পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ “ষণহণ পাই তাহন চাই না’ soግ বলে, “কোনটা ? ঐ বাটিতে যেটা দিয়েছিলে, না থালায় ঘেটা ছিল ? কেন—বেশ তো হয়েছে। সবই বেশ হয়েছে।” অপর্ণ আর কিছু বলে না, কিন্তু মনে মনে ভাবে, “কি মানুষ বাপু খাইয়ে যদি এতটুকু তৃপ্তি আছে।” শুধু অমুকুল যেদিন এ-বাড়ীতে খায় সেদিন অপর্ণার রান্নার স্থখ্যাতিতে ঘর ফাটাইয়া দেয়। “কই বৌদি, আমুন জামুন, ঐ মাছের দমট আরও নিয়ে আস্থন --- কি রে স্বরেশ তুই কি ঘোড়া নাকি ? অমৃতে আর ঘাসে তফাৎ বুঝিস নে ? বেগুনভাজাট সবট। খেলি আর এমন মাছের দমটা এখনও অর্ধেকটা পড়ে ? --নাঃ, বৌদি তোকে রোজ রোজ অমৃত খাইয়ে খাইয়ে দেখছি একেবারে মাটি ক'রে দিয়েছেন । খেতে হ’ত আমার চাকরটার রায়া রোজ রোজ তো বুঝতিস এর আদর ---না বৌদি, দম জার অত বেশী দেবেন না ; চাটনিটা ভাবছি আর একটু নেব । পেটেণ্ড তো আবার ধরণ চাই কি না। চমৎকার রান্না হয়েছে। এদিকে আবার পাত্ত্বয়া যে-রকম সাজিয়ে দিয়েছেন—জানি তো আপনার হাতের পাত্তস্থা কি জিনিষ—ও তো পেট ফেটে গেলেও অামি পাতে ফেলে রেখে উঠতে পারব না। আপনার কাছে খেতে এলে আমার মহা সমস্যা হয় দেখছি—কোনটে ফেলি, কোনটে খাই ।” অপর্ণ আনন্দিত হাসিমুখে বলে, “একটাও ফেলবেন না, বসে বসে খান, ওটুকু বেশ খেতে পারবেন। বেশী তো দিই নি কিছুই। আপনি খাবেন বলেই যা যা ভালবাসেন রেখেছি, ফেলে রাখলে আমার মনে কষ্ট হবে না ?” স্বরেশ হাসিয়া বলিল, “অমুকুলটা যে পেটুক-ওই ঠিক ব্ৰাহ্মণের নাম রেখেছে। তুই বাপু একটি রাধুনী বাম্নী বিয়ে ক’রে আনিস। ভবানীবাবুর আই-এ পাস করা মেয়ের কথা ষে সেদিন বলছিলি, ওদিকে ঘোষিস না । কি করবি তুই কাব্য-জানা বেী নিয়ে । তার চেয়ে মাছের দম জানে কিনা সেটা খোজ নিস বরং—কাজে লাগবে I* অহঙ্কুল মহা উৎসাহে মুখে গ্রাস তুলিতে তুলিতে বলিল, "দাদা, ওসব তামাশা রাখ। ঘরে পেয়েছ অন্নপূর্ণ, এখন তাই তামাশা করছ, খাটে গুয়ে স্বর করে কবিতা পড়ছ। বিদ্বেতে জলভ পেট আমার মত, তো দেখতাম ওসব তোমার কোথায় থাকে ৷” কিছুদিন পূৰ্ব্বে, অমুকুলের মনে আছে স্বরেশের সংসারের অবস্থাও তাহার অপেক্ষ বিশেষ কিছু ভাল ছিল না। তাহারও গৃহে তখন প্রতিদিন আলো জলিত না এবং মাসে এমন পাচ-সাত দিন ভূত্যের অনুপস্থিতির কল্যাণে বাজার হইতে পুরী কচুরি আনিয়া ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করিতে হইত। আজ অপর্ণার গৃহিণীপনায় স্বরেশের রাজার হাল দেখিয়া এইবার অনুকূল বিবাহ করিবার জন্ত উঠিয়া পড়িয়া লাগি৷ গেল এবং পছন্দ করিয়া ইন্দুকে বিবাহ করিয়া গৃহে আনিয়া

কল্যাণী হস্তের সেবাধত্বের প্রত্যাশায় প্রফুল্প হইয়া

키1 অনুকূলের আত্মীয়স্বজনের বালাই ছিল না—ইন্দু প্রথম } হইতেই একেবারে এক স্বামীর ঘর করিতে আসিল । স্ত্রীকে জানিয়া ঘর-সংসার বুঝাইয়া দিয়া অমুকুল বাক্সের চাবি ইন্দুর হাতে দিয়া বলিল, “স্বরদের সব কি রকম অগোছাল দেখছ তো ? চাকরটাকে কত বুঝিয়ে গিয়েছিলাম ষে তুমি আসবে, সর্ব যেন পরিষ্কার ক’রে রাখে—তা উড়ের বুদ্ধি কিনা—এর নাম গোছান ! তোমার কত কষ্ট হবে এখন এসব গুছিয়ে-গাছিয়ে নিতে। আমি যদিও খুবই অকৰ্ম্মণ্য কিন্তু তবু তোমাকে সাহায্য করতাম ইন্দু-কিন্তু কি করব, ক’দিনের ছুটি নিয়েছিলাম, আজ তো আর দোকানে না গেলেই নয়। এক স্বরেশ হাবুডুবু থাচ্ছে বোধ হয়। কিন্তু আজ তুমি এ-সব নিয়ে খেটে না বেশী— ট্রেনে এসেছ, রাত্রে ঘুম হয় নি ভাল ক’রে, সকাল সকাল খাওয়া-দাওয়া সেরে বিশ্রাম কর । ওসব গোছগাছ পরে ক্রমে হবে তাড়া তো নেই কিছু।” অমুকুল আহারাদি সারিয়া দোকানে চলিয়া গেলে চাবির গোছা হাতে করিয়া গৃহিণীপনায় অনভ্যস্ত ইন্দু এঘর-ওম্বর ঘুরিয়া বেড়াইয়া বুঝিয়া উঠিতে পারিল না কোন জায়গায় কি দ্রব্য গুছাইতে হইবে । বেশ তো সব রহিয়াছে। গৃহস্থালী বলিতে তিনখানি মাত্র ঘর—ইন্দু সকল ঘরে ঢুকিয়া চুকিয়া স্বামীর এই অপরিচিত সংসারের সহিত নিজের পরিচয় স্থাপন করিতে লাগিল । যখন কোথাও কিছু গুছাইবার মত খুজিয়া পাইল না, তখন ইন্দু নিজের বাক্সগুলা খুলিয়া গুছাইতে বসিল । মনে হইল, ঠিক কথা—ইন্দুর নিজের জিনিষপত্র তো এতক্ষণ খোলা হয় নাই, ইহাই গুছাইবার কথা নিশ্চয় অমুকুল বলিয়া গিয়াছে । কাপড়গহনা জিনিষপত্র বিবাহে ইন্দু এমন কিছুই বেশী পায় নাই যাহা গুছাইতে অনেক সময় লাগিবে। শুধু একটি মস্ত প্যাকিং বাঙ্গ ভরিয়া ভবানীবাৰু কস্তার স্থল ও কলেজ পাঠ্য সমস্ত পুস্তকের সহিত নিজের যত্নসঞ্চিত অনেক বই ইন্দুর সহিত দিয়াছিলেন। সেই বাক্স খুলিয়া ‘পিতার স্বহস্তে সজ্জিত বইগুলি দেখি ইন্দুর চোখ দিয়া ঝর কর করিয়া জল পড়িতে লাগিল। প্রতি বইয়ে ভবানীবাৰু স্বহস্তে ইন্দুর নাম ও তারিখ লিখিয়া দিয়াছেন। ইহার ভিতর কত বই সে পিতার সঙ্গে একসঙ্গে পড়িয়াছে—