পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ ডক্টর সত্যচরণ লাহার উদ্যোগে প্রকাশিত হইয়াছিল, বিজ্ঞানাচাৰ্য্য মেঘনাদ সাহা তাহাতেই প্রথম নদীসমূহের গতি নিয়ন্ত্রিত করা সম্বন্ধে একটি উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ লেখেন। আমরা সে বিষয়ে ইংরেজীতে কিছু লিখিয়াছিলাম। তাহার পর অধ্যাপক সাহাও নদীনিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধে মডার্ণ রিভিউ পত্রিকায় একাধিক প্রবন্ধ লেখেন । অত:পর, বৰ্দ্ধমানের এক জন মুসলমান ভদ্রলোকের একটি চিঠি উপলক্ষ্য করিয়া তিনি পৌষের প্রবাসীতেও এ বিষয়ে কিছু লিখিয়াছিলেন। র্তাহার এই সকল লেখা দৈনিক কাগজের সম্পাদকেরা দেখিবার অবসর হয়ত পান নাই । যাহা হউক, তিনি নদীনিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধে কলিকাতায় একটি বক্তৃতা সম্প্রতি করায় দৈনিকপত্রসম্পাদকদিগের টনক নড়িয়াছে। যদি কর্তৃপক্ষেরও টনক নড়ে, তাহা হইলে তাহার শ্রম সার্থক হইতে পারে। কর্তৃপক্ষ কিছু করুন বা না-করুন, উদ্যোগী ও ধনশালী বাঙালীরা—যেমন ডক্টর নরেন্দ্রনাথ লাহ!—সাহামহাশয়ের ইঙ্গিত অনুসারে নদীর স্রোতের বেগ হইতে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন দ্বারা বঙ্গদেশকে কিঞ্চিং ঐশ্বর্ধ্যশালী করিবার চেষ্টা করিলেও আচার্ষ্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় কিছু শাস্তিলাভ করিতে পারেন । বিদেশী বিদ্বানদিগকে বিদেশী ভোজ দেওয়া বিজ্ঞানকংগ্রেস উপলক্ষে যে-সকল বিদ্বান ব্যক্তি কলিকাতায় আসিয়াছিলেন, র্তাহাদিগকে কোন কোন ভারতীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ভোজ দিয়াছিলেন । এই ভোজগুলি সাধারণতঃ ইউরোপীয় হোটেলে দেওয়া হইয়াছিল, আহার্ধ্যও ইউরোপীয় ধরণের হইয়াছিল । আমাদের দেশের খুব বিখ্যাত ব্যক্তিরা ইউরোপ আমেরিকায় গেলে কখন কখন তাহাদিগকেও সেখানে ভোজ দেওয়া হয়। সেই সব ভোজ ও আহার্য্য ইউরোপীয় ও আমেরিক রীতি অনুযায়ী হয়, ভারতীয় রীতি অনুযায়ী হয় না । আমাদের কি একটিও এমন হোটেল থাকিতে পারে না, যেখানে আমরা বিদেশী অতিথি-অভ্যাগতদিগকে ভোজ দিলে দেশী আহার্ষ্যবস্তু দিতে পারি? আমাদের সব আহার্ষ্যই বিস্বাদ, অখাদ্য, দুষ্পাচ্য বা উদরাময়জনক बु !

ভারতবর্ষের সাধারণ ভাষা সংস্কৃত উপরে উল্লিখিত নানা ভোজের মধ্যে সংস্কৃতজ্ঞ ডক্টর টমাসকে কুমার নরেন্দ্রনাথ লাহা ষে ভোজ দিয়াছিলেন তাহার উল্লেখ করিতে হইতেছে এই জন্ত যে, ঐ ভোজসভায় কোন কোন ভারতীয় পণ্ডিত বিশুদ্ধ সংস্কৃতে বিশুদ্ধ উচ্চারণ সহকারে বক্তৃতা করিয়াছিলেন এবং ডক্টর টমাস তাহাতে প্রীতি প্রকাশ করিয়া, সংস্কৃত ভারতবর্ষের সাধারণ ভাষা, বিবিধ প্রসঙ্গ-চীনকে সাহাষ্য করিবার চেষ্ট্র। (SN9 বা সংস্কৃতকে ভারতবর্ধের সাধারণ ভাষা করা উচিত, এইরূপ মত প্রকাশ করিয়াছিলেন । অবশু, তাহার এরূপ বলার অর্থ বা অভিপ্রায় ইহা ছিল না, ষে, ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশের লোকের পরস্পরের সহিত কথা বলে সংস্কৃত, বা কথা বলুক সংস্কৃতে । র্তাহার কথার অর্থ আমরা এই রূপ বুঝিয়াছি, যে, যেমন প্রাচীন ভারতের সকল অংশে ংস্কৃতের চর্চা হইত এবং সংস্কৃতে লিখিত ধৰ্ম্মসাহিত্য, কাব্য ও অন্তবিধ সাহিত্য তথায় অধীত হইত, বৰ্ত্তমানেও তেমনই সমগ্রভারতের উদ্দেশে লিখিত গ্রন্থদি সংস্কৃতে লিখিত হইয়া সৰ্ব্বত্র পঠিত হওয়া উচিত। এই ইচ্ছা পূর্ণ না হইতে পারে। কিন্তু ইহা সাধু ইচ্ছা, স্বরূপরাণী নেহরু পণ্ডিত মোতীলাল নেহরুর সহধৰ্ম্মিণী বীরজায়া বীরজননী বীরাঙ্গন ঐযুক্ত স্বরূপরাণী নেহরু পরিণত বয়সে দেহত্যাগ করিয়াছেন । র্তাহার মহৎ জীবনের স্মৃতি ভারতবর্ষকে চিরকাল ঐশ্বৰ্য্যশালী ও গৌরবান্বিত করিয়া রাখিবে, এবং তfহার জীবন হইতে ভারতীয়েরা অনুপ্রাণনা লাভ করিতে থাকিবে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য ঐশ্বর্ষ্যে লালিত তিনি কিরূপ দুঃখ বরণ করিয়া এবং দুঃখ ও অপমান সন্থ করিয়া স্বামীর প্রকৃত সহধৰ্ম্মিণী হইয়াছিলেন, তাহা তাহার পুত্র জৱাহরলালের আত্মচরিতে বর্ণিত হইয়াছে। চীনকে সাহায্য করিবার চেষ্টা জাপানের চীন অধিকার চেষ্টাকে ব্যর্থ করিবার নিমিত্ত চীনের লোকেরা অসাধারণ সাহস ও স্বদেশভক্তি সহকারে যে যুদ্ধ করিতেছে, তাহার দ্বারা তাহারা ভারতবর্ষের মত দেশেরও স্বাধীনতাযুদ্ধ করিতেছে বলিলে কিছুই অত্যুক্তি হইবে না । ভারতবর্ষ এখন পরাধীন বটে, কিন্তু এক পরাধীনতার পরিবর্তে অন্য পরাধীনতা চায় না, স্বাধীনতাই চায়। ভারতবর্ষের এই স্বাধীনতা লাভের জন্য ব্রিটিশ গবন্মেন্টের সহিত অহিংস সংগ্রামই যথেষ্ট হইবে বলিয়া ভারতীয় নেতারা মনে করেন । কিন্তু জাপান যদি ভারতবর্ষ দখল করিতে সমর্থ হয়, তাহা হইলে অহিংস সংগ্রাম দ্বারা জাপানের কবল হইতে মুক্ত হওয়া সম্ভবপর হইবে না। জাপানের লুদ্ধ দৃষ্টি যে ভারতবর্ষের উপরে আছে, তাহা ভারতের ও বিদেশের অনেকেই বলিয়াছেন। অল্প দিন পূৰ্ব্বেও ব্রিটিশ সেনাপতি জেনার্যাল সুর আয়ান হামিণ্টন সে কথা বলিয়াছেন। জাপান যদি চীন অধিকার করিতে সমর্থ হয়, তাহা হইলে তাহার অর্থবল ও সৈন্যবল এত রাড়িবে, যে, তখন ইংরেজদের পক্ষে ভারতব স্বাধিকারে রাখা দুঃসাধ্য হইবে । -