পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরু ও সঙ্ঘ ঐশরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্য-এশিয়ার দিকৃসীমাহীন মরুভূমির মাঝখানে বালু ও বাতাসের খেলা ৷ বিরামহীন অস্থির চঞ্চল থেলা । রাত্রি নাই, দিন নাই, সমগ্র মরুপ্রান্তর ব্যাপিয়া এই খেলা চলিতেছে । খেলা বটে, কিন্তু নিষ্ঠুর খেলা ; অবোধ শিশুর খেলার মত প্রাণের প্রতি মমতাহীন ক্রুর খেলা। ক্ষুদ্র মামুষের স্থই ক্ষুদ্র নিয়মের এখানে মূল্য নাই ; জীবনের কোনও মূল্য নাই। দয়া করুণা এখানে আপন শক্তিহীন ক্ষুদ্রতায় বার্থ হইয়া গিয়াছে। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার কোনও বিধি-বিধান নাই। কখনও পঞ্চাশ বৎসর ধরিয়া বায়ু ও বালুর দুলক্ষ্য ষড়যন্ত্রে একটি তৃণগুামল নিঝর-নিষিক্ত ওয়েসিস ধীরে ধীরে মরুভূমির জঠরস্থ হইতেছে ; আবার কখনও একটি দিনের প্রচও বালুঝটিকায় তেমনই খামল লোকালয়পূর্ণ ওয়েসিস বালুঙ্গুপের গর্ভে সমাহিত হইতেছে। দূরে বহু দূরে হয়ত আর একটি নূতন ওয়েসিসের স্বচনা হইতেছে। এমনিই অর্থহীন প্রয়োজনহীন ধ্বংস ও স্বমনের লীলা নিরস্তুর চলিতেছে। এই মরু-সমুঞ্জের মাঝখানে ক্ষুদ্র একটি হরিদ্বর্ণ দ্বীপ— একটি ওয়েসিস। দূর হইতে দেখিলে মনে হয়, তৃষ্ণালীর্ণ ধূসর বালুপ্রাপ্তরের উপর এক বিন্দু নিবিড় খামলতা আকাশ হইতে করিয়া পড়িয়াছে। কাছে আসিলে দেখিতে পাওয়! যায়, শতহস্তব্যাসবিশিষ্ট একটি শম্পাঞ্চিত স্থান কয়েকটি খজুর বৃক্ষের ধ্বজ উড়াইয়া এখনও মরুভূমির নির্দয় অবরোধ প্রত্যাহত করিতেছে। খজুর-ছায়ার অন্তরাল দিয়া একটি প্রস্তরনিৰ্ম্মিত সঙ্ঘারামের অৰ্দ্ধপ্রোথিত উৰ্দ্ধাঙ্গ দেখা যায়। মধ্য-এশিয়ার মরুভূমিতে প্রাকৃতিক নিৰ্ম্মমতার কেন্দ্রস্থলে মহাকাঙ্কণিক বুদ্ধ তৰাগতের সঙ্ঘারাম মাখা জাগাইয়ু আছে । এক দিন এই স্থান জনকোলাহলমুখরিত সমৃদ্ধ জনপদ ছিল—দশ ক্রোশ স্থান ব্যাপিয়া নগর হাট উষ্ঠান চৈত্য বিরাজিত ছিল। শত ক্রোশ দূর হইতে সাৰ্ধৰ্বাহ বণিক উইগৃষ্ঠে পণ্য লইয়া মরুবালুকার উপর কঙ্কাল-চিহ্নিত পৰ ধরিয়া এখানে উপস্থিত হইত। ক্ষুত্র রাজ্যে এক জন ক্ষুদ্র শাসনকৰ্ত্তাও ছিল। কিন্তু এখন আর কিছু নাই। এমন কি, যে কঙ্কালশ্রেণী মরুপথে বহিজগতের সহিত সংযোগ রক্ষা করিত, তাহাও লুপ্ত হইয়া গিয়াছে। কিঞ্চিল্গুন পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বে বালু ও বাতাস এই স্থানটিকে লইয়া নৃশংস খেয়ালের খেলা আরম্ভ করিয়াছিল। মরু এবং ওয়েসিসের সীমান্ত চিহ্নিত করিয়া খর্জুর বৃক্ষের সারি চক্রাকার প্রাকারের মত ওয়েসিসকে ঘিরিয়া রাখিয়াছে ; এই সীমান্তভূমির উপর সূক্ষ্ম বালুকার পলি পড়িতে লাগিল । কেহ লক্ষ্য করিল না। দুই-তিন বৎসর কাটিল । সহসা এক দিন একটি উৎসের জলধারা শুকাইয়া গেল । লক্ষ্য করিলেও কেহ গ্রাহ করিল না । আরও অনেক উৎস আছে । দশ বৎসর কাটিল । তার পর এক দিন সকলে সম্রাসে হৃদয়ঙ্গম করিল—ওয়েসিস সঙ্কুচিত হইয়া আসিতেছে ; অলক্ষিতে মরুভূমি অনেকখানি সীমানা গ্রাস করিয়া লইয়াছে। অতঃপর ফাসির দড়ি যে-ভাবে ধীরে ধীরে কণ্ঠ চাপিয়া প্রাণবায়ু রোধ করিয়া ধরে, তেমনই ভাবে মরুভূমি ওয়েসিসকে চারি দিক হইতে চাপিয়া ক্ষুদ্র হইতে ক্ষুদ্রতর করিয়া আনিতে লাগিল। প্রথমে আহার্ষ্য পানীয়ের অপ্রতুলত, তার পর বসবাসের স্থানাভাব হইল। যাহার পারিল পলায়ন করিল ; উক্ট্র-গর্দভপৃষ্ঠে যথাসম্ভব ধনসম্পত্তি লইয়া অস্ত বাসস্থানের উদ্বেপ্তে বাহির হইয়া পড়িল । যাহারা তাহা পারিল না, তাহারা শঙ্কাকুল চিত্তে মরুর পানে তাকাইয়া অনিবার্ধ্য পরিসমাপ্তির জন্ত প্রতীক্ষা করিতে লাগিল । জনপদের জনসংখ্যা অর্ধেকেরও অধিক কমিয়া গেল । মরুভূমির ত্বরা নাই, ব্যস্ততা নাই। নাগ-কবলিত ভেকের স্কায় ওয়েসিস অল্পে অল্পে মক্কর জঠরস্থ হইতে লাগিল । এক পুরুষ কাটিয়া গেল। যাহারা যুবক ছিল তাহারা এই অনিৰ্ব্বাণ আতঙ্ক বুকে লইয়া বৃদ্ধ হইল। কিন্তু স্বটিরও বিরতি নাই ; ধ্বংসের করলে ছায়ার তলে নবতর স্বষ্টি জন্মগ্রহণ করিয়া বদ্ধিত হইয়া উঠিতে লাগিল । এক দিন গ্রীষ্মের তাম্রতঃ দ্বিপ্রহরে দিগন্তরাল হইতে কৃষ্ণবর্ণ আঁধি উঠিয়া আসিল । মরুভূমির এই জাধির