পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مایاها بیا প্রবাসী SNご88 আদায় করিতে বেশ পটু ৷ বলিলাম—দেড় বছর তোমার চুলের টিকি ত দেখা যায় নি। দিব্যি ষ্টেটুকে ঠকিয়ে ফসল ঘরে তুলুছ—কাছারির ভাগ দেওয়ার যে কথা ছিল, তা বোধ হয় তোমার মনে নেই ? রাজু এবার বিস্ময়পূর্ণ বড় বড় চোখ তুলিয়া আমার দিকে চাহিয়া বলিল—ফসল হুজুর ? কিন্তু সে ত ভাগ দেবার কথা আমার মনেই ওঠে নি—সে চীনা ঘাসের দানী— কথাটা বিশ্বাস হইল না। বলিলাম--চীনার দান৷ থাচ্ছ এই ছ-মাস ? অন্য ফসল নেই ? কেন মকাই কর নি ? —না হুজুর, বডড গজাড় জঙ্গল । একা মানুষ, ফরসা ক’রে উঠতে পারি নি। পনর কাঠা জমি অতিকষ্টে তৈরি করেছি। আসুন না হুজুর, একবার দয়া ক’রে, পায়ের ধুলো দিয়ে যান। রাজুর পেছনে পেছনে গেলাম। এত ঘন জঙ্গল মাঝে মাঝে ষে ঘোড়ার ঢুকিতে কষ্ট হইতেছিল। খানিক দূর গিয়া জঙ্গলের মধ্যে গোলাকার পরিষ্কার জায়গা প্রায় বিঘাখানেক, মাঝখানে জংলী ঘাসেরই তৈরি ছোট নীচু দু-খানা খুপরি । একখানাতে রাজু থাকে, আর একখানায় তার ক্ষেতের ফসল জমা আছে । থলে কি বস্তা নাই, মাটির নীচু মেঝেতে রাণীকৃত চীনা ঘাসের দানা স্তুপীকৃত করা। বলিলাম-রাজু, তুমি এত আল্‌সে কুঁড়ে লোক তা ত জানতুম না, দেড় বছরের মধ্যে দু-বিঘের জঙ্গল কাটতে পারলে না ? রাজু ভয়ে ভয়ে বলিল—সময় হুজুর বড় কম যে ! —কেন, কি কর সারাদিন ? রাজু লাজুক মুখে চুপ করিয়া রহিল। রাজুর বাসস্থান খুপরির মধ্যে জিনিষপত্রের বাহুল্য আদেী নাই। একটা লোটা ছাড়া অন্ত তৈজস চোখে পড়িল না। লোটাটা বড়গোছের, তাতেই ভাত রান্না হয়। ভাত নয়, চীন ঘাসের ধীজ । কাচা শালপাতায় ঢালিয়া সিদ্ধ চীনার বীজ খাইলে তৈজসপত্রের কি দরকার ? জলের জন্য নিকটেই কুণ্ডী অর্থাৎ ক্ষুদ্র জলাশয় আছে। আর কি छादे ? i 劍 কিন্তু খুপরির একধারে সি দুরমাখানে ছোট কাল পাথরের রাধাকৃষ্ণমূৰ্ত্তি দেখিয়া বুঝিলাম রাজু ভক্তমানুষ। ক্ষুদ্র পাথরের বেদী বনের ফুলে সাজাইয়া রাথিয়াছে, বেদীর এক পাশে দু-এক খানা পুথি ও বই। অর্থাৎ তাহার সময় নাই মানে সে সারাদিন পূজা-আচ্চা লইয়াই বোধ হয় ব্যস্ত থাকে । চাষ করে কখন ? এই রাজুকে প্রথম বুঝিলাম । রাজু পাড়ে হিন্দী লেখাপড়া ভাল জানে, সংস্কৃতও সামান্য জানে । তাও সে সৰ্ব্বদ পড়ে ন}, মাঝে মাঝে অবসর সময়ে গাছতলায় কি একখানা হিন্দী বই খুলিয়া একটু বসে—অধিকাংশ সময় দূরের আকাশ পাহাড়ের দিকে চাহিয়া চুপচাপ বসিয়া থাকে। এক দিন দেখি একটা ছোট খাতায় খাকের কলমে বসিয়া বসিয়া কি লিখিতেছে । ব্যাপার কি ? রাজু পাড়ে কবিতাও লেখে না কি ? কিন্তু সে এতই লাজুক, নীরব, চাপা মানুষটি, তাহার নিকট হইতে কোনো কথা বাহির করিয়া লওয়া বড় কঠিন । নিজের সম্বন্ধে সে কিছুই বলিতে চায় না। এক দিন জিজ্ঞাসা করিলাম—পাড়েজী, তোমার বাড়ীতে কে আছে ? —সবাই আছে হুজুর, আমার তিন ছেলে, দুই লেড়কী, বিধবা বহিন । —তাদের চলে কিসে ? রাজু আকাশের দিকে হাত তুলিয়া বলিল-ভগবান চালাচ্ছেন। তাদের দু-মুঠে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব ব’লেই ত হুজুরের আশ্রয়ে এসে জমি নিয়েছি। জমিট তৈরি ক’রে ফেলতে পারলে— –কিন্তু দু-বিঘে জমির ফসলে অতবড় একটা সংসার চলবে? আর তাই বা তুমি উঠে পড়ে চেষ্টা করছ কই ? রাজু কথার জবাব প্রথমটা দিল না। তার পর বলিলজীবনের সময়টাই বড় কম হুজুর। জঙ্গল কাটুতে গিয়ে কত কথা মনে পড়ে, বসে বসে ভাবি । এই যে বনজঙ্গল দেখছেন, বড় ভাল জায়গা। ফুলের দল কত কাল থেকে ফুটছে আর পার্থী ডাকছে, বাতাসের সঙ্গে মিলে দেবতারা পৃথিবীর মাটিতে পা দেন এখানে ।