পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ আয়, পালিয়ে আয় এখান থেকে। তুই সামনে দাড়িয়ে থাকলে দিদির বকুনি কি আর আজ থামবে ? আয়ু বাইরে।" পিতার হাত ধরিয়া ইন্দু বাহিরের ঘরে চলিয়া গেল, পিসীমা বকিতেই লাগিলেন। বাহিরে আসিয়া ইন্দুর চোখে আবার জল আসিয়া পড়িল । বলিল, “কি যে বাবা রাতদিন বকেন পিসীমা— কোথাও কিছু নেই, শুধু শুধু এত বকতেও পারেন । কালোঞ্জিরে না চিনলে কি ষে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় তা উমিই জানেন। কোনও দিন দেখি নি, তাই ভুল হ’ল । এক দিন দেখিয়ে দিলেই তো চিনে যেভাম, না বাবা ? সাধে কি আর আমার রান্নাঘরের জিকে পা দিতে ইচ্ছে করে মা ? গেলেই খালি বকুনি-কেন এটা জান না, কেন এটা পার না । বাবা বাবা * ভবানীবাৰু কন্যাকে নিজের কাছে বসাইয়া বলিলেন, "কাল থেকে তো তোকে আমি পড়াব খুকি, রান্নাঘরে যাবার সময়ই বা পাবি কোথা ? কলেজ থোলবার আগেই আমি তোকে পোয়েটি, টেক্সট পড়িয়ে দেব মা—আমার এখন ছুটি কিনা, সময় আছে। বইখানা আগে থেকে পড়ে রাখলে তোর অনেক সুবিধা হবে।” ইন্দুর চোখের জল এক মুহূর্বে শুকাইয়া গেল। গপিমুখে বলিল, “পড়াবে বাবা ? খুব মজা হবে। সকালবেল ঐ মাঠে গাছের তলায় ব’সে পড়ব অমির দু-জনে—পিসীমা তে। আর তাহলে তখন কাজ করতে ডাকতে পারবেন না । রান্না আর বান্না, আর জিরে আর হলুদ-এমন বিচ্ছিরি লাগে আমার ” 朝 ভবানীবাবু সস্নেহে কষ্কার পিঠ চাপড়াইয়া বলিলেন, *ন মা ও কথা কি বলতে আছে ? শিখতে হয় বইকি সব কাজই কিছু কিছু। দেখ, তোমার মা, পিসীম, তোমাদের ভাল খাওয়াবেন, যত্নে রাখবেন ব’লে কত কষ্ট ক'রে বারো মাস রান্নাবান্না করছেন, পরিশ্রম করছেন—একটু বিশ্রাম দেন না নিজেদের শরীরকে । এ কি কম কথা ভাব ? তা নয়—খুব বড় কথাই মা। তবে আমি জানি তোমারও বিয়ে হ’লে, ঘাড়ে পড়লে, তুমিও ঠিক ওদেরই মত নিজের স্বামী পুত্র আত্মীয়স্বজনকে সেবা করবে, খাটবে, রোধে খাওয়াবে, সবই করবে। যে কয়দিন আমার কাছে আছে— ন-ই করলে, এই আর কি।” পিতার উপদেশ-বাক্য শুনিতে শুনিতে ইন্দুর চোখে আবার জল আসিবার উপক্রম হইল। সে উপহার হাত রিয়া টানিয়া উঠাই বলিল, “না বাবা, তুমি অমন করে ধলো না ; আমার ভয়ানক কান্না পায়। আমার বিয়ে হবে না । আমি বিয়ে করব না, শ্বশুরবাড়ী যাব না, রেখে-টেধে খাওয়াব না-বরাবর তোমার কাছে vaو س$t

    • ষাহন পাই তাহ চাই না।”

Bの● থাকব আর পড়াশুনা করব, আর পিসীমার কাছে বকুনি খাব। তুমি এখন এস, আমার কলেজের বইয়ের লিষ্ট এনেছি তুমি দেখবে এস।” পিতার হাত ধরিয়া টানিতে টানিতে ইন্দু তাহাকে নিজের পড়িবার ছোট ঘরটির দিকে লইয়া গেল । তাহার পরদিন হইতে সত্য সত্যই প্রতিদিন ভবানীবাবু ইন্দুকে পড়াইতে আরম্ভ করিয়াছেন এবং ইহাই হইল উক্ত শরৎ-প্রভাতে নিমগাছতলায় বসিয়া পিতা-পুত্রীর কাব্যআলোচনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস । ર কিন্তু ইন্দুর আপত্তি টিকিল না । কান্নাকাটি, রাগারগি করিয়াও ইন্দু নিজের বিবাহ বন্ধ করিতে পারিল না। বিবাহ হইয়া গেল এবং এক দিন শ্রাবণের মেঘাচ্ছন্ন দিনে পিসীমা ও মায়ের উপর রাগ এবং পিতার উপর অভিমান করিয়া নীরবে চোখের জলে ভাসিতে ভাসিতে ইন্দু স্বামীর সহিত শ্বশুরঘর করিতে চলিয়া গেল । অমুকুলের সহিত বিবাহে ভবানীবাবুর গোড়াগুড়ি হইতেই তেমন মত ছিল না । ছেলেটি বি-এ পাস বটে, কিন্তু ভবানীবাৰু গোপনে জানিয়াছিলেন ষে সে একবারের চেষ্টায় বি-এ পাস করে নাই । তাহার উপর ছেলেটি প্রোফেসার নহে, ইস্কুলের মাষ্টারও নহে—অর্থাৎ বিদ্যাচর্চার সহিত যে কাজের সম্পর্ক থাকে, সেরূপ কিছুই নহে—ছেলেটি একটি দোকানের মালিক, সাদা কথায় ষাহাকে বলে দোকানদার। হয়ত সারা দিন হিসাব কষে ও দোকানে বসিয়া খাত মেলায় ; কাব্যচর্চা হয়ত তাহার পক্ষে অত্যন্তই অনাবগুক বস্তু। সে কি তাহার কস্তার আদর করিবে ? স্ত্রীর নিকটে ভবানীবাবু এ সম্বন্ধে আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছিলেন। স্ত্রী নীরবে রহিলেন, কিন্তু ভগিনী শুনিয়া জলিয়া উঠিলেন । “তুই ক্ষেপলি নাকি ভবানী ? এমন ছেলে তোর পছন্দ না ? পুরুষমাহূব-টাকা রোজগার করছে কি না এইটে দেখবি ; তা না, কে বই মুখে ক’রে রাত-দিন বসে থাকে তোর মেয়ের মত, তাই দেখে জোড় মিলিয়ে তুই জামাই খুজবি নাকি ? অনাছিষ্ট কৰা ক'স নে। খাসা ছেলে এ । চেহারাও দিব্যি, গুনছি দোকানে দিব্যি রোজগারও করে, তিনটে পাস করেছে— এ সম্বন্ধ যদি তোমার মেয়ের পছন্দ হবে কি না-হবে ভেবে ফিরিয়ে দাও তো ও মেয়ের আর বর জুটবে না তা আমি তোমায় স্পষ্টই ব’লে দিচ্ছি। কখায় বলে বাড়া ভাত আর যাচা সম্বন্ধ কখনও ফেরাতে নেই। ছেলে নিজে এসে সম্বন্ধ ক'রে গরজ দেখিয়ে বিয়ে করতে • চাইছে, এ ভাগ্যি বলে মানবি—ত না সব উলটো কথা দেখ না ।” *