পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণক্ষ্মণ সুবিমলকেও দোষ দেওয়া চলে না । কিন্তু তপতী কোন কথাই ভাবিতে চাহে না । কবে বিরক্ত হইয়া কি একটা অনুরোধ সে করিয়াছে তাহাই হইবে সত্য, আর আজ যে সে সৰ্ব্বাস্তঃকরণে বানরটির মুক্তি ভিক্ষা চাহিতেছে, তাহার কোন মূল্যই নাই। কি ফুক্ষণেই তার ঠানদির সহিত দেখা হইয়াছিল। তার সহজ স্বচ্ছন জীবনযাত্রা সব দিক দিয়া জটিল হইয়া উঠিয়াছে। নিজেকে সে বহুপ্রকারে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছে, কিন্তু লাড় তাহাতে কিছুই হয় নাই, বরং সন্দিগ্ধ মন আর অধিক পরিমাণে চিন্তিত হইয় উঠিয়াছে। এ-চিস্তা এমনি মারাত্মক যে একটি মুহূৰ্ত্তও তাহাকে বিশ্রাম দেয় না। তপতী ভাবে, শুধুই ভাবে । এ-ভাবনার আদি আছে অস্ত নাই । জাগরণে বানর-দম্পতি তাহার চোখের সম্মুখে এক জীবন্ত আতঙ্ক, নিদ্রায় ঐ একই চিন্তা নি:শব্দ সঞ্চারে তার চিস্তাশক্তিকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে। তপতী স্বপ্ন দেখে, তার ফুটফুটে ছেলেটি ওর একক নিঃসঙ্গ জীবনযাত্রাকে ভরিয়া রাখিয়াছে । একক এইজন্ত ধে তপতী আজকাল আর সুবিমলকে সহ করিতে পারে না । ইহার অন্তরালে অশ্রদ্ধা বা অসম্প্রীতি না থাকিলেও সে যেন পূৰ্ব্বের স্থায় স্বামীকে গ্রহণ করিতে পারিতেছে না। তপতীর কানে ষায় তার ভাবী ছেলের নিঃসঙ্কোচ সবল ’মা’ ডাক। তার ঘুমন্ত চোখের পাতায় পাতায় সে নাচিয়া বেড়ায় । স্বপ্নের খোকা তার চেতনাকে ঢাকিয়া রাথিয়াছে। এমনি করিয়া নিজেকে ভুলিয়া থাকিতে পারিলে কি আনন্দ, কি তৃপ্তি। তপতী ঘুমের মধ্যে খুশী হইধা ওঠে । তার স্বপ্ন সত্যরূপে বিরাজ করিতে থাকে। হয়ত অজ্ঞাতে এক-আধবার ভাকিয় উঠে, খোকনমণি অত দুইমি করতে নেই-পরমুহুর্ভেই হয়ত হাসিয়া বলে, আঃ দুই, ছেলে এমনি ক'রে চুল ধরে টানতে নেই...লাগে যে...তার স্বপ্নের খোকা খিল খিল করিয়া হাসিয়া ওঠে। কি উচ্ছসিত সে-হাসি ! কি অনাবিল, স্নিগ্ধ ওর মুখের ভঙ্গিটি। তপতী মুখ পলকহীন চোখে চাহিয়া দেখে। এক বৃত্তি ছেলে...এক তাল নরম মাটি-কিন্তু দুই মিতে, পাকা । কিন্তু ও কি, তার ছেলে বারের খাচার পাশে মুরিয়া বেড়ায় কেন । অমন ফুটফুটে ছেলে দেখিতে দেখিতে অমন তামাটে হইয়া গেলই বা কিসের জন্ত...আর অনুভূতি Sb-" মুখের চেহারা•••ও কি--তপতী ঘুমের ঘোরে আর্তনাদ করিয়া উঠিল। সুবিমল জোরে জোরে ধাক্কা দিয়া বলিতেছে । হ’ল কি তোমার... ? ওঠ, ওঠ, এত বেল পৰ্য্যস্ত ঘুমিয়ে আছ ? স্বপ্নের ঘোর তখনও তপতীর চোখ হইতে যায় নাই । দুই হাতে চোখ রগড়াইয়া একবার নিজের অবস্থাটা উপলব্ধি ৰুরিয়া লইল, কহিল—একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। ! -বান্ধর নিয়ে নিশ্চয়•••মুবিমল হাসিয়া উঠিল । তপতী যেন একটু লজ্জিত হইল। স্থবিমল পুনরায় কহিল—বাদরের কায় তোমার আর শুনতে হবে না-দেখবে এস। সত্যিই দিন কয়েক ধরে বড় জালাচ্ছিল। তপতী চঞ্চল হইয়া উঠিল। খুশী হইয়া কহিল—ছেড়ে দিয়েছ ? অঃ তুমি আমায় বাচিয়েছ","ষে ক'রে জামার দিন কাটছিল । তপতী উঠিয়া দাড়াইল । সুবিমল হঠাৎ কথা কহিতে পারিল না। প্রকৃত সত্যের যবনিকা তুলিয়া ধরিতে তার হাত উঠিতেছিল না। তপতী পুনরায় কহিল—তুমি যদি আজ আমায় দু-লেট জড়োয় গয়না দিতে, আমি এত খুশী হতুম না ।" আজ তোমায় জামি রান্না করে খাওয়াব-আজ একটি মুহূর্তের জগু তোমার ছুটি নেই। অনেক দিন তোমায় জামি কাছে পাই নি। - এক নিমেষে তপতী বদলাইয়া গেল। কহিল—ক’দিন ধরে তোমার সঙ্গে বডড খারাপ ব্যবহার করছি। তা ব’লে তুমিও নেহাৎ ভালমানুষটি নও। সেই ত আমার কথাই রইল.অথচ–সহসা স্থবিমলের মুখের দিকে চাহিয়া তপতী খামিয়া গেল । স্থবিমল সঙ্কুচিত হইয়া উঠিল, এ-আলোচনা কোন রকম বদ্ধ করিতে পারিলে সে বঁাচে । ভৃত্য আসিয়া জানাইল—বাদরটাকে কি বাগানের বাইরে ফেলে দিয়ে আসব। —ই্যা-সুবিমল ব্যস্ত চরণে প্রস্থান করিল। তপতীর মুখে কে যেন এক ছোপ কালি মাখাইয়া দিয়াছে। স্ক্রতপদে সে গিয়া জানালীর পাশে দাড়াইল । বর্মী খাচার মধ্যে পাগলের স্থায় ছটফট করিতেছে আর তাহারই অদূরে, মুক্ত বাক্ষরটি একেবারে মুক্তি ।