পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీ$b* প্রবাসী SN988 উঠিলে দাম দিবে এই নাকি কড়ার হইয়াছে। কি ভয়ানক দারিদ্র্যের মূৰ্ত্তি কুটারে কুটারে! সবই খোলার কিংবা খড়ের বাড়ী, ছোট ছোট্ট ঘর, জানালা নাই, আলো বাতাস ঢোকে না কোনো ঘরে। প্রায় সব ঘরেই দু-একটি রোগী, ঘরের মেঝেতে ময়লা বিছানায় গুইয়া। ডাক্তার নাই, ওষুধ নাই, পথ্য নাই। অবশ্য রাজু সাধ্যমত চেষ্টা করিতেছে, ন-ডাকিলেও সব রোগীর কাছে গিয়া তাহার জড়ি-লুটির ওষুধ খাওয়াইয়াছে, একটা ছোট ছেলের রোগশয্যার পাশে বসিয়া কাল নাকি সারা রাত সেবাও করিয়াছে। কিন্তু মড়কের তাহাতে কিছুমাত্র উপশম দেখা যাইতেছে না, বরং বাড়িয়াই চলিয়াছে। রাজু আমায় ডাকিয়া একটা বাড়ীতে লইয়া গেল । একখানা মাত্র খড়ের ঘর, মেঝেতে রোগী তালপাতার চেটায় গুইয়া, বয়েস পঞ্চাশের কম নয় । সতের-আঠারো বছরের একটি মেয়ে দোরের গোড়ায় বসিয়া হাপুস নয়নে কাদিতেছে। রাজু তাহাকে ভরসা দিয়া বলিল— কাদিস নে বেটী, হুজুর এসেছেন, আর ভয় নেই, রোগ সেরে যাবে । বড়ই লজ্জিত হইলাম নিজের অক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়া । জিজ্ঞাসা করিলাম—মেয়েটি বুঝি রোগীর মেয়ে ? রাজু বলিল—না হুজুর, ওর বে। কেউ নেই সংসারে মেয়েটার, বিধবা মা ছিল, বিয়ে দিয়ে মারা গিয়েছে। একে বাচান হুজুর, নইলে মেয়েটা পথে বসবে। রাজুর কথার উত্তরে কি বলিতে যাইতেছি, এমন সময় হঠাৎ চোখ পড়িল রোগীর শিয়রের দিকে দেওয়ালে মেঝে থেকে হাত-তিনেক উচুতে একটা কাঠের তাকের প্রতি । দেখি তাকের উপর একটা আঢাকা পাথরের খোরায় দুটি পাস্ত ভাত ! ভাতের উপর দু-দশটা মাছি বসিয়া আছে ! কি সৰ্ব্বনাশ! ভীষণ এশিয়াটিক কলেরার রোগী ঘরে, আর রোগীর নিকট হইতে তিন হাতের মধ্যে ঢাকাবিহীন খোরায় ভাত । একটা ছবি বড় স্পষ্ট হইয়া চোখের সামনে ফুটয়া উঠিল—সারাদিন রোগীর সেবা করার পরে দরিদ্র ক্ষুধাওঁ বালিকা পাথরের খোরাটি পাড়িয়া পান্ত ভাত দুটি মুন লঙ্কা দিয়া আগ্রহের সহিত খাইতে বসিয়াছে। বিষাক্ত অন্ন, যার প্রতি গ্রাসে নিষ্ঠুর মৃত্যুর বীজ ! বালিকার করুণ সরল, অশ্রুভরা চোখ দুটির দিকে চাহিয়া শিহরিয়া উঠিলাম। রাজুকে বলিলাম—এ-ভাত ফেলে দিতে বল ওকে । এ-ঘরে খাবার রাখে ? মেয়েটি ভাত ফেলিয়া দিবার প্রস্তাবে বিস্থিত হইয়া আমাদের মুখের দিকে চাহিল। তাত ফেলিয়া দিবে কেন ? তবে সে খাইবে কি ? ওঝাজীদের বাড়ী থেকে কাল রাতে ঐ ভাত দুটি তাহাকে থাইতে দিয়া গিয়াছিল। আমার মনে পড়িল ভাত এ-দেশে মুখাদ্য বলিয়া গণ্য, আমাদের দেশে যেমন লুচি কি পোলাও । গরিব লোকেরা ভাত কালেভদ্রে থাইতে পায়। বুঝিলাম কত সাধের তাত দুটি, কিন্তু একটু কড়া স্বরেই বলিলাম—উঠে এখুনি ভাত ফেলে দাও আগে । মেয়েটি ভয়ে ভয়ে উঠিয়া খোরার ভাত ফেলিয়া দিল । г. তাহার স্বামীকে কিছুতেই বাচান গেল না। সন্ধ্যার পরেই বৃদ্ধ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিল। মেয়েটির কি কায়া! রাজুও সেই সঙ্গে কাদিয়া আকুল। " আর একটি বাড়ীতে রাজু আমায় লইয়া গেল। সেট রাজুর এক দূরসম্পৰ্কীয় শালার বাড়ী। এখানে প্রথম আসিয়া এই বাড়ীতেই রাজু উঠিয়াছিল। খাওয়া-দাওয়া এখানেই করিত। এখানে মা ও ছেলের একসঙ্গে কলেরা, পাশাপাশি ঘরে দুই রোগী থাকে, এ উহাকে দেখিবার জন্য ব্যাকুল, ও উহাকে দেখিবার জন্য ব্যাকুল । সাত আট বছরের ছোট ছেলে । ছেলে প্রথমে মারা গেল । মাকে জানিতে দেওয়া হইল না। আমার হোমিওপ্যাথি ঔষধে মায়ের অবস্থা ভাল হইয়া দাড়াইতে লাগিল ক্রমশঃ। মা কেবলই ছেলের খবর নেয়, ওঘরে ছেলের সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না কেন ? কেমন আছে সে ? আমরা বলি—তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে । ঘুমুচ্ছে । * , চুপি চুপি ছেলের মৃতদেহ ঘর হইতে বাহির করা হইল ।