পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 নীরবে দাড়াইয়ু৷ দাড়াইয়া নখ দিয়া দেওয়ালের এক অংশে কি খুটিতে লাগিল। পিসীমার উপর রাগ হইতে লাগিল— মিছামিছি একটা অশাস্তি স্থষ্টি করা পিসীমার একটা রোগ । ম! আবার বলিলেন, “পিসীমা কি মন্দ বলেন । ঠিকই ত বলেন । ও-বাড়ীর সরম ত তোরই বয়সী, সেদিন তিনবাড়ীর লোক নেমস্তন্ন ক'রে একা হাতে বিশ রকম রান্না ক'রে খাইয়েছে। সরমার দিদিশাগুড়ী এসে কত মুখ্যাতি করতে লাগলেন । আর তোমাকে সেদিন ঝোলট। শুধু সাতলে রাখতে বলেছিলাম, তা কি ছরকোট করেই রেখেছিলে মা ! সে শোধরাতে আমার দুগুণ সময় গেল । কাজ করবার সামর্থ্য নেই—তা বললে আবার রাগ কি ?” পিসীমার বকুনি ইন্দু গায়ে মাখে না, কিন্তু মায়ের ভৎসনা শুনিতে শুনিতে দাড়াইয়া দাড়াইয়া এতক্ষণে ইন্দুর চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল । পাশের নিরামিষ রান্নাঘর হইতে পিসীমা ডাকিলেন, “ও বেী, হাত ধুয়ে দুটি কালোজিরে দিয়ে যাও তো জামাকে তোমাদের ভাড়ার থেকে । আমার এদিকে কালোজিরে ফুরিয়েছে দেখছি—কাল যখন বাজার যাবে, মনে ক’রে আনতে বলে দিও। গঙ্গাজল আছে ঐ ঘড়ায়, কালোজিরে কটা ধুয়ে দিও বাপু একটু। তোমাদের ভাড়ারের জিনিষে তো ধে যখন খুশী হাত দিচ্ছে, বিচার ত নেই। এ-বাড়ীর ছেলেমেয়েরা সব নবাব কিনা-কাউকে কিছু শেখান হবে তার জো কি। সবই উলটে শিক্ষা-ছেলেরা শিখলে না বিদ্যে, মেয়ের শিখলে না বিচার ” অন্ত সময় হইলে নিঃসন্দেহ ইন্দু পিসীমার এই অবাস্তর কথার জবাব ভাল করিয়াই দিত, কিন্তু এখন সে কাদিতেছিল, কিছু বলিল না । - ম চাহিয়া দেখিলেন-বোধ করি মায়া বোধ হইল । নরম স্বরে বলিলেন, “যাও, ভাড়ার-ঘর থেকে দুটি কালোজিরে নিয়ে গঙ্গাজলে ধুয়ে পিসীমাকে দিয়ে এসো গে। বড়রা যা বলেন, ভালর জন্যেই বলেন–রাগ করিস কেন সব তাতে ?” চোখের জল আঁচলে মুছিতে মুছিতে ইন্দু মায়ের নির্দেশ মত ভাড়ার-ঘরে চলিয়া গেল। ভাড়ারে ছোট ছোট জারে ও শিশিতে এত রকমের ডাল মশলা ইত্যাদি সাজান ষে তাহার ভিতর যে কালোজির কোনটি তাহা ইন্দু প্রথমে কতক্ষণ বুঝিয়া উঠিতেই পারিল না। বড় বড় পাত্রের গায়ে কোনটিতে লেখা রহিয়াছে “মুগের ডাল," কোনটিতে “ময়দা,* কোনোটিতে “আটা”—কিন্তু ছোট ছোট শিশির গায়ে কোনটিতেই কিছু লেখা নাই। ইন্দু ভাল করিয়া চোখ মুছিয়া খুজিতে লাগিল । সব শিশির ফ্রব্য বাহির করিয়া প্রবাসী సిక88 হাতে ঢালির পরীক্ষা করিতে লাগিল ইহাদের ভিতর কোন পদার্থটির কালোজির হইবার সম্ভাবনা অধিক। মৌরী ইন্দু চেনে, গোলমরিচও সেদিন মুড়িতে মাখিবার জন্য গুড়া করিয়াছিল, তাহাও জানা আছে ; আর জোয়ান ত বাবা প্রায়ই খান। ইন্দু খুব ভাল করিয়াই জোয়ান চেনে । কালোজির যখন নাম, তখন ইন্দু আশা করিল দ্রব্যটি কালো রঙেরই হইবে। একমাত্র সরিষা ছাড়া আর কোনও কালোটে রঙের মশলা ইন্দু উহাদের ভিতর খুজিয়া পাইল না। বারাও দিয়া পিসীমার পুত্র নরেন্দ্রকে যাইতে দেখিয়া ইন্দু কতকগুলা সরিষা হাতে লইয়া তাড়াতাড়ি ভাড়ারের দরজার নিকট গিয়া ডাকিল, "নরেনদা ভাই, দেখ না, এইটে কি কালোজিরে ?” নরেনদী একবার মাত্র থামিয়া অত্যস্ত অবজ্ঞাভরে বলিল, “কালোজিরে চিনিস না এত বড় মেয়ে ? অামাকে ডাকছিস চিনতে ? লজ্জা করে না ? ফ্রি " বলিয়া অন্য দিকে চলিয়া গেল । ইন্দু সরিষা কয়টি লইয়। গঙ্গাজলে ধুইল, তার পর অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে পিসীমার রান্নাঘরের চৌকাঠে গিয়া দাড়াইয়া বলিল, *fপসীমা কি চেয়েছিলে, এনেছি ” পিসীমা গষ্ঠীর মুখে বলিলেন, “ঐ পাথরবাটিতে রেখে যাও।” ইন্দু পিসীমার নিদিষ্ট পাথরবাটিতে সরিষা কয়টি ঢালিয়া দিয়া চলিয়া যাইতেছিল, এমন সময়ে পিসীমা যেন ফাটিয়া পড়িলেন। “হ্যা ইন্দু, এই তোমার কালোজিরে । ওম, কোথায় যাব গো ! ও বেী, তোমার মেয়ে কালেজিরে নিয়ে এলে একবার দেখবে এস । ও ভবানী— ভবানী, বলি গেলি কোথা ? দেখে যা দেখে য’, তোর পাস-করা মেয়ে আমাকে কালোজিরে এনে দিয়ে গেছে, একবার এদিকে এসে দেখেই ধা না।-••ন বাবা, এত বড় ধাড়ি মেয়ে, কাজকৰ্ম্ম করা দূরে থাক, এখন অবধি মশলাপাতি চিনতে অবধি শিখলে না, এ আমি বাপের জন্মে দেখি নি সত্যি। তা বলবই বা কাকে, মেয়েকে শেখালে তলে তো শিখবে বাপ তো কেবল মেয়েকে বই পড়াচ্ছেন— আর ইস্কুলের মাইনে গুণছেন–সংসারের দিকে মেয়েকে আসতে দেবে তবে তো শিখবে এসব । আজ বাদে কাল বিয়ে দিতে হবে, সংসারের ভার মাথায় পড়বে তখন - আর মেয়ে এখনও হলুদ লঙ্কা ধনে কোনটে কি গ জানলে না ।” ভগিনীর ইকাইকিতে ভবানীবাৰু সশঙ্কচিত্তে নি োর পাঠগৃহ ছাড়িয়া আবার ভিতরে আসিয়াছিলেন—না জনি আবার কি ব্যাপার ঘটিল। কিন্তু কালোজিরার সম ঠা তাহাকে তিলমাত্র বিচলিত করিয়াছে এমন বোধ হইল । তিনি কস্তার হাত ধরিয়া চুপিচুপি বলিলেন, “খুকু, পার্লিনে