পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক বিশ্বনাথ মেয়েকে কোলে তুলিয়া লইয়া বলিল–পাচ বছর ত হয় নি, কি বল মা ! আমার ধে প্রজাদের কাছে দশ বছর বিশ বছরের খাজনা পাওনা আছে! ম৷ বলিলেন—তোমার পাওনা আছে ব’লে সে ছাড়বে কেন বাবা ! বিশ্বনাথ কোন উত্তর দিল না, সে মেয়েকে নানা ভাবে হাসাইবার চেষ্টা করিতে আরম্ভ করিল। মায়ের বোধ করি আর ধৈর্ধ্য থাকিল ন', তিনি এবার বলিলেন— একটা টাকা—ন—তাই বা কেন ; দেশে কলকে-ফুলের বীজের ত এখনও অভাব হয় নি! বলিয়া সঙ্গে সঙ্গে তিনি উঠিয় দাড়াইলেন। বিশ্বনাথ মেয়েকে কোল হইতে নামাইয়ু দিয়া আবার গাড়ীটা টানিয়া লইয়। বলিল—তোমাকে যেতে হবে না ম, আমিই নিয়ে আসছি কৰেফুলের বীজ । সে আবার বাহির হইয়া গেল । § কিছুক্ষণ ওন্ধভাবে বসিয়া থাকিয়া মা ঈষৎ উৎকণ্ঠার সাইউ বলিলেন—এই দুপুরে না খেয়ে বিশু আবার গেল কোথায় ? অ বিগু ! ঘরের ভিতর হইতে জবাব দিল বধূ,-কি ক’রে জানব বলুন, রাজবংশের মহাপুরুষদের ধার-ধরণই আগাদ ! কথাটায় বিশ্বনাথের মায়ের সর্বাঙ্গ জলিয়া গেল— তাহার সমস্ত ক্রোধটা গিয়া পড়িল বধুর উপর। তিনি গর্জন করিয়া উঠিলেন–কি বললে বৌমা ? এত বড় আপদ্ধা! স্বামীর বংশ তুলে তুমি কথা কও } বধুর শরীরটিও শীতল ছিল না, অস্তরের জালায় সে-ও জলিয়া যাইতেছিল, সে তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল—কেন তুলব. নাম, ওই রাজবংশ দেখিয়েই ত আমার বাপের কাছ থেকে এক কঁাড়ি টাকা নিয়েছিলেন । বিশ্বনাথের মা আর উত্তর করিতে পারিলেন না, • টেগমেচির লঙ্কাকে তিনি বড় ভয় করেন, তিনি নীরবে শুধু *দিতে বসিলেন। নিস্তব্ধ বাড়ী-পুরাতন ভগ্নপ্রায় ৰিভল বাড়ীখানার কোন ফাটলে বসিয়া কয়ট পাঞ্জাবত শুধু বিপ্রহরে বিশ্রমিম্বথে গুঞ্জন করিতেছিল । s i 舉 嶺 繳 রাজপুত্র

রাজবংশ এই কথাটা আজ এ-বাড়ীতে থোটার কথা হইয়া দাড়াইয়াছে, রাজবংশের ইতিহাস এ-অঞ্চলে আঞ্জ উপকথা এবং রাজবংশীয় বরিয়া গৌরব বোধ করাট আজ অপবাদের মত ব্যঙ্গের বন্ধ হইয়া দাড়াইলেও এককালে সমস্তই সত্য ছিল । সত্য সত্যই বিশ্বনাথ রাজবংশের সন্তান। সে রাজবংশ কোম্পানী অথব! ইংরেজের আমলের খেতাবী রাজা নয়, মুসলমান-আমলে যেকালে জমিদারতন্ত্রের উপর রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল সেই আমলের রাজবংশ। মুরশিদ কুলি থার রাজত্বের ইতিহাসের মধ্যে 'ঢেকার’ ‘রায় চৌধুরী-বংশের ইতিহাস একটা অধ্যায়। রাজা রামজীবন রায় বহু কীৰ্ত্তি রচনা করিয়া গিয়াছেন, ইট-কাঠের বাড়ীগুলি আঙ্গ নিশ্চিহ্ন হইয়া গিয়াছে, তাহার নিৰ্ম্মিত বিখ্যাত দেবমন্দিরগুলি ভাঙিয়া নূতন ভক্তে নূতন মন্দির গড়িয়ছে, কিন্তু তাহার সর্বশ্রেষ্ঠ কীৰ্ত্তি এ-অঞ্চলের জলাশয়গুলি আজও জলে টলমল করিতেছে। পশু-পক্ষী-মানুষ, এমন কি বহুবিস্তৃত শস্তক্ষেত্রে শস্তসম্ভার পর্য্যন্ত এই জলে নিত্যনির্মুিত পরিতৃপ্ত হয়। অবশু, সে জলাশয়গুলির মালিক এখন রায় চৌধুরী বংশাবলীর কেহ নয়—তবুও এ বংশের কীৰ্ত্ত সেগুলি এ অস্বীকার করিবার উপায় নাই । যাক, ওসব অতীত কথা, বৰ্ত্তমানে ওসব উপকথারই সামিল এবং ও লইয়। গৌরবও আজ অপবাদের মতই ব্যঙ্গের বিষয়বস্তু। এই জন্যই বিশ্বনাথকে কেহ বলে “রাজকোঙর', কেহ বলে বংশখেটে, তার স্ত্রী পৰ্য্যন্ত বলে রাজবংশের ‘মহাপুরুষ’। আরও কত জনে কত বলে—সমস্ত ংগ্ৰহ করিলে বোধ হয় বিশ্বনাথেরও অষ্টোত্তর সহস্ৰনাম হইতে পারে। সাধারণকে ৪ তাহার জন্য দোষ দেওয়া বিশ্বনাথ পুনরায় বাড়ী ফিরিল বেল তিনটার সময় । অভ্যস্ত হাসিমুথেই সে বলিল–গয়লার টাকাটা দিয়ে এলাম ম।. আর এই চারটে টাকা রাখ। আবার দরকার হ'লে ব'লে। বাণী যাহাকে বলে পাব মেয়ে, সে ভাড়াতাড়ি কোথ হইতে একটা পখি৯লইয়া আসিয়া বাবাকে বাতাস করিতে বসিল । বিশ্বনাথ শ্বির্তমুখে বলিল, আচ্ছা! বিশ্বনাথের মা বাণীর হাত হইতে পাখাটা টানিয়া #