পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ এক কোণায় ছোট ছোট কয়টি জীর্ণ এক-চালা ঘর— সেগুলিতে কৃষিকাজ-সংক্রাস্ত জিনিষপত্র রাখা হয়। পাশে গোলাঘর। ইহার চালের রং সবুজ। কৃষিক্ষেত্রটি খুবই ছোট হইলেও ইহা যে আদর্শ স্থানে অবস্থিত সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। ইহার এক পাশে জলপূর্ণ চোরাভূমি এবং সেই জন্যই হয়ত স্থানটির চোরাবালি নাম হইয়াছে । জলাভূমি হইতে কুয়াশ। উঠিতেছে, সেই কুয়াশার উপর চাদের অালো রূপার মত ঝলমল করিতেছে । পাহাড়ের পাদদেশের কৃষিক্ষেত্র, ঘরবাড়ীগুলি এবং সাপের মত ষ্ঠাকাবাকা সরু নদীটি চাদের আলোতে বেশ পরিষ্কার দেখা যাইতেছিল । নদীর জলস্রোতের উপর কুয়াশ যেন পাতলা ধোয়ার মত গড়াইয়া চলিয়াছে। এখান হইতে পাহাড়ের নিম্নদেশ খুব দূবে নহে। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়, নীচের ঘরবাড়ীগুলি যেন কোন অচেনা রাজ্যের বলিয়া মনে হইতেছিল, যেন পাহাড়ী গাছপালা ঐ অচেনা দেশে জন্মায় না, জন্মিলেও বঁাচে না । আবার পাহাড়ের বাসিন্দারা ও যেন চিরকালের মত বনাঞ্চলেই বাস করিতে ভালবাসে । মনে হয়, পাহাড়ের উপরের বাসিন্দাদের পক্ষে নিম্নভূমিতে বাস করাটা পাহাড়ের গাছপালা ফলফুল অপেক্ষ বেশ ভাল লাগার কথা নয় । গুডমুণ্ড বৃক্ষলতাহীন, সবুজ তৃণভূমি পার হইয়া ছোট ঘরটির দিকে অগ্রসর হইল। জানালায় কোন পর্দা নাই, জানালার কাচের মধ্য দিয়া ঘরের ভিতরের চিমনীর আগুন বেশ ভাল করিয়াই দেখা যায়। হেলগা ঘরের ভিতর আছে কি না তাহা সে বাহির হইতে দেখিতে চেষ্টা করিল। জানালার পাশে টেবিলের উপর একটি বাতি মিট মিট করিয়া জলিতেছে—পাশে গৃহকর্তা বসিয়া জুতা মেরামত করিতেছেন। অদূরে বৃদ্ধা গৃহকত্ৰী চিমনীর ধারে বসিয়া। চিমনীতে আগুন বেশ জলিতেছে। বৃদ্ধার হাতের কাছে একটি চরকা, কিন্তু তিনি মৃত্তাকাটা বন্ধ করিয়া পাশের শিশুটিকে দোল দিতে আরম্ভ করিয়াছেন। দোলনায় দোল দিতে দিতে আকার-ইঙ্গিতে তিনি যে শিশুটির সঙ্গে বাক্যালাপ করিতেছেন, তাহাও গুড়মুণ্ডের কানে পৌছিল। গৃহকত্রীর সুখের উপর বয়সের দাগ ফুটিয়া উঠিয়াছে, দেখিলে শুষ্ক

  • ३--> 8

তরাইয়ের তরুণী 83లీ কঠিন বলিয়া মনে হয়। কিন্তু শিশুকে দোল দিতে দিতে বৃদ্ধার মুখে ষে হাসির রেখা ফুটিয়া উঠে, যে অসীম স্নেহের আভা উজ্জল হইয়া উঠে তাহাতে মনে হয় যেন তিনি নিজেই শিশুটির মা । গুডমুগু হেলগাকে খুজিতেছিল, কিন্তু ঘরের ভিতর কোথাও তাহাকে দেখিতে পাওয়া গেল না । অবশেষে সে স্থির করিল, বাহিরে দাড়াইয়া হেল্গার জন্ত অপেক্ষ কfরবে। হেলগা যে এখনও বাড়ী ফেরে নাই তাহা তার নিকট খুব আশ্চর্ষ্যের বিষ বলিয়া মনে হইল । তাহা হইলে কিসে ফিরিবার পথে বিশ্রাম বা আহারের জন্ত কোন বন্ধুর বাড়ীতে উঠিয়াছে ? কিন্তু সে যদি আপন ঘরে রাত কাটাইতে চায়, তাহা হইলে যে শীঘ্রই তাহাকে ঘরে ফিরিতে হইবে। গুডমুণ্ড কান পাতিয়া উঠানের মাঝখানে বেশ কিছুক্ষণ দাড়াইয়া রহিল, কিন্তু কাহারও পায়ের শব্দ কানে আসিল ন—চারি দিকে গভীর নিশুন্ধতা ! এমন কি বাতাসের গতি পৰ্য্যস্ত বুঝা যায় না। তাহার মনে হইল এমন গভীর নীরবতা সে পূৰ্ব্বে কখনও অনুভব করে নাই ; ষেন শাস্ত বনরাজি শ্বাস বন্ধ করিয়া কাহারও আগমন প্রতীক্ষা করিতেছে । পাহাড়ী বনের পথে এখনও কেহই চলে নাই । গাছের পাত পর্যস্ত নিশ্চল । নি:শব পদক্ষেপে সঞ্চরমান কোন পথিকের পায়ে লাগিয়া পাথরের কুড়ি পৰ্য্যস্ত গড়াইয়া যায় নাই। গুণ্ডমুণ্ডের চিস্ত হইল—“আমার জানিতে ইচ্ছা করে, হেলগা এখানে আমাকে দাড়াইয়৷ থাকিতে দেখিলে কি মনে করিবে ! সে হয়ত ভয়ে চীৎকার করিয়া বনে ঢুকিবে, সারা রাত্রি আর বাড়ী ফিরিতে সাহস কfরবে না।” আবার তাহার মনে হইল, কেনই বা সে অকস্মাৎ এই পাহাড়ী তরুণীর ব্যাপার লইয়। এত মাথা ধামাই’তেছে । দুপুরবেল গুড়মুণ্ড আদালত হইতে বাড়ী ফিরিয়া অস্তান্ত সকল দিনের মত সোজাস্থfজ মায়ের নিকট গিয়া, সারাদিন কি দেপিয়াছে না-দেখিয়াছে তাহার বর্ণনা দিয়াছে। গুড়মুণ্ডের মা গুণবতী বিদুষী মহিল, তাহার মনটা খুব উদার । তিনি ছেলের সঙ্গে এমন ব্যবহার করিতেন, যার ফলে শুভমুও ছোট শিশুর মত এখনও মাকে ।