পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ তরাইয়ের তরুণী


محتاج تحتیاجی

“এখানে বসা যায় কি ?” “এই ষে কাঠের গুড়িটা।” “তুমি ইহার উপর শাস্ত হইয়া বস।” হেলগা স্বশীল বালিকার মত তাই করিল। এবার গুভমুণ্ডের মনে হইল ষে, তরুণী শাস্তভাবে তাহার কথা শুনিবে। সে ভূমিকা করিয়া কথা আরম্ভ করিল। “শোন, এখন আর র্কাদিতে পারিবে না ।” বলিয়াই বুঝিল, কাদার কথাটা না তুলিলেই ভাল হইত। কারণ, তখনই তরুণী শুভমুণ্ডের বাহুর উপর মাথ। হেলাইয়া দিয়া আরও বেশী করিযু ফোপাইয়া কাদিতে লাগিল । গুডমুগু এবার প্রায় ধৈর্য্যহীন হইয়া আদেশের স্বরে বলিয়া উঠিল, “কঁাদিও না। তোমার চেয়েও দুঃখী এ সংসারে অনেক আছে ।” “ন, আমার চেয়ে অমৃগী কেহ হইতে পারে না।” “তোমার বয়স অল্প, শরীরেও বেশ শক্তি আছে । আমার মার অবস্থা জান ? বাতে তিনি এমন হইয়াছেন যে নড়াচড়া পৰ্য্যস্ত করিতে পারেন না ; কিন্তু তাই বলিয়া তিনি কোন দুঃখ প্রকাশ করেন না ।” “তঁাহাকে ত আমার মত সকলেই ছাডিয়া যায় নাই ?” “তুমিঙ ত এক নও। আমার মার সঙ্গে তোমার কথার আলোচনা করিয়ছিলাম, এবং তিনিই আমাকে তোমার নিকট পাঠাইয়াছেন।” এবার তরুণীর কাল্প প্রায় থামিয়া আসিদ্ধাছে । আবার দারুণ নিস্তব্ধতা—যেন সকলেই কাহারশু আগমন-প্রতীক্ষায় আছে । “আমার মা তোমার নিকট আমাকে পাঠাইয়াছেন, যদি তুমি আগামী কাল নীচে নামিয় তাহার সহিত দেখা করিতে পার । তিনি তোমাকে দেখিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন এবং জানিতে চান, তুমি আমাদের বাড়ীতে কাজ করিতে রাজী আছ কি না ।” “তাই নাকি ?” *ই্য, তিনি তোমাকে দেখিতে চান ।” *তিনি কি জানেন ধে -যে—* "আঙ্কের তোমার সম্বন্ধে যা জানে, আমার মাও ততটুকু জানেন।” তরুণী আনন্দের উচ্ছ্বাসে ও বিস্ময়ে অভিভূত হইয়া হঠাৎ উঠিয়া দাড়াইল এবং পর মুহূৰ্ত্তে গুডমুণ্ড অনুভব করিল, এক জোড়া বাক তাহার গলা বেষ্টন করিয়া ধরিয়াছে। গুডমুণ্ড ইহাতে ভয় পাইয়া গিয়াছিল। একবার ভাবিল, তরুণীকে জোর করিয়া সরাইয়া দেয়। পর মুহূর্তেই নিজের মনকে সংযত করিয়া শুদ্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল। সে ঠিকই বুঝিয়াছিল যে, তরুণী আনন্দে এত আত্মহারা হইয়াছে যে সে কি করিতেছে তাহ নিজেই বুঝিতেছে না। এত দুঃখের ঘাত-প্রতিঘাত ও নৈরাশ্বের সময়ে তাহার অতিবড় শক্রও তাহাকে অনুকম্প8দেখাইলে সে হয়ত তাহারও গলা জড়াইয়া ধরিতে পারিত। গুডমুণ্ডের বুকের উপর মাথা রাখিয়া তরুণী বলিতে লাগিল— “তিনি কি সত্যই আমাকে কাজে নিযুক্ত করিতে চান ? তাহা হইলে যে আমি বঁচিয়া যাই ।” এই বলিয়া সে আবার ফোপাইয়া কঁদিতে স্বরু করিয়াছে—যদিও পূর্বের ন্যায় নিরুপায় ভাবে নহে । সে বলিয়া চলিল-- “আমি আপনাকে সত্য করিয়া বলিতেছি যে, আমি । চোরাবালিতে আশ্রয় লইবার জন্য চলিয়াছিলাম। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ । আপনি আমার জীবন রক্ষা করিয়াছেন।” এ পর্য্যন্ত গুডমুগু অসাড় ও স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয় ছিল, কিন্তু এবার তাহার প্রাণে মায়ার সঞ্চার হইয়াছে । সে তরুণীর মাথায় হাত দিয়া চুলগুলি বুলাইয়া দিতে লাগিল । হঠাৎ তরুণী লাফ দিয়া উঠিল—যেন সে স্বপ্ন হইতে জাগিয়া উঠিয়াছে এবং সোজা হইয় দাড়াইয়া বলিল—

  • এখানে আসার জন্য আপনাকে অশেষ ধষ্ণুবাদ ।”

তাহার মুখ, এমন কি গুডমুণ্ডের মুখও লজ্জায় লাল হইয়া উঠিল ।

  • আচ্ছা, তাহা হইলে কাল তুমি আমাদের বাড়ীতে আসিবে ।”

এই বলিয়া গুডমুণ্ড করমর্দনের জন্ত হাত বাড়াইল । হেলগা বলিল, “আজ আপনার এখানে আসার কথা আমি জীবনে কখনও ভুলিতে পারিব না ।” কৃতজ্ঞতা তাহার লজ্জাকে ঢাকিয়া দিয়াছে। গুডমুণ্ড ।