পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডাক্তারদের বেকার-সমস্যা ও পল্লীর চিকিৎসা ঐধীরেন্দ্রনাথ সাহা আমি মফঃস্বলের ডাক্তার এবং পল্লীগ্রামেই প্রায় পনর-কুড়ি বৎসর যাবৎ ব্যবসায় করিয়া আসিতেছি, কাজেই পল্লীগ্রামের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা-প্রণালী সম্বন্ধে কিছু সাক্ষাৎ-পরিচয় ও অভিজ্ঞতা আছে বলিয়া দাবি করিতে পারি, তাই ডাক্তারদের বেকার-সমস্ত ও শহর-গ্রীতি সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করিতে সাহসী হইয়াছি। আজ শিক্ষিত ডাক্তারদের মধ্যে বেকার-সমস্ত প্রবল জাকার ধারণ করিয়াছে এবং শহরে শহরে ডাক্তারদের মধ্যে স্বীন প্রতিযোগিতার কথা শুনিলে লজ্জায় কুষ্ঠিত হইতে হয়, অথচ পল্লীগ্রামে ডাক্তার পাওয়া স্কুরুহ। এই কারণে মাঝে মাঝে সংবাদপত্রে ও চিকিৎসকদের সভা-সমিতি ও কনফারেন্স ইত্যাদিতে চিকিৎসকদিগকে শহরের বেকারসংখ্যা বৃদ্ধি না করিয়া পল্লী-অঞ্চলে বসিয়া গ্রামের উন্নতি ও নিজের অন্ন-সমস্তার সমাধান করিবার অতি সহজ উপদেশ দেওয়া হয় । যাহারা খবরের কাগজে লিখেন অথবা কনফারেন্স ইত্যাদিতে বকৃত করেন, বড়ই দুঃখের বিষয় তাহারা হয়ত পল্লীগ্রামের প্রকৃত অবস্থা অবগত নহেন। স্বাস্থ্যের কথা বাদ দিলেও বাংলার পল্লীগ্রামগুলি সাধারণতঃ দারিজা, কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কেন্দ্ৰস্থল বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। কিন্তু এসবগুলি বৰ্ত্তমানে পল্লীগ্রাম ত্যাগ করিয়া ডাক্তারদের শহরে যাওয়ার একমাত্র কারণ নহে । কারণ . অনেক ভাজার নিজে পঞ্জীগ্রামের অধিবাসী হইয়াও বহু অর্থব্যয় ও শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করিয়া ভাক্তারী পড়িয়া কিছু উপার্জন করিতে না পারিলেও শহরে গিয়া বেঙ্কারের জল বৃদ্ধি করিয়া বসিয়া থাকে, অথচ পল্লীগ্রামে আসিতে চাহে না । ইহার কারণ কি নিছক শহর-গ্রীতি ? শিক্ষিত ডাক্তারদের পল্লীগ্রামে চিকিৎসা-ব্যবসা জারভ করিবার প্রবল অন্তরায় হাতুড়ে ডাক্তারালের সংখ্যাবৃদ্ধি"। ইহার প্রায় প্রত্যেক পল্লীগ্রাম জুড়িয়া বসিয়া আছে। গ্রামে গিয়৷ ইহাদের সঙ্গে প্রতিষোগিতা করিয়া আত্মসম্মান বজায় রাখিয়া অল্পসংস্থান করা অনেক শিক্ষিত ডাক্তারের পক্ষেই সম্ভব নহে। এই সব হাতুড়ে স্বাক্টর জন্ত বাংলার, বিশেষতঃ উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় ও ঢাকায় দুই-তিনটি প্রাইভেট ব্যবসাদারী স্কুল আছে। পল্লীগ্রামের যেসব বয়াটে ছেলে কোন দিকেই কিছু স্ববিধ করিতে পারে না, তাহারা এই সব স্কুলে দুই-এক বৎসর কাটাইয়া নিজদিগকে খুব বড় ডাক্তার বলিয়া পরিচয় দিয়া চিকিৎসা আরম্ভ করিয়া থাকে। পাশাপাশি কোন শিক্ষিত ভাক্তার থাকিলে ইহার নানা উপায়ে তাহাদিগকে অপদস্থ ও বিপন্ন করিবার চেষ্টা করিয়া থাকে । উকীল হইতে হক্টলে আইন পড়িয়া পাস করিতে হয়, মাষ্টারী অখবা অচুরূপ ব্যবসা করিতে হইলে বিশ্ববিদ্যালয় হইতে যোগ্যতার নিদর্শন লওঁয়ার প্রয়োজন হয়, অথচ ইহাদের ভুলে লোকের হয়ত সামাগু মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি হইতে পারে কিন্তু যাহাঙ্গের সামান্ত ভুলে মৃত্যু পৰ্যন্ত হইতে পারে তাহদের যোগাতার কোন নিদর্শনেরও প্রয়োজন হয় না, ইহা বড়ই আশ্চর্ষ্যের বিষয়। আমাদের এখানেই কতকগুলি শিক্ষিত বেকার ভাক্তার মাসে পনর-কুড়ি টাকাও উপার্জন করিতে পারেন না, অথচ গ্রামে গ্রামে তাহাজের চোখের সামনেই হাতুড়ের নানা উপায়ে প্রচুর উপার্জন করিতেছে। কাজেই গ্রামে বসিলেই ডাক্তারদের বেকার-সমস্তার সমাধান হয় না । আসন্ন মৃত্যু রোধ করার ক্ষমতা ৰখন কাহারও নাই তখন সেই সব ক্ষেত্রে হাতুড়েরা শিক্ষিত ডাক্তারদের দুই-এক বার জানিয়া দেখাইয়া পরে নানা উপায়ে ইহার প্রচারকাৰ্য চালাইয় তাহাদিগকে দূরে রাখিতে চেষ্টা করে। হাতুড়েদের হাতে অনেক ডাক্তারের অসন্মান, এমন কি