পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

) sరిఫి প্রবণসী ১৩৪৪ খাতিরে যদি অন্তায় করলেও তোমার দোষ না হয়, ত আমারও হবে না।" বলিয়া সে দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয় গেল । হেমেন্দ্র খানিকক্ষণ ই করিয়া চেয়ারে বসিয়া রহিল, তাহার পর বলিয়া উঠিল, “না, অতি বদমেজাজী, এমন হলে আর পাঁচজনের সংসারে চলে ?” আকাশে তখন মেঘের রাশি ভীষণাকৃতি ধরিয়াছে, রাত্রিও অনেকখানি হইয়াছে, না হইলে হেমেন্দ্র আবার বন্ধু-বান্ধবের সন্ধানে বাড়ী হইতে বাহির হইয়া যাইত। বাধ্য হইয়া তাহাকে একলা ঘরে বসিয়া থাকিতে হইল। মুনয়নী আর রাত এগারোটার আগে ঘরে আসিল না । আসিয়াই একটা চাদর মুড়ি দিয়া গুইয়া পড়িল, এবং ভোর হইতেন-হইতে বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া গেল। হেমেন্দ্ৰ বুঝিল, রাত্রির আগে অার স্ত্রীর সঙ্গে বোঝাপড়ার অবকাশ পাওয়া যাইবে না। অত তেজ দেখাইয় যে গেল, সে নিশ্চয়ই মনে মনে কোনও ফন্দি আঁটিয়াছে। হেমেন্দ্রের মনটা অস্থির হইয়া উঠিতে লাগিল, কিন্তু কোনও উপায় নাই যেখানে সেখানে সহ করিয়া যhওয়া ছাড়া উপায় কি ? আপিস হইতেসে একটু সকাল সকালই বাড়ী ফিরিয়া আসিল ।. যথানিয়মে মুনয়নী চা জলখাবার হাতে করিয়া حمہ ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। হেমেন্দ্র জিজ্ঞাস করিল, “কি, অন্যায় করবার ব্যবস্থা কিছু পাকা হল ?” মুনমুনী বলিল, “যুথীকালে দেখতেই পাবে।” হেমেন্দ্র বলিল, “এই-সব থিয়েটারি ঢং আমি দু-চক্ষে দেখতে পারি না । একটা কেলেঙ্কারি বাধিও না যেন, আমি তোমাকে সাবধান ক’রে দিচ্ছি। তা হলে ভাল হবে না। নিজে যে স্ত্রীলোক, এবং তাও হিন্দুঘরের পরাধীন স্ত্রীলোক, সেটা মনে রাখলে তোমার উপকার হবে।” স্বনয়নী বলিল, “মনেই রাখব।” তাহার পর চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। হেমেন্দ্র চা জলখাবার খাইয়া শেষ করিলে সে পীরিচ পেয়ালা তুলিয়া লইয়। নীরবেই বাহির হইয়া গেল । রাত্রে অনেক জেরা করিয়াও হেমেন্দ্র আর তাহার নিকট হইতে কোনও কথা আদায় করিতে পারিল না। মুস্কিল এই ষে দিনের বেলা স্বনয়নীর উপর চোখ রাখা তাহার সম্ভব নয়, সাড়ে নয়টা হইতে সাড়ে ছয়টা পৰ্যন্ত তাহাকে বাহিরেই কাটাইতে হয়। মা ত সারাটা দিনের বেশীর ভাগ কলের ঘরে কাটান, বাকিটুকু ভাড়ার ঘরে, বে কি করে না করে বিশেষ দেখেন না। পুটুটা কাজের অযোগ্য, আছে খালি বই আর পুতুল লইয়া, সেও ত দুপুরে স্কুলে চলিয়া যায়। আশেপাশে সব গায়ে গায়ে লাগানো বাড়ী, সবাই বাঙালী। তাহদের বাড়ীর বৌঝিরা পায়ে হঁাটিয়া সারাক্ষণই এ-বাড়ীতে যাতায়াত করিতেছে। স্বনযুনীর যদিও বেশী পাড় বেড়ানোর হুকুম নাই, তাই বলিয়া একেবারে নিষেধও নাই। ইচ্ছা করিলে দুপুরে দু-তিন ঘণ্টা বাহিরে গিয়া সে কাটাইয়া আসিতে পারে। কিছু অঘটন ঘটাইবার ঝোক চাপিলে তাহার পক্ষে সেট। কার্য্যে খাটাইয়া দেওয়া একেবারে অসম্ভব নাও হইতে পারে। হেমেন্দ্ৰ মনে মনে অতিশয় অস্থির হইয় উঠতে লাগিল, কিন্তু মাকেও কিছু বলিতে পারিল না বা স্ত্রীকে টিটু করিবারও কোনও উপায় স্থির করিতে পারিল না । স্বামীস্ত্রীর ভিতর বাক্যালাপ প্রায় বন্ধই হইয়া গেল । দিন তিন-চার কাটিয়া গেল। পাচ দিনের দিন সকালে বাড়ীর সকলকে বিম্বিত ও মুগ্ধ করিয়া স্থনয়নীর বাপের বাড়ী হইতে পূজার তত্ত্ব আসিয়া হাজির হইল। মুরবালা ত একেবারে থ হইয়া গেলেন। এত রকমারি জিনিষ, এত ভাল কাপড়চোপড় তিনি আশাই করেন নাই । মেয়েকে যে জংলা ঢাকাই শাড়ীখানা পাঠাইয়াছে তাহার দাম কোন ন। পচিশ-ত্রিশ টাকা হইবে ? জামাইকে যে ধুতি চাদর পাঞ্জাবী দিয়াছে, তাহাও বিশ টাকার কম নয়। বাবা, আচ্ছ ট্যাট মানুষ যা হোক। এতট। যাহারা দিতে পারে তাহারা কি বলিয়া এতদিন চুপ করিয়া ছিল ? মেয়ের ,প্রতি দরদ যে কত তাহা ত ব্যবহারে বুঝাই গেল। যাহ হউক তিনি এক কথায় মানুষ, তত্ত্ব করিলে , পাঠাই দিবেন যখন বলিয়াছেন, তখন পাঠাইঘাই দিবেন। তাহার নিজের কাজ ইহাতেই উদ্ধার হইবে । খালি যা দই-মিষ্টির খরচ । কাপড়চোপড় সব সোজাস্বজি তাহার বাক্সে বন্দী হইল, আর সব জিনিষও তিনি গুছাইয়া রাখিয়া দিলেন।. দুই মিষ্টি প্রভৃতি রাখিয়া দেওয়া সম্ভব নয়, কাঁজেকাজেই সেগুলি বাড়ীর লোকের ভোগের জন্য দান করিতে হইল ।