পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوم به প্রবাসী HNOHO সহিত তুলনা করিতে পার পৃথিবীতে এমন কিছু নাই। মহাপ্রলয়ের দিনে গুস্ক জীৰ্ণ পৃথিবী বোধ হয় এমনই উন্মত্ত বালুঝটিকার আবর্তে চুর্ণ হইয়া শূন্তে মিলাইয়া যাইবে । দুই দিন পরে আকাশ পরিষ্কার হইয়া প্রখর সূৰ্য্য দেখা দিল । বিজয়িনী প্রকৃতির সগৰ্ব্ব হাসির আলোয় ওয়েসিস উদ্ভাসিত হইল। দেখা গেল ওয়েসিস আর নাই, পৰ্ব্বতপ্রমাণ বালুকার তলায় চাপা পড়িয়াছে ; কেবল উচ্চ ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত সঙ্ঘারামের অর্ধনিমজিত চুড়া ঘিরিয়া কয়েকটি খর্জুর বৃক্ষ শোকাৰ্ত্ত ভাবে দাড়াইয়া এই সমাধিস্থল পাহারা দিতেছে। মানুষের চিহ্নমাত্র কোথাও নাই। দ্বিপ্রহরে সঙ্ঘের উপরিতলের একটি বালু-সমাহিত গবাক্ষ হইতে অতি কষ্টে বালুক সরাইয়া বিবরবাসী সরীস্থপের স্থায় দুইটি প্রাণী বাহির হইল। মানুষই বটে ; এক জন বৃদ্ধ, দ্বিতীয়টি বলিষ্ঠদেহ যুবা বলিয়া প্রতীয়মান হয়। যুবা বৃদ্ধকে টানিয়া বাহির করিয়া আনিল । তার পরে উভয়ে বহুক্ষণ গবাক্ষের বাহিরে বালুর উপর পড়িয়া দীর্ঘ শিহরিত প্রশ্বাসে মুক্ত আকাশের প্রাণদায়ী বায়ু গ্রহণ করিতে লাগিল। ক্রমে তাহাদের তৃষ্ণ-বিদীর্ণ অধরোষ্ঠে কালিমালিপ্ত মুখে মাতুৰী ভাব ফিরিয়া আসিল। চিনিবার মত কেহ থাকিলে চিনিতে পারিত, এক জন সঙ্ঘস্থবির পিখুমিত্ত, দ্বিতীয় ভিক্ষু উচও। বালুঝটিকা আরম্ভ হুইবার সময় সঙ্ঘের অন্তান্ত সকলেই ভীত হইয়া বাহিরে আসিয়াছিল, তাহারা কেহ বঁাচে নাই ; কেবল এই দুই জন সত্তেঘর দ্বিতলস্থ পরিবেণে অবরুদ্ধ হইয়া পড়িয়াছিলেন, দৈবক্রমে রক্ষা পাইয়াছেন । বালুকা ৰূপ চালু হইয়া সঙ্গের গাত্র হইতে নামিয়া গিয়াছে। উভয়ের বায়ু-ক্ষুধা কথঞ্চিৎ প্রশমিত হইলে তাহার টলিতে টলিতে নিম্নাভিমুখে অবতরণ করিতে লাগিলেন। বাচিতে হইলে জল চাই, সঙ্ঘের পাদমূলে খর্জুরকুঞ্জের মধ্যে একটি প্রস্তরগুহা হইতে প্রস্রবণ নিৰ্গত হইত, সেখানে দুই জনে উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন, প্রস্রবণের মুখ বুজিয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু বালুবদ্ধ উৎসের স্বতঃপ্রবাহ রোধ করিতে পারে নাই ; গুহামুখের বালুক সিক্ত হইয়া উঠিয়াছে। জারও দেখিলেন, সেই সিক্ত সিকতার উপর—দুইটি মানবশিশু। প্রথমটি পাঁচ-ছয় বৎসরের বালক, নিত্রিত অথবা মূচ্ছিত হইয়া পড়িয়া আছে ; তাহার মেরুসংলগ্ন জঠর ধীরে ধীরে উঠতেছে পড়িতেছে। দ্বিতীয়টি অহমান দেড় বৎসরের একটি বালিকা ; শুভ্র নগ্নদেহে একাকিনী খেলা করিতেছে, খর্জুর বৃক্ষের চু্যত পক্ষ ফল কুড়াইয়া খাইতেছে, জার” নীল নেত্র মেলিয়া আপন মনে কলম্বরে হাসিতেছে । মৃত বা জীবিত আর কেহ কোথাও নাই। প্রকৃতির দুরবগাহ রইস্ত প্রভঞ্জনের ধ্বংস-ভাওবের মধ্যে এই দুইটি স্বকুমার জীবন-কণিকা কি করিয়া রক্ষা ? দুই ভিক্ষু প্রথমে বালুখনন করিয়া জগ বাহির করিলেন। এক দও কাল অঙ্গুলি সাহায্যে গুহামুখ খনন করিবার পর উৎসের পথ মুক্ত হইল—উভয়ে অঞ্জলি ভরিয়া জল পান করিলেন । প্রচণ্ড স্থৰ্য্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলিয়া পড়িয়াছে— খর্জুর বৃক্ষের ছায়া পূৰ্ব্বদিগন্তের দিকে দীর্ঘতর অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া কোন অনাদি রহস্তের ইঙ্গিত জানাইতেছে। সঙ্ঘ-স্থবির পিথুমিত্ত একবার এই সমাধিস্তুপের চারি দিকে চাহিলেন ; উর্কে সত্তেঘর বালু-মগ্ন শিখর, নিম্নে তরঙ্গায়িত বালুকারাশি দিকপ্রান্তে মিশিয়াছে। তাহার শীর্ণ গও বাহিয়া অশ্রুর দুইটি ধারা গড়াইয়া পড়িল। শিশু দুটিকে নিজ ক্রোড়ে টানিয়া লইয়া স্থলিত কণ্ঠে বলিলেন— “তথাগত" | অতঃপর মরুভূমির একাস্ত নির্জনতার মাঝখানে, বুদ্ধ তথাগতের সঙ্ঘ-ছায়ায় এই চারিটি মানবজীবনের ক্রিয়া আবার নূতন করিয়া আরম্ভ হইল। স্থবির পিথুমিত্ত বালকের নাম রাখিলেন নিৰ্ব্বাণ। বালিকার নাম হুইল— ইতি । 鬱 并 韃 মাধবী পৌর্ণমাসীর প্রভাতে স্থবির পিথুমিত্ত সন্তেবর এক প্রকোষ্ঠে বসিয়া পাতিমোক্ষ পাঠ করিতেছিলেন । সঙ্ঘের একমাত্র শ্রমণ, ভিক্ষু উচও তাহার সম্মুখে মেরু-যষ্টি ঋজু করিয়া স্থির ভাবে বসিয়াছিলেন। শ্রোতা কেবল डिनिझे । দীর্ঘ পঞ্চদশ বৎসর উভয়ের দেহেই কাল-করাঙ্ক চিহ্নিত করিয়া দিয়াছে। সঙ্ঘ-স্থবিরের বয়স এখন নূনকল্পে সত্তর বৎসর। মুণ্ডিত মস্তকে মেঘহীন চর্শ্বের আবরণতলে করোটির আকৃতি স্থম্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে, দেখিয়া শুষ্ক দাড়িম্বফলের গুয়ে মনে হয়। চক্ষুতারকা বর্ণহীন, দুটি নিম্প্রভ-যেন মরুভূমির উষ্ণ নিশ্বাসে চোখের জ্যোতি নিৰ্বাপিত হইয়াছে। তবু, এই জরা-বিশীর্ণ মূৰ্ত্তির চারি পাশে জীবনব্যাপী সচ্চিত্ত ও গুচিতার মাধুর্ধ্য একটি স্বশ্ব অতীন্দ্রিয় স্ট্র রচনা করিয়া রাখিয়াছে। ত্রিতাপ তাহার চিত্তকে স্পর্শ করিতে পারে নাই । ভিক্ষু উচণ্ডেরও যৌবন আর নাই ; বয়ঃক্ৰম জকুমান পাতাল্লিশ বৎসর। কিন্তু দেহ এখনও সবল ও দৃঢ় । সমাগুরালরেখা-চিহ্নিত ললাটভটে ঘন রোমশ ক্র দুই-একটি পাকিতে আরম্ভ করিয়াছে। চোখের দৃষ্টি কঠোর ও বৈরাগ্যব্যঞ্জক। তাহাকে দেখিয়া মনে হয়, প্রকৃতির সহিত নিরভর যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হইয়াও তিনি পরাভব স্বীকার