পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و& 80 .. 台N°88 ভবানীবাবু মন স্থির করিতে সময় পাইলেন না—এদিকে ভগিনীর তাড়ায় ও ওদিকে অনুকূলের আগ্রহে বিবাহ হইয় গেল । ইন্দুর স্বামী অমুকুল ও তাহার এক বন্ধু স্বরেশ এই দুই জনে যখন বছর তিন আগে একসঙ্গে বি-এ পাস করিয়া বাহির হয় তখন অ-সহযোগ আন্দোলনের কাল । দুই জনেই মনে মনে জানিত ষে চাকুরী পাওয়া অসম্ভব, কাজেই জোর গলায় প্রতিজ্ঞা করিল যে তাহারা পরের দাসত্ব কখনও করিবে না ; স্বাধীন ব্যবসা করিবে । ভাগ্যে খাকে তো ইহা হইতেই এক দিন ষে তাহারা লক্ষপতি হইবে না তাহা হলফ করিয়া কে বলিতে পারে ? দুই জনে অনেক কষ্টে কিছু টাকা সংগ্ৰহ করিয়৷ সেই বৎসর হইতেই বিহারউড়িষ্যার অন্তর্গত এমন একটি শহরে দোকান খুলিয়া বসিয়াছে খোনে সত্যই এইরূপ একটি দোকানের অভাব ছিল । শহরটি নেহাৎ ছোট নহে—তাই দুই বন্ধুর ব্যবসায়ের জারগুট হুইল বেশ আশাপ্রজ, এবং স্বাধীন ব্যবসায়ে নামিয়া এইবার দুই জনের বুক ফুলাইয়া বেড়াইবার পক্ষে আর কোনও বাধা রহিল না । স্বরেশ আগেই বিবাহ করিয়াছিল-দোকান ফাদিয়া এত দিন পরে স্ত্রীকে পিতৃগৃহ হইতে লইয়া আসিল । তাহার স্ত্রী অপর্ণ গৃহস্থঘরের সাধারণ মেমে—কাজকৰ্ম্ম রন্ধনাদিতে স্বনিপুণ। স্বামীর ঘরে আসিয়া ঘষিয়-মাজিয়া সাজাইয়গুছাইয়া দু-দিনেই সে দিব্য গৃহস্থালী পাতিয়া বসিল । নিকটেই অন্য একটি ছোট বাড়ীতে অমুকুল একা থাকে। তাহার চাকরটা বাজার হইতে যতক্ষণ না ফেরে সন্ধ্যাবেলা ঘরে আলো জলে না ; ছেড়া পর্দা ঘরের জানলায় তিন মাস হইতে একই ভাবে বলিতেছে, বদলাইবার লোক নাই। খাইতে বসিয়া দুধের ভিতর সেদিন মাছি পাওয়া গেল, এবং সেই কারণে অমুকুল চাকরটাকে ভংগনা করিল বলিয়া তাহার পরদিন সে অমুখের অছিলা করিয়া বিছানায় পড়িয়া রহিল, কাজে আসিল না। একমাত্র ভূত্যের অনুপস্থিতিতে সারাদিন ধরিয়া অমুকুলের পদে পদে নানা অস্ববিধ ঘটিতে লাগিল এবং সন্ধ্যাবেলা ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির হইয়া স্বরেশের বাড়ী গিয়া অপর্ণার নিকট অল্পভিক্ষা করা ছাড়া আর উপায় রহিল না । তখন সন্ধ্যাবেলায় ঘরে আলো জালাইয়া বাহিরের ঘরের চৌকিতে গুইয়া পায়ের উপর পা দিয়া স্বরেশ রবীন্দ্রনাথের চয়নিক খুলিয়া জোরে জোরে পড়িতেছিল— “ভূমি মোরে করেছ সম্রাট! তুমি মোরে

  • बारद्वश्cशौब्रय भूकूझे ।” অমুকুল মূৰ্ত্তিমান অকবিতার স্থায় ঘরে প্রবেশ করিয়া স্বরেশের হাত হইতে বইখানা কাড়িয়া দূরে চেয়ারের উপর দুড়িয়া দিল। বাহিরে টপ টপ করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছিল—

ততক্ষণ বোস এখানে । অনুকূল নিজের আধভিজা পাঞ্জাবীটা টান মারিয়া খুলিয় ফেলিয়া দিয়া চৌকির এক ধারে বসিয়া পড়িয়া বলিল, “গাৰু গাক ক’রে টেচাস নে ভাই-থিদেতে পেট জলে যাচ্ছে আমার, সহ হবে না। ডাক দিকিনি বৌদিকে একবার, দুঃখ জানাই—অচিরে ফল পাব সন্দেহ নেই। সত্যি সারাদিন খাই নি রে স্বরেশ–বেটা বজাত চাৰুর আচ্ছা জব্ব করেছে জামায় আজ । ওটাকে আর দূর না করে দিলে চলছে না। কাল আমাকে মাছি খাইয়ে মারছিল—এই কলেরার সময়, দুধ খেতে গিয়ে দেখি কিনা তার ভেতর মরা মাছি। তাইতে একটু বকেছিলাম, সেই জন্যে নবাব-পুত্তরের এমন রাগ হ’ল যে আজ সারাদিন এত ডাকাডাকি হাকাইকি— কিছুতে নিজের বিছানা ছেড়ে উঠল না । বলে কিনা আমার পেট দরদ করছে। এদিকে সারাদিনে বার চার-পাচ ষ্টোভে চ ক'রে করে খেয়ে আমারও পেটে এখন দরদ ওঠবারই জোগাড় । কিছু খেতে না দিলে ত আর বঁচিব नां श्रांस * বন্ধুর দুৰ্গতির ইতিহাস শুনিয়া স্বরেশ কবিতা ভুলিয়া উঠিয়া বসিল। বলিল, “আচ্ছা, কেন বল তো তোর এ দুর্দশ ? এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এলি শেষটা খেতে ? কি বিপদ। নিজের একটা ঘরসংসার পাত না বাপু এবার। ঘরে অন্নপূর্ণ প্রতিষ্ঠা কর, কোনও কষ্ট আর পেতে হবে না—অস্ততঃ খাওয়া-দাওয়ার আরামের বিষয়ে তো নিশ্চিস্ত হবি ।” তাহার পর উঠিয়া স্ত্রীকে ডাকিয়া বলিল, “ওগো শুনছ ? অমুকুল খাবে আজ এখানে—ভাল ক'রে কিছু রোধে ওকে খাওয়াও । খিদেতে ও চোখে অন্ধকার দেখছে—একটু শীগগির করে করে। কিন্তু যা করবে।...আর, আয় রে অন্ম আয় তাস খেলা যাক তোর খিদের কষ্ট ভোলাতে । যা বৃষ্টি আসছে—দোকানে তো এখন যাওয়া যাবে না।” অপর্ণ রাধিতে এবং রাধিয়া খাওয়াইতে ভালবাসে ; এবং জাহার্ষ্য বস্তু সম্বন্ধে অমুকূলের ষে একটু দুৰ্ব্বলতা আছে তাহা এই কয় মাসের পরিচয়েই অপর্ণার জানিতে বাকি নাই। তাই তাহাকে রাধিয়া খাওয়াইতে অপর্ণার বড় আনন্দ নিজের স্বামীর ত খাওয়ার বিষয়ে ভালমদের এতটুকুও যদি জ্ঞান থাকে । তাহার কাছে অমুকূলের উড়ে চাকরটার জঘন্ত হাতের রান্নাও যা, অপর্ণার এত যত্নের রান্নাও ভtহাই—বিশেষ কোনও পার্থক্য আছে বলিয়া বোধ হয় না। যাহা পাত্রে দেওয়া যায় সুরেশ মুখ বুজিয়ী তাহাই নিঃশেষে খাইয়া উঠিয়া পড়ে। অপর্ণ যেদিন সাং করিয়া বিশেষ কোনও নূতন ব্যঞ্জন রাধে, সেদিন নীরবে খাওয়া শেষ করিয়া মুরেশ উঠিয়া পড়িলে সে ক্ষুঞ্জমনে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করে, “তরকারিট বুঝি আজ ভাল হয় নি?” স্বরেণ