পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ඉ‘පුංග কিন্তু তথাপি, এই অস্তমূখী তন্ময়তার মধ্যেও তাহার চক্ষু এবং শ্রবণেন্দ্ৰিয় অলক্ষিতে সতর্ক উৎকৰ্ণ হইয় ছিল । সহসা তাহার বক্ষ বিস্ফারিত করিয়া একটা গভীর নিঃশ্বাস নির্গত হইল । কিছু দিন যাবৎ নিৰ্ব্বাণের মনে এক ভীষণ বিপ্লব উপস্থিত হইয়াছে । যাহারা শিপ্তকাল হইতে একসঙ্গে বদ্ধিত হয়, তাহাদের মনে পরম্পর সম্বন্ধে প্রায় কোনও মোহ থাকে না ; নিৰ্ব্বাণের মনেও ইতি সম্বন্ধে মোহ ছিল না। বরং ইতি স্ত্রীস্বলন্ত নমনীয়তায় নিৰ্ব্বাণকে পুরুষৰ ও বয়োজ্যেষ্ঠতার মর্ধ্যাদা দিয়া সসম্ভ্রমে তাহার পিছন পিছন ঘুরিয়াছে। দুজনে কলহ করিয়াছে, আবার গলা জড়াজড়ি করিয়া খেলা করিয়াছে। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে ইতির দেহে যৌবনের মুকুলোদগম হইয়াছে, আয়ত নীল চোখে স্বষ্টির অনাদি কুহক ফুটিয়া উঠিয়াছে, কিন্তু নিৰ্ব্বাণের মনে ভাবাস্তর আসে নাই। ইতি ষে নারী এ অনুভূতি তাহার অন্তরকে স্পর্শ করে নাই। এই ভাবে পঞ্চদশ বর্ষ কাটিয়াছে । তার পর সহসা এক দিন নিৰ্ব্বাণের মনের কৌমার্ষ্য পরিণত ফলের প্রাস্ত হইতে শীর্ণ পুপদলের মত্ত খসিয়া গেল । সেদিন দ্বিপ্রহরে নিৰ্ব্বাণ একাকী খজুরকুঞ্জে দাড়াইয় উৰ্দ্ধমুখে একটা ভ্রমরের গতিবিধি নিরীক্ষণ করিতেছিল। ভ্রমরট। প্রতি বৎসর এই সময় কোথা হইতে জাসিয়া উপস্থিত হয়, বহু দূরান্তর হইতে বোধ হয় বাতাসের মুখে বার্তা পায় —মঙ্কর খজুরশাখায় ফুল ধরিয়াছে। কৃষ্ণকায় ভ্রমর, পাখায় রামধন্থর বর্ণ; সে গভীর গুঞ্জন করিয়া এক পুষ্পমঞ্জরী হইতে অন্ত পুষ্পমঞ্জরীতে উড়িয়া যাইতেছে, নিঃশব্দে পুষ্পপাত্রে সঞ্চিত রস পান করিতেছে, আবার উড়িয়া যাইতেছে। নিৰ্ব্বাণ উজ্জল কৌতুহলী চক্ষে মুগ্ধ হইয়া এই দৃগু দেখিতেছিল। * * সহস ইতি পিছন হইতে আসিয়া দুই বাহু দ্বারা নিৰ্ব্বাণের গলা জড়াইয়া ধরিল ; উত্তেজন-সংহত স্বরে তাহার কর্ণে বলিল, “নিৰ্ব্বাণ, একটা জিনিষ দেখিবে ? ইতি স্বচ্ছন্দচারিণী, মরুভূমির যন্ত্রতত্র ঘুরিয়া বেড়ায় ; কোথায় বালুর তলে শাখাপত্ৰহীন মূল বা কন্দ লুক্কায়িত আছে, আহরণ করিয়া আনে। মরুর নিম্প্রাণ বক্ষে যাহা কাহারও চক্ষে পড়ে না, তাহা ইতির চক্ষে পড়ে । নিৰ্ব্বাণ ভ্রমরের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিয়া বলিল, *कि f ইতি দুই হন্তে সবলে তাহার মুখ নিজের দিকে ফিরাইল, বলিল, “এস, দেখিবে ,এস ।" বলিয় তাহার হাত ধরিয়া শবরীর মত নিঃশব্দ পদে লইয়া চলিল। নিৰ্ব্বাণ দেখিল, জানন্দ-উদ্দীপনায় তাহার দুই চক্ষু নৃত্য করিতেছে । ওয়েসিসের সীমান্ত পার হইয়া তাহারা মরুভূমির উপর প্রবাসী 令\●$疹 বহুদূর গমন করিল। মধ্যাকাশে জলপ্ত স্থৰ্য্য, চারি দিকে কোটি কোটি বালুকণায় তাহার তেজ প্রতিফলিত হইতেছে। দুজনে নীরবে চলিয়াছে, মাঝে মাঝে ইতি নিৰ্ব্বাণের মুখের পানে প্রোজ্জল চক্ষু তুলিয়া চুপি চুপি দু-একটি কথা বলিতেছে —যেন জোরে কথা বলিলেই তাহার রহস্যময় দ্রষ্টব্য বস্তু মায়ামৃগের ন্যায় মুহূৰ্ত্তে অস্তহিত হইবে। প্রায় এক ক্রোশেরও অধিক পথ চলিবার পর সম্মুখে একটা প্রকাও বালিয়াড়ি পড়িল । সেই বালিয়াড়ির কুর্থপূঠে আরোহণ করিয়া ইতি দিগন্তের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিল, ঐ দেখ ।” অঙ্গুলির নির্দেশ অনুসরণ করিয়া নিৰ্ব্বাণ সহসা বিস্ময়ে নিম্পদ হইয়া গেল। দূরে গিস্তরেখা যেখানে আকাশে মিশিয়াছে সেইখানে একটি হরিদ্বর্ণ উদ্যান,—শুামল তরুশ্রেণী বাতাসে আন্দোলিত হইতেছে, তৃণপূর্ণ প্রাস্তরে মেষ-ছাগ চরিতেছে ; এমন কি, আকাশে নানা আকৃতির পার্থী উড়িতেছে, তাহাদের ক্ষুদ্ৰ দেহ সঞ্চরমান বিন্দুর মত দেখা যাইতেছে। একটি নদী এই নয়নাভিরাম শুমলতার বুক চিরিয়া খরধার তরবারির মত পড়িয়া আছে । বিশ্বয়ের প্রথম অভিভূতির পর প্রতিক্রিয়া আসিল, নিৰ্ব্বাণ উচ্চকণ্ঠে হাসিয়া উঠিল । ইতি অপেক্ষ তাহার জ্ঞান বেশী । 4. ইতি কিন্তু উত্তেজনার আভিশষ্যে নিৰ্ব্বাণের গলা বাহু বেষ্টিত করিয়া প্রায় ঝুলিয়া পড়িল, মূখের কাছে মুখ লইয়া গিয়া ইপিাইতে স্থাপাইতে বলিল, “দেখিতেছ ? নিৰ্ব্বাণ, দেখিভেছ ? কি স্বন্দর । চল, আমরা দুই জনে ঐখানে চলিয়া যাই। আর কেহ থাকিবে না, শুধু তুমি আর আমি –চল চল নিৰ্ব্বাণ !’ স্থিতমুখে নিৰ্ব্বাণ তাহার পানে চাহিল। ইতির পলাশরক্ত অধর নির্বাণের এত নিকটে আসিয়াছিল, যে, কিছু না বুঝিয়াই সে নিজ অধর দিয়া তাহা স্পর্শ করিল। সঙ্গে সঙ্গে তাহার মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল, হৃৎপিণ্ডের মধ্যে রক্ত তোলপাড় করিয়া উঠিল। দেহের অভ্যস্তর হইতে স্বায়ুর সীমান্ত পৰ্য্যস্ত একটা অনিৰ্ব্বচনীয় উীয় অনুভূতি অসহ হর্ষ-বেদনায় তাহাকে নিপীড়িত করিয়া তুলিল। সে খরখর করিয়া কঁাপিতে লাগিল । প্রথম চুম্বনের স্পর্শে ইতি দংশনোদ্যতা সপিণীর মত গ্রীব পশ্চাতে আকর্ষণ করিয়া নিৰ্ব্বাণের মুখের পানে চাহিল। মনে হইল তাহার নীল নেত্ৰ হইতে অগ্নিস্ফূলিঙ্গ বর্বর্ণ হইতেছে। ক্ষণকাল এই ভাবে থাকিয় সে দুরন্ত ঝড়ের মত আবার নির্বাণের বুকের উপর বাপাইয় পড়িল। একবার, ছুইবার, অগণিত বার নির্বাণের অধর