পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ংলা-সাহিত্যে ‘পরশুরাম’ ঐকাননবিহারী মুখোপাধ্যায় পরশুরাম শুধু বাংলা-সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ হাস্তশিল্পী নন-বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর হাস্তশিল্পীদের সভায় তার স্থান । সাধারণত, যে-সব হাস্তশিল্পী কেবল হাস্যপ্রধান সাহিত্য স্বষ্টি করেন, তাদের অনেকেরই অসাধারণ আবেষ্টন এবং অতি-অদ্ভূত চরিত্র-রচনার দিকে ঝোক যায়। অন্তত, পাঠকের চিত্তে হাসি জাগানো প্রধান লক্ষ্য থাকার জন্ত অনেক সময় তাদের অতিরঞ্জন এবং অত্যুক্তির মধ্যে এমন একটা কৃত্রিমতার ভাব থাকে যে তাদের লেখা পড়তে পড়তে বাস্তবতার মায় (illusion of reality) wrotto Mato wish ore পারে না, আমরা নিজেদের স্থানকালের সীমাকে ভুলে গিয়ে চিত্রিত চরিত্রদের দলে মিশে যেতে পারি না। এই বাস্তবতার মায়াজাল বিস্তার করার মধ্যেই পরশুরামের বৈশিষ্ট্য। তার লেখা পড়তে পড়তে মনে হয় যেন এ যেমন অকৃত্রিম, তেমনি প্রাণবস্ত। এখানে যেন একটুও অতিরঞ্জন নেই, অত্যুক্তি নেই। অতিরঞ্জন এবং অত্যুক্তি ব্যতীত হাস্যরস রূপায়িত হয়ে উঠতে পারে না। বিশ্লেষণ করে দেখলেই বোঝা যায়, পরশুরাম-সাহিত্যে দুই-ই আছে। কিন্তু শিল্পীর সোনার কাঠির স্পর্শ পাঠকের মনে এমনি মায়াজাল স্থষ্টি ক’রে তোলে যে মনে হয় তার চরিত্রগুলো আমাদের নিতান্ত পরিচিত,–যেন অনেক দিনের প্রতিবেশী। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,* “বইখানি (গড্ডলিকা) চরিত্রচিত্রশালা। মূতিকারের ঘরে ঢুকিলে পাথর-ভাঙার আওয়াজ শুনিয়া যদি মনে করি ভাঙাচোরাই তার কাজ । তবে সে ধারণাটা ছেলেমাইযের মতো হয়,—ঠিক ভাবে দেখিলে বুঝা যায়, গড়িয়া তোলাই তাহার ব্যবসা। মাহুষের অবুদ্ধি বা বুদ্ধিকে লেখক তাহার রচনায় আঘাত করিয়াছেন কি না, সেটা তো তেমন করিয়া আমার নজরে পড়ে নাই। আমি দেখিলাম তিনি মূতির পর মুতি গড়িয়া • ત્રજ્ઞાની, મહાજ્ઞાન, ડર তুলিয়াছেন। এমন করিয়া গড়িয়াছেন যে, মনে হুইল ইহাদিগকে চিরকাল জানি।” পরশুরামের শিল্পদ্ধৃষ্টি যেমন প্রখর তেমনি সজাগ। জীবনকে তিনি নিবিড় করে দেখেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে অামাজের স্বপ্রাচীন সমাজ-জীবন নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এসেছে—তার দিকে দিকে দুৰ্ব্বলতা ও অসঙ্গতি পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। পরশুরামের প্রতিভা এর মধ্যে পেয়েছে স্বষ্টির প্রেরণা। অতি-অভূতের সন্ধান তিনি করেন নি। ব্রহ্মচারী শ্রীমৎ গুণমানন্দ, গণ্ডেরিরাম বাটপারিয়া, রায় বংশলোচন ব্যানার্জি, ব্যাণ্ডমাষ্টার লাটুবাবু, বিরিঞ্চি বাবা, নকুড় মামা, নন্দ—সকলেই এসেছেন আমাদের চিরপরিচিত সমাজ-জীবনের সাধারণ স্তর থেকে। আমাদের পারিপার্থিক জীবনের অতল সিন্ধু থেকে শিল্পী পাকা জহুরীর মত শ্রেণীগত চারিত্রিকতার বিচিত্র উপকরণ আহরণ করেছেন। আর সেই উপকরণ দিয়ে রূপায়িত ক'রে তুলেছেন একটির পর একটি ব্যঙ্গচিত্র। ব্যঙ্গ দু-রকমের-ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত । কোন বিখ্যাত ব্যক্তিবিশেষের দুর্বলতা নিয়ে তিনি কোথাও উপহাস করেন নি। কিন্তু শ্রেণীগত অসঙ্গতি, উদভ্ৰাস্তি, অবুদ্ধি বা দুবুদ্ধিকে ভিত্তি ক'রে তিনি যে কয়েকটি ব্যঙ্গচিত্র একেছেন, মনে হয় জগতের ষে-কোন সাহিত্যেই তা একান্ত বিরল। তীক্ষ, সংযত, সরস ব্যঙ্গশিল্পে পরশুরাম শিল্পীশ্রেষ্ঠ । পরশুরামের ব্যঙ্গচিত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রচ্ছন্নতা এবং ঔদার্ষ্য। মনে হয়, ইংরেজী সাহিত্যে ড্রাইডেন, পোপ প্রভৃতির সাহিত্য-সৃষ্টির ফলে ‘স্তাটায়ার’ শব্দটাকে জড়িয়ে আছে একটা তীক্ষ, অমুদার আঘাতের ভাব। পরশুরামের ব্যঙ্গচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের। কবিরাজী অবুদ্ধি, ভণ্ড ৰাক্ষণের ছত্তি বা আধুনিক তরুণের উদভ্ৰান্তি নিয়ে डिनि উপহাস করেছেন, কিন্তু তার উপহাসের মধ্যে অবজ্ঞার চেয়ে হাসিটাই বড়। "শওঁীর মাঠে তিনি হিন্দুর পুনর্জয়