পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●* তা হয়ত ধীরে ধীরে ফেলেছে একটা পুরু যবনিক। — কিন্তু, আধ্য তাকে চিনতে পারবে না ? তাও কি কখনও সম্ভব ? আর সে.-সেও কি আর্য্যকে চিনতে পারবে ? সমস্যাট এবারে তার মনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। হয়ত কোনও অপরিচিত লোককে ঘরে ঢুকতে দেখে সে একটু কুষ্ঠিত হয়ে পড়বে, আর সে ভদ্রলোকটিও হয়ত আশ্চর্যের স্বরে তাকে গিগস করবে এখানে তার কিসের প্রয়োজন। তার পর ••দু-জনেই সমান অপ্রস্তুত । চাকরি নিয়ে স্বত্রত যেদিন চলে গেল, সেদিনকার ৰখা আজও তার বেশ মনে আছে। জার্ষ্য তাকে ভারী গলায় বলেছিল, “কনগ্র্যাচুলেণ্ডনস। কিন্তু তুলিস না ভাই আমাদের ভবিষ্যতের প্ল্যান। তুই তত দিন কিছু টাকা জমিয়ে নে, আর এদিকে আমিও এম্-এ-ট পাস ক’রে নিই। বুঝেছি ...পৃথিবী-ভ্রমণে আমাদের যাওয়া চাই-ই।” উত্তর দিতে গিয়ে স্বত্রতর গলাটা সেদিন ভারী হয়ে গিয়েছিল। সে তাই বিশেষ কিছু বলে নি, শুধু আৰ্যর হাত দুটোয় একটু জোরে চাপ দিয়ে সে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিল যে, না । সে ভূলবে না সে-কথা- কোনও দিন না। ভবিষ্যতের ষে উষ্ণ কল্পনায় কত রাত তারা উৎসাহের আতিশয্যে ন-ঘুমিয়েই কাটিয়েছে, সে কথা ভোলা কখনও কি সম্ভব ? অার যার পক্ষেই সে-কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব হোক না কেন, জার্ধ্যর পক্ষেও তা সম্ভব না, স্বত্রতর

  • 8 R ||

কিন্তু আজ স্বত্রতর মনটা যেন কি রকম কুষ্ঠিত হয়ে উঠল । সে ধেন অপরাধ করেছে"-একটা মারাত্মক অপরাধ ! সে যেন অতি নিষ্ঠুর ভাবে অপমান করেছে নিজের আত্মাকে অপমান • হ্যা, অপমানই ত । ভবিষ্যৎ —তাদের সোনালী ভবিষ্যৎ চিরকালই ত থেকে গেল ভবিষ্যৎ হয়েই ; চিরকালই.ত তা রয়ে গেল কল্পলোকে । এক দিন তারা যেটাকে ধ্রুবসত্য বলে মেনে নিয়েছিল, আজ কিম সেটাই নিষ্ঠুরভাবে প্রমাণিত হ’ল মিথ্যে ব’লে— আশ্চৰ্য মানুষের মন ,স্বত্রত মনে মনে উত্তেজিত হয়ে উঠল, উত্তেজিত হয়ে উঠল কোন এক অদৃগু মহাশক্তির উপর । আর সে নিজেই ত ভবিষ্যৎকে নিৰ্ম্মমভাবে হত্য প্রবাসী SN988 করেছে, বিনিময়ে পেয়েছে শুধু চাকরির নিশ্চিস্ততা আর সংসারের সচ্ছলতা ! কিন্তু কেন এমন হয়, কেন লোকে ভুলে যায় নিজেদের আদর্শের কথা, কেন লোকে ধরা দেয় মিথ্যের জালে, গতানুগতিকের নাগপাশে স্বধোগ ত কত বারই উপস্থিত হয়েছিল, কিন্তু মনে তখন অনুপস্থিত ছিল উৎসাহ । আর আধ্যটাই বা কি রকম ? সেই বা কোন চেষ্টা করেছিল নিজের প্রতিজ্ঞ রাখতে ? সে বলেছিল এম্-এ পাস ক'রে তারা বেরিয়ে পড়বে। যথাসময়ে সে এম্-এ পাস করল, পেল একটা সাধারণ চাকরি ভার পর সে করল বিয়ে। নিমন্ত্রণের চিঠি পাঠাতে সে ভূল করে নি। কিন্তু স্বত্রতর মনে তা বিধেছিল বিধাতার অভিশাপের মত ; লাল খামটাকে সে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে দিয়েছিল। শেষকালে জাৰ্য্যটাই কি না ও-রকম কাও করল । ওই কিনা প্রথমে গতানুগতিকের স্রোতে গা ঢেলে দিল ? এবারে জাৰ্য্যর উপর তার রাগ হতে লাগল---আর্ধার দোষই ত সত্যিই বেশী ! আৰ্য যদি এম্-এ পাশ করে তাকে ডাক্ত বিদেশে পাড়ি দেবার জন্তে, তা হ’লে স্বচ্ছনেই স্বত্রত এখনকার সমস্ত জাল ছিড়ে বেরিয়ে পড়তে পারত। কিন্তু মানুষের মন কি অদ্ভুত | আর্য্যর উপর রাগ হ'লে হবে কি, তাকে দেখবার জন্যে স্বত্রতর ত কই একটুখানিও কম ইচ্ছে নেই। বরঞ্চ সেটা যেন আরও প্রচণ্ড হয়ে উঠেছে। সেটা আগেকার ভালবাসার জন্তে, না নিছক কৌতুহলের খাতিরে, তা হুব্রত হঠাৎ ঠিক করতে পারল না। কৌতুহল...ই্য, কৌতুহল ছাড়া আর কি ? আগেকার ভালবাসার কিই বা অবশিষ্ট আছে ? প্রতিমার হয়েছে বিসর্জন-খড়ের কুত্ৰ কাঠামোটা শুধু মাথা তুলে রয়েছে” আকাশে-বাতাসে কি রকম একটা নিরানন্দ ভাব ! কিন্তু সুব্রতকে আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হ’ল না । বাইরে শোনা গেল কার পায়ের শব্দ, তার খানিক পরেই দরজা ঠেলে ঢুকল এক ভদ্রলোক, শরীরে তার প্রৌঢ়ত্বের শিখিল বাধন, দেহ ঈষৎ স্কুল, দু-পাশের রগের চুল উঠে যাওয়ায় কপালটা বেশ প্রশস্ত বলেই মনে হয়, গায়ে একটা মটকার পাঞ্জাবী, হাতে কয়েকটা বাদামী কাগজের প্যাকেট । স্বত্রত উঠে দাড়াল।