পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক মহিলারা এক এক ক'রে নাড়ী টেপাচ্ছে, কিন্তু দুৰ্গতি হচ্ছে বাচ্চাগুলোর । তাদের পরীক্ষার আর অস্ত নেই। তাদের গল, বুক, পিঠ, জর, কত কি যে দেখছে তার ঠিক নেই। একটা পুটুকে বাচ্চাকে বলা হচ্ছিল— জিভের তলায় থাৰ্ম্মোমিটার দিয়ে জর দেখ । সে ক্রমাগতই প্রাণপণে ই করছে আর বড় ক’রে গলা দেখাচ্ছে । শেষে লালকুৰ্ত্তিপর এক চাপরাশি বাচ্চাটাকে অনেক ক'রে বুঝিয়ে জিভের নীচে তাপ নিল । অতঃপর এলেন মেমরী । আমরা উপর নীচ দুই দিক থেকেই কেন যে সবার পরে পড়লাম বোঝা গেল না। যদি আগে দেখালে মৰ্য্যাদা কম হয়, তাহলে কালা আদমিদের সঙ্গেই ত আমাদেরও নেওয়া উচিত ছিল । কিন্তু মেমরাই গেল আগে । হতে পারে ষে আমরা সব চেয়ে নিরাপদ লোক বলে আমাদের সকলের শেষে রাখা হয়েছিল। আমাদের জাহাজে চড়তে দিতে বোধ হয় ওদের আপত্তি ছিল না । মেমসাহেবদের বারেও ছোটদের উপর নজর বেশী পড়ল। মিস ক্যাডেটু নামী এবটি এগার-বার বছরের মেয়েকে প্রায় ‘কাণপৰুড়কে উঠে৷ বৈঠোর মতন বারবার হাটু গাড়িয়ে গলা জর পিঠ দেখে অস্থির করে তুলল। তাতেও তার নিস্কৃতি হ’ল না। অন্য মেমদের এবং আমাদের পরীক্ষা শেষ হওয়া পৰ্য্যস্ত সে ধামাচাপা রইল কিছুক্ষণ। আমার নাড়ী দেখে কোথা থেকে আসছি সেইটুকু মাত্র জিজ্ঞাসা করল । আমার মেয়ের কিন্তু গলা ও নাড়ী দেখে আবার জামার বোতাম খুলে বুক পিঠ । সব দেখাতে হ’ল। ডাক্তারের ছাপমারা ছাড়পত্র নিয়ে ধখন আমরা জাহাজে কায়েমী হয়ে উঠলাম তখনও সেই ইউরোপীয় ছোট মেয়েটির হয়রানি চলছিল। লেভী ডাক্তার তাঁকে টেনে নিয়ে পুরুষ ডাক্তারদের কাছে গেলেন। তিন: চারজনে মিলে দেখে শুনে তার জর হয়নি প্রমাণ পেয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হ’ল । তার মা’র ত মুখ শুকিয়ে, এতটুকু হয়ে গিয়েছিল। সকলে ক্রমে উঠে পড়ল। ষাদের যাত্রী ও যান্ত্ৰিণী মনে করেছিলাম তাদের সকলেই প্রায় বন্ধুদের বিদায় দিতে এসেছে। একদল মুসলমান মেয়ে তাদের আত্মীয়-বন্ধুদের জাহাজে তুলে দিয়ে আবার সিড়ি বেয়ে নেমে গেল। এরা বাংলা ইংরিজী হিন্ধু কোনও ভাষাই ভাল জাপান যাত্রণ ጫግ তীরের বন্ধুর ফিতা দিয়া জাগজ বাধিতেছেন ক'রে বোঝে না। কি ভাষায় যে কথা বলে তাও ঠিক জানি না । ডেকে বসবার কোন আসন তখনও দেয়নি । কিন্তু প্রথম সমুদ্রষাত্রার সময় কে আর কেবিনে ঢুকে ব’য়ে থাকতে চায় ? জাহাজ ছাড়াটা ত দেখতে হবে । দাড়িয়ে দাড়িয়ে প। প্রায় খসে যাবার যোগাড় । একটা বাজতেই জমির থেকে জাহাজের গায়ে আটকানো মইট আস্তে আস্তে খুলে নিল। এইবার ধাত্রারম্ভ। জাহাজের জাপানী দম্পতি ও তাদের বোম্বাই-প্রবাসী বন্ধুর গঞ্জ ফিতের মতে ক’রে জড়ানো রাশি রাশি রঙীন ফিতে সংগ্ৰহ ক’রে নিয়ে এসেছিলেন। তীরের বাঁধন খুলে জাহাজ তেলকালি গোলা জলে ধীরে ধীরে অগ্রসর না হতে হতেই দুধারে স্বরু হয়ে গেল, “যেতে নাহি দিব”র পালা। জাহাজের দম্পতি ডেকের রেলিঙের গায়ে ফিতাগুলির একটা দিক বেঁধে বাকি পাকানো ফিতা এক এক বন্ধুকে এক একটা ছুড়ে দিতে লাগলেন। বন্ধুদের মধ্যে ফিতা ধরবার জন্ত কাড়াকড়ি পড়ে গেল। তীরের বন্ধুরাও লাল নীল হলদে . নানা রঙের ফিতে ছুড়তে লাগলেন। দেখতে দেখতে জাহাজের কৰ্ম্মচারীরাও দলে ভিড়ে গেলেন । মাঝিমান্ধা ষে পাচ্ছিল সেই একটা করে ফিতা ছুড়তে স্বরু করে দিল। ক্রমেন্থই দিক থেকে পঞ্চাশ-যাটটা ফিতা জলে স্থলে জালের বাধন বেঁধে জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে জুলে দুলে অগ্রসর হতে লাগল। বন্ধুদের হাতে দু-দিকেই রুমাল, টুপি, ফুলের মালা