলিয়া । ইন্দিরার শুভাকাঙ্ক্ষী যে দু’চারজন ছিল, তাহার। আনন্দ করিল, সে একটা দারুণ দুঃখের সম্ভাবন হইতে মুক্ত হইল বলিয়া । যাহারা তাহার দুঃগেই মুখী ছিল, তাহার আনন্দ করিল দায়ে পড়িয়া । তাহা ন হইলে লোকে বলিবে কি ? দেবেন্দ্র বিশেষ প্রসন্ন ইয়াছেন বলিয়া মনে হইল না। যাহা হউক, তিনি বেশী কিছু না বলিয়াই কাজে চলিয়া গেলেন। ইন্দিরার ও মন খুংলুং করিতে লাগিল । মাখনের মায়ের ভয়ানক দৃষ্টিট সে ভুলিতে পারিতেছিল না। অর্থের বলে তাহারা মাথনকে ক্রয় করিতেছে বটে, কিন্তু মাখন বা তাঙ্গব পিতামাত। কোনোদিন এই ক্রয়কারীদের ক্ষমা করিতে পরিবে না । এ যেন পুরাকালের দাস ক্রয় করার মত । যাহাই হউক, পোষ্যপুত্র লইবার সব-রকম আয়োজন চলিতে লাগিল ৷ যজ্ঞ হইবে ; আত্মীয়-স্বজন, প্রজা, সকলকে খাওয়াইতেও হইবে ; এসবের জন্যে কিছু আগে হইতে প্রস্তুত হওয়া দরকার ; কাজেই বাড়ীতে রীতিমত সাড়া পড়িয়া গেল । ইন্দিরাকে লইয়। দেবেন্দ্রের ষে বায়ুপরিবর্তনে যাইবার কথা ছিল, তাহ! এখনকার মত চাপা পড়িয়া গেল । মাখনকে তাহার বাবা রোজ- একবার জমিদার-বাড়ী বেড়াইতে পাঠাইয় দিত। সে আসিয়া খুব ভীত-মুখে খানিকটা চুপু করিয়া দাড়াইয়া থাকিত ; এখানে আসিলে তাহার হাসিখেলা সৰু যেন ঘুরিয়া যাইত । ইন্দির সম্বন্ধে তাহার কেমন যেন একটা বিদ্বেষ ছিল, হাজার লোভনীয় রকম ঘুষ পাইলেও সে ইন্দিরার কাছে যাইত ন। জমিদার-বাড়ীর দেউড়ী পার হইলে তবে তাহার মুখে হাসি দেখা দিত। t করিয়া এভাবে সন্তান হত্যা করা যায় ! যজ্ঞের দিন স্থির হইল, দিনটা ক্রমে ক্রমে কাছে আসিয়াই পড়িল । সারারাত ইন্দিরার ঘুম হয় নাই, তাই ভোরের দিকে সে একটুখানি ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। বাহিরে মহা চেঁচামেচি শুনিয় তাহার ঘুমটা চট্‌ করিয়া ভাঙিয়া গেল। কাহারা যেন তাহাকে ডাকিতেছে । সে বিছানা ছাড়িয়। উঠিয়া তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া আসিল । সব কয়জন দাসী তাহার দরজার সাম্নে জড় হইয়া মহা উত্তেজিত ভাবে কিসের যেন আলোচনা করিতেছে । ইন্দির। বাহিবে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হয়েছে রে ?” সকলে মিলিয়। প্রায় সমস্বরে বলিল, “বলব কি মা, অবাক কাণ্ড ! সকালে ঘাটে গেছি, একটা ডুব দিয়ে আস্ব বলে ; ওমা, দেখি কি না সিড়ির উপর ছোট একটা মেয়ে পড়ে, এই সবে ক’ঘণ্টা আগে হয়েছে বোধ হয় ।” কমলা ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মেয়েটা কই ?” ঝির দল নাক সিট কাইয়া বলিল, “মাগে, তাকে কে ছোবে ? কার মেয়ে, কোন জাতের মেয়ে কিছু ঠিকান আছে ? শেষে কি জাত খোয়াব তাকে ছুয়ে ? ফিশ সে সেই সিড়ির উপরই আছে প’ড়ে।” ইন্দির কথা বলিল না। জলন্ত দৃষ্টিতে একবার তাহাদের দিকে চাহিয়া সিড়ি দিয়া নামিয়া নীচে চলিল । দাসীর দল ও পিছনে-পিছনে চলিল, নিজেদের মধ্যে ফিশ করিয়া কথা বলিতে বলিতে ; একজন বলিল, “এটা রাধীরই, এতে আর ভুল নেই । লক্ষ্মীছাড়ী মাগী নিজের মুখ বাচাবার জন্যে এময়েটাকে মৰ্বতে ফেলে গেছে । কিন্তু এ কথা না জানে কে ? গ+ ময়ু ঢ়ি ঢ়ি প’ড়ে গিয়েছে না ?” আর-একজন বলিল, “চুপ কর গো, চুপ কর । পরের কথায় কাজ কি ? শেষে আমাদের নিয়ে টানাটানি পড়বে।” ইন্দির অবাক হইয়। ভাবিতেছিল, মা হইয়া কি ভগবানের আইনের চেয়ে মানুষের আইনের ভয় এতই কি বেশী ?