পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ স্বাত্রী 8'ss বলিল, “রাতদিন পড়ি না তো। আজ বাবা নতুন একখান বই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন—তাই। তা তুমি এসে আমাকে ভাকলে না কেন ? আমরা তো দু-জনে পড়তে পারতাম— আমি তো তাই ভেবেও ছিলাম।” অনুকূল রাগিয়াই ছিল। বলিল, “কবিতা-টবিতা অত আমার ভাল লাগে না । সেই পাচ বছর বয়স থেকে আ আ ক খ স্বরু করেছিলাম, আর কুড়ি বছর বয়েস অবধি তো রাতদিন বইপড়ার অত্যাচারে জীবনে আর মুখ ছিল না। এখন এই মাত্র কিছুদিন হ’ল পড়ার হাত থেকে সবে রেহাই পেয়েছি। এখন তুমি এসেছ, তুমি কোথায় ঘরসংসার করবে, আমরা দু-জনে গল্পস্বল্প করব, আরাম করব—ত না, এখনও সেই বই আর বই । আমার তো দেখলে বিরক্ত লাগে !” ইন্দু মুখখানি নত করিয়া চুপ করিয়া অপরাধিনীর মত বসিয়া ছিল—বসিয়াই রহিল। জবাব দিবার চেষ্টামাত্র করিল না । সংশয়ের অন্ধকারে লুপ্ত ছিল স্থদ্বর্গম পথ তীক্ষ-ক্ষুর-ধার সম, সে পথে তোমার যাত্র স্থক ; জ্ঞানের প্রদীপ জালি, পুরোগামী হে পুরোধী গুরু অজানার অভিযানে চালাইলে শঙ্কাহীন রথ। আলোকের সম্ভাবনা স্বপ্ত ছিল তমিশ্র’-জঠরে ; গতিহীন মহাশূন্তে মৃত্যু-নীল, অমৃতের লাগি ; আঁধারে আবেগ জাগে, ঈথারে তরঙ্গ উঠে জাগি ; স্বয়ম্প্রকাশ উৰা উদ্ভাসিত উদয় শিখরে। “এক প্রাণ নিত্য কাল স্পন্দমান জড় ও চেতনে” শিহরি গুনিল সবে ; মৃতদেহ ফিরে পেল প্ৰাণ ; কণ্ঠেতে ফুটিল বাণী ; স্থির চক্ষে পড়িল নিমেষ । স্বত্যুহীন সেই প্ৰাণ ; সে ধাত্রা হয় নি আজও শেষ ; আবৰ্ত্তিত গতিবেগে জীবনপ্রবাহ জ্যোতিষ্মান গ্রহ হতে গ্রহাস্তরে সঞ্চারিল ভুবনে ভুবনে । অনুকূল ঘরে পায়চারি করিতে করিতে জাবার বলিল, “তোমারও কি ইচ্ছে করে না ইন্দু স্বরেশের স্ত্রী দেখ তো কি রকম সংসার করছে। ওরও তো এই সেদিন মাত্র বিয়ে হয়েছে, কিন্তু যেমন রান্নাবান্নায়, তেমনি ঘরদোর গোছনিয়— স্বরেশদের সংসার দেখ, আর এ বাড়ীটি দেখ ! সেদিন ওদের ছুটি খেতে বলেছিলাম--তা শেষে খেতে বসিয়ে লজ্জায় মারা যাই আর কি ! এখন তোমার সংসার হয়েছে, সেটা দেখাও তো একটা কৰ্ত্তব্য—এখন রাল্লাবান্না কাজকৰ্ম্ম কিছু না ক’রে কেবল বই নিয়ে বসে থাকাটাই কি ভাল ? লেখাপড়া তো এত শিখেছ—কিন্তু এটুকু বোঝ না কেন ?” অমুকুল অন্ত ঘরে চলিয়া গেল। বাহিরে অবিশ্রাস্ত বর্ষণখার সে রাত্রে আর থামিল না। নিদ্রাহীন শয্যায় পাশাপাশি দুইটি বাড়ীতে দুই স্বামী ও দুই স্ত্রী নিজ নিজ ভাগ্যকে ধিক্কার দিল ।