পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

68షి প্রবাসী ১688 “ভাবছি ? না, বিশেষ কিছু নয়। আচ্ছা ভাই, মনে আছে তোর সেই বুড়োর কথা, যাকে জামরা প্রতি সপ্তাহে কিছু ক'রে সাহায্য করতাম ? সেই ষে, যার চোখের চশমা অসম্ভব পাওয়ারফুল ছিল ? মনে পড়ে কি তাকে পয়সা দেবার জন্তে কত দিন আমরা দারুণ রোদে কলেজ থেকে হেঁটে বাড়ী ফিরে পয়স বাচিয়েছি ?” আশ্চর্ষ্য হয়ে আধ্য বলল, “কার কথা বল ত ?... “ও সেই বুড়োটার কথা ? কে জানে ভাই, তার কি হয়েছে। বহু দিন ত তার দেখা পাই নি; খুব সম্ভব সে পটল তুলেছে।” আধ্য একটু হাস্তে চেষ্টা করল। তার উৎসাহহীন ঠাও স্বরে স্বত্রত বেশ একটু আঘাত পেল। কত দিন তারা বলাবলি করেছে, নিজের উপার্জন করতে আরম্ভ করলেই সেই বুড়োকে বেশী রকম সাহায্য করবে। সে যেন এই সে দিনের কথা । আর এরই মধ্যে মানুষের মন গেল এতটা বদলে ?---কই এখনও ত তার মনে হয় সেই বৃদ্ধ যদি তার বাক লাঠিটা নিয়ে কাপতে কাপতে এসে হাজির হয়, আজও সে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করবে। কিন্তু সে দান যে শুধু অমুকম্পার তা নয় । চারি দিকে অন্ধকার বেশ ঘন হয়ে উঠেছে, বাদলা হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠছে জানালার পাতলা পর্দাটা । বহুকাল জাগে ঠিক এই রকম সময়েই এক অন্ধ ভিক্ষুক তার বঁশের লাঠির পরিচিত শব্দ ক'রে এক অদ্ভূত করুণ গানের স্বরে গেয়ে যেত, “বাবা গে। আমি অঙ্ক, আমায় দয়া কর,”.তার গানের আর কোনও পদ ছিল না। কিন্তু “আমি অন্ধ” আর "জামায় দক্ষ কর” এই কটি কথা সে যখন স্থর করে গেয়ে যেত, তারা দু-জনেই তখন হয়ে যেত অন্যমনস্ক, অন্ধের সেই অতিপরিচিত করুণ স্বরে তাদের ছুটি কিশোর প্রাণ এক অব্যক্ত বেদনায় বারে বারে গুম্রে উঠত । স্বত্রত আবার জিজ্ঞেস করল, “আর সেই অন্ধ ভিখারীটার কথা তোর মনে আছে, যে ঠিক এই সময়েই রাস্তায় লাটি ঠুকে স্বর করে গেয়ে যেত...“বাবা গে, আমি অঙ্ক, জামায় দয়া কর " তার সেই করুশ স্বর আজও আমার বেশ মনে আছে। বাংলা দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে সন্ধ্যার অন্ধকারে পার্থীর চীংকারে যখন মুখর হয়ে উঠত নির্জন প্রাস্তর, কত দিন তখন যেন আমার কানে এসেছে এক অন্ধ ভিখিরীর করুণ স্বর•••সে স্বর ছাপিয়ে উঠেছে অন্ত সমস্ত শব্দকে * - আশ্চর্ষ হয়ে আধ্য বললে, “বাববা, এত কথাও তোর মনে থাকে । তুই চলে যাবার পর কয়েক বছর তার গান, (সত্যিই তাকে যদি গান বলা যায় ) শুনেছি। তার পর আমিও আর গুনতে চেষ্টা করি নি, তার গল! আর শোনাও যায় নি। সেও বোধ হয় মারা গিয়েছে - আৰ্য্যর স্বরে কোনও উত্তাপ নেই! সেই অন্ধ ভিক্ষুকের, সেই বৃদ্ধ দরিজের মৃত্যু তার কাছে আজ সামান্ত দৈনন্দিন ঘটনার চেয়ে কিছু মাত্র বেশ নয়। কিন্তু আঠার বছর আগে তারা যদি হঠাৎ এক দিন জানতে পারত সেই অন্ধ ভিক্ষুকের মৃত্যুর কথা, তা হ’লে ব্যাপারটা দাড়াত অন্ত রকম । তখনকার তাদের রাজ্যে অন্ধ ভিক্ষুক, দরিদ্র বৃদ্ধ, এই রকম কত নগণ্য লোকদের আধিপত্য ছিল সব চেয়ে বেশী । কিন্তু আজ যেন তারা সে রাজ্য থেকে আর এক রাজ্যে এসে পৌছেছে! এখনকার অবস্থা... না না, একে আর কোনও মতে রাজত্ব বলা চলে না, এ নিতান্ত সাধারণ এক প্রৌঢ় কেরানীর জীবনযাত্ৰা ! রাজা, • ই্য, তখন তার রাজাই ছিল । আজ হারিয়ে গিয়েছে তাদের রাজত্ব, ধুলোয় , লুটিয়ে পড়েছে তাদের রাজমুকুট । একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস স্বত্রতর বুকের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল ! আজি যেন হঠাৎ তার মনে হ’ল সে চলেছে বুড়ো হয়ে ; আজ সকালেও সে স্বীকার করে নেয় নি নিজের বাৰ্দ্ধক্যের কথা, কিন্তু আধ্যর সংস্পর্শে এসে মনে হ’ল সে যেন বুড়ো হয়ে চলেছে"রক্তে নেই যেন সেই উত্তাপ, সেই উন্মত্ত ছন্দের উল্লাস । , আধ্য একটু যেন অসহিষ্ণু হয়েই বললে, “তুই আত ভাবছিস্ কি রে, সুব্রত ? তোর বাইরেটাও যে রকম ছেলেমানুষ, ভিতরটাও দেখছি তাই ! তা হবে না কেন বল, সংসার ব'লে যে একটা জিনিষ আছে তা ত তুই স্বীকারই কবুলি না। তার পর একটু থেমে অনেকটা যেন আমুনয়ের স্বরেই জাৰ্ষ্য বলল, “অনেক দিন ভ হ’ল, এবার একটা বিন্ধেটিয়ে কর । বয়সের জন্তে ভাবিস কেন...বাংলা